০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

বাজার পরিস্থিতি ও পেঁয়াজের দর

-

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যখন সহনীয় এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতায় থাকে, তখন সবার জীবনে স্বস্তির সুবাতাস বয়। আর নিত্যপণ্যের দর সাধারণ মানুষের আর্থিক সঙ্গতির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হলে দরিদ্র এবং অতিদরিদ্র পরিবারে দেখা দেয় হাহাকার। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নেমে আসে জনদুর্ভোগ। সম্প্রতি পেঁয়াজের মূল্য আকাশছোঁয়া হওয়ায় তেমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে খুচরা বাজারে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। পণ্যটির দাম নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড চলছে।
দৈনন্দিন জীবনে আমাদের প্রয়োজন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা। এই মৌলিক মানবিক চাহিদাগুলোর মধ্যে অন্নের প্রয়োজন সবার আগে। কিন্তু চাল, ডাল, তেল, লবণ, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, মাছ, তরকারি, চিনি, দুধ ইত্যাদি নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি জনজীবনের গতি অচল ও আড়ষ্ট করে দেয়। দেশে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়া সবার জন্য অন্যতম সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। ন্যায়সঙ্গত মূল্য বলতে বর্তমানে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র পাওয়া যাচ্ছে না। অতীতের সেই কথাগুলো এখন আমাদের কাছে রূপকথা মনে হয়। যেমন- শায়েস্তা খাঁর আমলে টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত। একসময় এক পয়সায় পাওয়া যেত এক সের লবণ এবং এক সের দুধ, দু’আনায় এক সের তেল, একটি লুঙ্গি এক টাকায় এবং একটি সুতি শাড়ি দুই টাকায়Ñ এ কথা খুব বেশি দিনের নয়। ব্রিটিশ শাসনামলেও আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে একটি অবস্থায় ছিল। বর্তমানে নিত্যদ্রব্যের লাগামহীন দাম বেড়ে চলায় সাধারণকে হতাশার রাজ্যে নিয়ে যাচ্ছে। নিত্যপণ্যের পাশাপাশি বাড়ছে বাসাভাড়া, পরিবহন-ভাড়া, চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতের ব্যয়। পানি বিল, গ্যাস বিল, জ্বালানি তেলের দামও বেড়েছে। ফলে অতিরিক্ত খরচ জনগণের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। নি¤œবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীই মূল্যের এমন বেড়ে চলায় অসহায় ও নিরুপায় হয়ে পড়েছেন। অথচ তারাই মূল্যবোধ নিয়ে সমাজ ধরে রাখেন; তারাই গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের মূল শক্তি হিসেবে কাজ করেন। জনগণ আশা করছে; তাদের এরূপ অবস্থার উন্নতি হবে, দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসের কমবে। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে।
বাজার অস্থিতিশীলতার মানে দেশের বেশির ভাগ মানুষ চাপে পড়া। তাই সরকারকে বাজারে নিয়ন্ত্রণই শুধু নয়, কর্মসংস্থানও বাড়াতে হবে। তখন উৎপাদন বাড়বে, বাড়বে ক্রয়ক্ষমতা। আয় বাড়লে মূল্যস্ফীতির আঘাতও হয় সহনীয়। কালোবাজারি, মুনাফাখোর, মজুদদার প্রভৃতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও অপরিহার্য পণ্যের দাম বাড়ছে প্রতিনিয়ত। ক্রমে এসব পণ্য সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বুভুক্ষু মানুষকে অর্ধাহার ও অনাহারে দিন কাটাতে বাধ্য করছে। বাস্তব পরিস্থিতি তাদের প্রতিকূলে। সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করে ঝড়োগতিতে বাড়ছে ব্যয়ের খাত।
বাজারের ওপর সরকার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে কী ব্যর্থ হচ্ছেÑ বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এমন প্রশ্ন সবার। অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে বাজারে যাচ্ছেতাই করতে না পারে, সে জন্য টিসিবি শক্তিশালী করার তাগিদ দিয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে। কিন্তু এ ব্যাপারে আশানুরূপ উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অর্থনীতির সূত্রমতে, উৎপাদন ব্যয় ছাড়াও জিনিসপত্রের দাম বাজারের চাহিদা-জোগানের ভারসাম্যের ওপর নির্ভর করে। দ্রব্যমূল্য বেড়ে চলার মূলে বহুবিধ কারণ রয়েছে স্বার্থপরতা, অসাধু সমাজবিরোধী তৎপরতা, অর্থলোভী মানুষের অমানবিক আচরণ। তা ছাড়া প্রাকৃতিক কারণে, অর্থাৎ অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টির কারণে জমিতে আশানুরূপ ফসল উৎপাদিত না হলে শস্যের দাম বেড়ে যায়। কৃষি ও শিল্প কারখানায় উৎপাদন কমে গেলে এবং বিদেশী মুদ্রার অভাবে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি করা সম্ভব না হলে চোরাকারবারি, মজুদদারি ও দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবসায়ীরা এ সুযোগ গ্রহণ করেন। তারা জিনিসের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করেন। ফলে জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। তাই পণ্যমূল্য নির্ধারণে যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন ও তা প্রয়োগে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ আইনের আওতায় পণ্যের দাম নির্ধারণ, চোরাকারবারি প্রতিরোধ, ফড়িয়া ও অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য কমানো, দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ করে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যেতে পারে। সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয় অথবা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এ পদক্ষেপ নিতে পারে। নিয়মবহির্ভূতভাবে কেউ কেনাবেচা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন আন্তরিক হলে জনগণের সার্বিক সহযোগিতায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এতে দেশের মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবেন। হ
লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট


আরো সংবাদ



premium cement
সুনামগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর ৫ ম্যুরাল ভাঙচুর নওগাঁ ভটভটি উল্টে নিহত ১ পাকুন্দিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙে দিলো ছাত্ররা-জনতা রুবাইয়াত ও আলমগীরকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ শেখ হাসিনার বক্তব্যে আবারো উত্তাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভেঙে ফেলা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বিশৃঙ্খলায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ আছে কি না জানার চেষ্টা করব : মেজর হাফিজ নারায়ণগঞ্জে ডিসি-এসপি অফিসের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর মহাদেবপুরে হত্যা মামলায় ৫ জনের যাবজ্জীবন ভালুকায় খাল থেকে নারীর ভাসমান লাশ উদ্ধার আশুলিয়ায় মেডলার অ্যাপারেলসের অর্ধশত শ্রমিক অসুস্থ ওবায়দুল কাদেরের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর

সকল