০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

প্রযুক্তির ছোবলে যৌবন

-

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দুনিয়া ভেসে বেড়াচ্ছে অনির্দিষ্ট ঠিকানায়। সেই ঢেউ তীব্রভাবে আছড়ে পড়ছে বাংলাদেশেও। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের অনেকের কাছেই এখন রয়েছে এন্ড্রয়েড সেলুলার ফোন। বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়পড়–য়া শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে পাঠ্যবইয়ের পরিবর্তে দেখা যায় মেগা গ্লাসসমৃদ্ধ বড় বড় সেলুলার ফোন, যার সংস্পর্শে পুরো পৃথিবীর চিত্র পাওয়া যায় তাৎক্ষণিকভাবে। একজন চিকিৎসক হিসেবে বলতে চাই, চেম্বারে বেশির ভাগ রোগী কানের ব্যথা নিয়ে আসেন। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় কোনো কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না। পরে জানতে পারি, সংশ্লিষ্ট রোগী বেশির ভাগ সময় ব্যবসায়িক কাজে অথবা প্রবাসীদের সাথে কথা বলা অথবা মিউজিক শোনায় ব্যথা হয়ে থাকে।
শব্দতরঙ্গ বহিঃকর্ণের ভেতর প্রবেশ করে tympanic membrane (যে পর্দা বহিঃকর্ণকে মধ্যকর্ণ থেকে পৃথক করে) হয়ে মধ্যকর্ণে অবস্থিত তিনটি ছোট অস্থির (maelleus, incus, stapes) মাধ্যমে অন্তঃকর্ণে প্রবেশ করে। অন্তঃকর্ণে রয়েছে Perilymphatic Ges endolynphatic fluid নামে এক ধরনের তরল পদার্থ। শব্দতরঙ্গ এ তরল পদার্থের সংস্পর্শে এলে তা প্রকম্পিত হয়। ওই তরল পদার্থের মাধ্যমে অসংখ্য ¯œায়ুরজ্জুর সাহায্যে শব্দতরঙ্গ কেন্দ্রীয় ¯œায়ুতন্ত্রে সঙ্কেত পাঠায়। তখনই সেই শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। এটি হয়ে থাকে কয়েক মিলি সেকেন্ডে। যারা অতিরিক্ত ফোনে কথা বলেন, তাদের মোবাইলের electromagnetic wave সরাসরি ¯œায়ুতন্ত্রে শব্দতরঙ্গ পাঠায়। অতিকথনে কেন্দ্রীয় ¯œায়ুতন্ত্রে অবস্থিত pain center বারবার ত্বরান্বিত হয়। ফলে সংশ্লিষ্ট মোবাইল ব্যবহারকারীর কানে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। যারা রাতভর কানে হেডফোনে গান শোনেন তাদের অবস্থা এর চেয়ে মারাত্মক হতে পারে। যেহেতু এন্ড্রয়েড ফোনে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অপশন, যেগুলো ব্যবহার করে বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ সম্পাদন করা বিচিত্র কিছু নয়। ফলে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়পড়–য়া শিক্ষার্থীরা গভীর রাতে ঘুমায় আর দেরিতে ওঠে। এতে মেধা বিকাশ যেমন বাধাগ্রস্ত হয়; তেমনি অসৎ পথে যাওয়ার প্রবণতাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। ধর্মীয় মূল্যবোধে দেখা দেয় অবক্ষয়। একসময় দেখা যায়, অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারকারীরা sensorineural deafnes-এ আক্রান্ত হন। এ ধরনের বধিরতার চিকিৎসা হচ্ছে : কৃত্রিম শ্রবণযন্ত্র ব্যবহার অথবা cochlear implant প্রতিস্থাপন। শিক্ষার্থীদের অসৎ পথে যাওয়ার মূল কারণ প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার, এ প্রযুক্তি যেমন বিশ্বকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে, তেমনি অশান্তির দাবানলে পুড়ে ছারখার হচ্ছে সারা দেশ, সমগ্র পৃথিবী। এর জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দায়ী অভিভাবকমণ্ডলী। এ অভিভাবকদের উদ্দেশ করে আল্লাহ বলেছেন, ‘হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা নিজেদের ও নিজেদের পরিবার-পরিজনদের (জাহান্নামের সেই কঠিন) আগুন থেকে বাঁচাও, তার জ্বালানি হবে মানুষ আর পাথর, (সে) জাহান্নামের (প্রহরা যাদের) ওপর (অর্পিত), সেসব ফেরেশতা হচ্ছে নির্মম ও কঠোর, তারা আল্লাহ তায়ালার কোনো আদেশই অমান্য করবে না। তারা তাই করবে যা তাদের করার জন্য আদেশ করা হবে।’ (সূরা আত তাহরীম, আয়াত-৬)।
চার দিকে মাদকের যথেচ্ছ ব্যবহার, ইয়াবা সেবন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি-লুটতরাজ, ইভটিজিং যেন মহামারী আকারে ছড়িয়েছে। অশ্লীলতা, বেহায়াপনা আর ব্যভিচারের কবলে দেশ। ব্যভিচারের কারণে ঐশী নামের এক কলেজছাত্রী খুন করেছে তার বাবা-মাকে। চার দিকে আজ নৈতিক স্খলন আর ধর্মীয় মূল্যবোধের চরম অবনতি। পিছিয়ে নেই মাদরাসা, স্কুল-কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। আমরা সবাই যেন গড্ডলিকাপ্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়েছি। অর্থের জন্য ছুটছি পাগলের মতো। কেউ তরুণসমাজের প্রতি নজর দিচ্ছি না। অথচ তারাই জাতির আগামী দিনের কর্ণধার। সেই তরুণসমাজকে প্রযুক্তির কুপ্রভাব থেকে মুক্ত করতে আমরা রয়েছি বেখবর। হ
লেখক : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ইএনটি
Email:[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement
আগা খানের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক গফরগাঁওয়ে মদপানে ৩ জনের মৃত্যু শেখ হাসিনার কার্যক্রম নিয়ে দিল্লিকে প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশী জাহাজ ও ৯ বাংলাদেশী ক্রু আটক গণমাধ্যম সংস্কারের বিষয়ে যা বললেন কামাল আহমেদ গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে মায়ের মৃত্যু, ৩ মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি তিউনিসিয়ার অর্থমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের বিচারের দাবিতে তাহিরপুরে স্মারকলিপি প্রদান সুনামগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর ৫ ম্যুরাল ভাঙচুর নওগাঁ ভটভটি উল্টে নিহত ১ পাকুন্দিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙে দিলো ছাত্ররা-জনতা

সকল