০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

জেগে উঠুক বিবেক

-

সারা দেশে দুর্নীতি যেভাবে পত্রপল্লবে বিকশিত হয়েছে; তাতে অনিয়মই এখন নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবস্থা এমন হয়েছে; কেউ কেউ বিশ^াসই করতে চান না সমাজে সৎ মানুষ আছে। তাদের মতে, যাদের আমরা সৎ মানুষ বলিÑ তারা সুযোগের অভাবে সৎ। সবাই হয়তো এ যুক্তি মানবেন না। কিন্তু এ ধরনের মতামত সমাজে দুর্নীতির ভয়াবহতাই তুলে ধরে। দুর্নীতি যে কতভাবে হতে পারে, সেই বিশ্লেষণ না হলে এর ব্যাপকতা বোঝা কঠিন।
দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধে রয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি ও ব্যাংক খাতে লুটপাট, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পাচারের মতো ভয়ঙ্কর ঘটনার কোনো সুরাহা করতে পারেনি দুদক কিংবা সরকারি কর্তৃপক্ষ। শেয়ারবাজার নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও সে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি। তখন সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলেছিলেন, এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা যাবে না। কারণ, রাঘব বোয়ালরা জড়িত। রাষ্ট্রযন্ত্র যেন এই দুর্বৃত্তদের সাথে পেরে উঠছে না। এরাই সরকারের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলছে। সরকারের ব্যর্থতা সামনে চলে আসছে, কিন্তু প্রকৃত দুর্বৃত্তরা থাকছে ধরাছোঁয়ায় বাইরে।
শেয়ারবাজার, ব্যাংক লুট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ পাচারের ঘটনার কাছে ক্যাসিনো কিংবা জুয়া খেলার দুর্নীতি বলতে গেলে নস্যি। হাজার কোটি টাকা বাইরে পাচারের ঘটনা দৃশ্যমান হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে আমরা দেখিনি। যে দেশে ব্যাংক দুর্নীতি করলে কিছুই হয় না, সে দেশে ক্যাসিনো, কাঁথা-বালিশ-চার্জারসহ কত কী-ই তো ঘটতে পারে। একের পর এক তা ঘটেও চলেছে। ডিআইজি মিজানুরের মতো মানুষ তাই দুদকের কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়ার কথা মিডিয়া ও জনসমক্ষে গর্বের সাথে বলে ফেলেন। ঘুষ দেয়াও যে অপরাধ, সেটা তিনি সারাজীবনের প্রশিক্ষণ থেকে শিক্ষা নিতে পারেননি। হাইকোর্ট তাই ক্ষোভের সাথে বলেছেন, ডিআইজি মিজান পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ইমেজ ধ্বংস করে দিয়েছেন।
দুদকের বিষয়ে সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছেন, দুদক চেয়ারম্যানের পদত্যাগ করা উচিত। তিনি তার বিরুদ্ধে শপথ ভঙের অভিযোগ এনেছেন। বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু ও ক্যাসিনো সম্রাটকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন এই আইনজীবী।
একজন বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি কি তার পদমর্যাদাকে বুঝবেন না? তিনি হাজার হাজার মেধাবী ছাত্রের অভিভাবক। রাষ্ট্রের সম্মানীয় নাগরিক। কেন তারা সৎ জীবন যাপন করতে পারবেন না? একের পর এক ভিসিরা যখন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে অপমানিত ও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন, তখন জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালেয় ভিসি ঘোষণা দেন, যুবলীগের দায়িত্ব পেলে ভিসি পদ ছেড়ে দেবেন। জাতীয় এই মহান শিক্ষকদের আর কী-ই বা বলার থাকে। এই অধঃপতন কোন সূচককে নির্দেশ করে তা সবাই অনুমান করতে পারেন।
চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। ঘটনা ঘটার পর সবার দৌড়ঝাঁপ আর বাগাড়ম্বর শুরু হয়। মিডিয়ার সামনে যারা হামেশা কথা বলেন; তারা ভাবেন তাদের বক্তব্য মানুষ অবোধ শিশুর মতো গিলছেন। ঘটনা যাতে না ঘটে তার আগাম ব্যবস্থা না নিয়ে বলেনÑ আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কোনো দায়ও শিকার করেন না। এসব যেন ঘটতেই পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সত্যিই কি আইনের নিজস্ব গতি আছে? নুসরাতরা কেন আইনের কাছে ধরনা দিয়ে নিরাপত্তা পায় না। আইনের এই নিজস্ব গতি তুফান, বদিউল, মানিকদের কাছে পৌঁছতে পারে না। আইনের নিজস্ব গতি বেপরোয়া গতির চালকদের ধরতে পারে না। অভিযোগ না পেলে আইন কোনো ভিক্টিমের পক্ষে দাঁড়ায় না, আবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে গায়েবি মামলা ঠুকে দিতে পারে। যত মামলা, তত গ্রেফতার, তত গ্রেফতার-বাণিজ্য।
লজ্জায় আমাদের মাথা হেট হয়, যখন একজন রিকশাওয়ালা রাজু ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ছাত্রলীগের কি এতই টাকার দরকার যে আমার মতো রিকশাওয়ালার টাকা ছিনিয়ে নিতে হবে। প্রতিদিন ট্রাফিক পুলিশের কিছু সদস্য বাস কিংবা ট্রাক চালকের কাছে থেকে হাত উঁচিয়ে টাকা আদায় করতে দেখা যায়। যে চালক বা হেলপার আইনের লোকদের প্রতিদিন চাঁদা দেন, তিনি কেন আইন মান্য করবেন? তিনি কেন বৈধ লাইসেন্সের তোয়াক্কা করবেন? একজন হেলপার ড্রাইভার এখন কাউকে গোনেন না। বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে কেউ কথা বললে তৎক্ষণাৎ বলে দেন, আপনি নেমে যান, অন্য গাড়িতে যান; এ গাড়িতে যেতে হলে এ ভাড়াই দিতে হবে। আপনাকে ডেকে আনিনি ইত্যাদি।
বড়রা দুর্নীতি করলে ছোটদের তা থেকে বিরত থাকতে বলা যায় না। সে পথ ধরেই বাড়িগাড়ি-টাকার পাহাড় গড়ে সম্রাট, খালেদ, শামীমের মতো মানুষেরা। তাদের কাছে কারা কারা নিয়মিত মাসোয়ারা নিয়েছেন, সে কথাও একদিন প্রকাশিত হবে। একটি নিবন্ধে দেশের দুর্নীতির চালচিত্রের ছিটেফোঁটাও তুলে ধরা সম্ভব নয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একজন প্রার্থীকে তার আয় ব্যয়ের হিসাব দিতে হয়। কিন্তু পাঁচ বছর কিংবা ১০ বছরে কোন কোন এমপি বা মন্ত্রীর সম্পদ কতগুণ বেড়ে যায় তা নিয়েও মাথা ব্যথা নেই দুদদের। কোনো স্বাভাবিক পন্থায় কি সম্পদের পরিমাণ শতগুণ বাড়তে পারে? দুদক যদি দেশের তাদের অবৈধ সম্পদ অর্জনের পথ বন্ধ করতে পারত; তাহলে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হতো। রক্ষকেরা অবতীর্ণ হয়েছেন ভক্ষকের ভূমিকায়। তারপরও দুর্নীতির অক্টোপাস থেকে বাঁচতে চাই। জেগে উঠুক বোধ আর বিবেক। হ
লেখক : সাংবাদিক


আরো সংবাদ



premium cement
স্ত্রী-সন্তানসহ সাবেক মন্ত্রী উ শৈ সিংয়ের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা কুষ্টিয়ার সাবেক এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের অফিস ভাঙচুর ট্রাম্পের গাজা দখলের ঘোষণার তীব্র নিন্দা-প্রতিবাদ জামায়াতের আনিসুল হকের আস্থাভাজন তৌফিকার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা পাকিস্তানের যৌথ নৌ মহড়ায় অংশ নিচ্ছে ইরান গাজায় ইসরাইলি যুদ্ধাপরাধীর তদন্ত শুরু করেছে সুইস কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনিদের নিয়ে ট্রাম্পের দেয়া প্রস্তাবে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের ছাত্র-জনতার রোষানলের দায় শেখ হাসিনাকেই বহন করতে হবে : খেলাফত মজলিস কুলাউড়ায় উপজাতীয়দের হাতে বাঙালি যুবক খুন : ৭ খাসিয়ার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙচুর ছিনতাই প্রতিরোধে ট্রাফিক সার্জেন্টদের দেয়া হচ্ছে ক্ষুদ্র অস্ত্র : ডিএমপি কমিশনার

সকল