০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

পেশা নিয়ে কটাক্ষ কেন?

-

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ছোট পোস্টে দৃষ্টি আটকে যায়। এতে একজন ব্যক্তির পেশা নিয়ে কটাক্ষ করা হয়েছে। সবার জানা, ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোদি এক সময় চা বিক্রেতা ছিলেন। অন্য দিকে পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বিখ্যাত ক্রিকেট খেলোয়াড় ছিলেন। তিনি খেলায় ছিলেন পারদর্শী। তার অধিনায়কত্বে পাকিস্তান বিশ্বকাপ ক্রিকেটে জয়ী হয়েছিল। এ ছাড়া পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শৈশবে ভালো ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেছেন। ফেসবুক বন্ধুদের পোস্টটিতে কাপের প্রসঙ্গ ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তারা বোঝাতে চেয়েছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী অতি সাধারণ একজন চা বিক্রেতা ছিলেন আর প্রতিপক্ষ দেশের প্রধানমন্ত্রী শৈশবে উচ্চপর্যায়ের কেউ ছিলেন। আবেগের এ কথাগুলো এসেছে সম্প্রতি জাতিসঙ্ঘের ইমরান খানের একটি নন্দিত বক্তৃতার পর। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর চমৎকার বক্তব্যটি বিপুল মানুষ শুনেছেন। অত্যন্ত প্রশংনীয় বক্তব্য দিয়েছেন। খোদ ইংরেজি ভাষার দেশ ব্রিটেন ও আমেরিকার প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্টও এত চমৎকার বক্তৃতা হয়তো দিতে পারেননি।
তাই বলে মানুষের পেশা নিয়ে কেন কটাক্ষ করা হবে? চা বিক্রেতা যদি নেতৃত্বের গুণ অর্জন করে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতেন পারেন; তাতে সমস্যা কোথায়? আমাদের গাইডলাইন পবিত্র কুরআন। এই মহাগ্রন্থের কোথাও পেশা নিয়ে কটাক্ষ করার অনুমোদন নেই। এটি ঠিক, কোনো কোনো ধর্মের লোকদের মধ্যে পেশা নিয়ে কুসংস্কৃতি চালু আছে বটে। তারা ছোটখাটো পেশার লোকজনকে মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে নারাজ। কিন্তু ইসলামের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সা:-সহ যত নবী-রাসূল আ: দুনিয়ায় এসেছেন, তাদের পেশা কী ছিল? তাদের বেশির ভাগ পশু পালন করেছেন। অর্থাৎ তাঁরা ‘রাখাল’ ছিলেন। জীবিকা অর্জনের জন্য শারীরিক পরিশ্রম করেছেন। এ ছাড়াও দুনিয়ার অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি জীবিকার জন্য খুব সাধারণ কাজকর্ম করেছেন। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জন মেজর এক সময় বাসের কন্ডাক্টর ছিলেন। অথচ পরে তিনি যুক্তরাজ্যের সফল অর্থমন্ত্রী এবং পরে প্রধানমন্ত্রী হন। যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের বাবা সামান্য মুচি ছিলেন। লিংকন স্কুলও পাস করেননি। তিনি শুধু একজন প্রেসিডেন্টই ছিলেন না; রাষ্ট্রনায়ক হিসেবেও তার সুনাম রয়েছে। তার অনেক উক্তি আজো রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রদের পড়ানো হয়। তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট এরদোগান শৈশবে লেবুর শরবত বিক্রি করেছেন। তাকে বলা হয় ‘এ প্রজন্মের সুলতান সুলেমান’। তিনি একজন বিশ্বনেতা হিসেবেও পরিচিত। বন্ধুদের প্রতি অনুরোধ, কটাক্ষ করার বিষয়টি একটু ভেবে দেখবেন। আমাদের উচিত প্রত্যেক হালাল পেশাকে সম্মান জানানো। এটিই সৌজন্য ও মানবতার দাবি।
শ্রেণিবিভাজনের কথা আমাদের পাঠ্যপুস্তকগুলোতে এখনো পড়ানো হয়। এতে সমাজে বৈষম্য বাড়ছে বৈ কমছে না। বাংলাদেশে বৈষম্য চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। কেউ কোট-টাই পরে বুদ্ধি খাটিয়ে ঘণ্টায় লাখ টাকা কামাচ্ছেন। কেউ ১২ ঘণ্টা গতর খেটে ঘাম ঝরিয়ে মাত্র ৩০০-৫০০ টাকা আয় করছেন। যারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিস কক্ষে বসে লাখ লাখ টাকা বেতন পাচ্ছেন; তারা এ সামান্য আয়রোজগারকারীদের খুব নীচু মনে করা ভুল হবে। চার পাশে তাকালে দেখা যায়, যারা মাসে এক থেকে ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করেন, তাদের অনেকে নিজেদের খুব বড় ভাবেন।
ধরুন একজন ডাক্তারের সব মিলিয়ে প্রতি মাসে কোটি টাকার ওপরে আয় হয়। তিনি রাজকীয় জীবনযাপনের জন্য যা দরকার তা সবই করেছেন। লেটেস্ট মডেলের দামি গাড়ি, সুইমিংপুল ও বিশাল বাড়িসহ সব আছে তার। কিন্তু তার কাছে কোনো গরিব লোক চিকিৎসা নিতে পারবেন কি? ঢাকায় অনেক অফিসে দেখা যায়, বহু উপদেষ্টা রয়েছেন। তারা কোম্পানিগুলো থেকে লাখ লাখ টাকা সম্মানী পাচ্ছেন। অথচ ওই সব কোম্পানিতে হাজার হাজার শ্রমিক সামান্য বেতনে চাকরি করছেন। এমন বৈষম্যে ভরা একটি রাষ্ট্র জন-আকাক্সক্ষা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়ে থাকে। হ


আরো সংবাদ



premium cement