০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

ফেসবুকের তথ্য নির্ভরযোগ্য নয়

-

সাম্প্রতিক সময়ে ভুয়া তথ্যের অন্যতম উৎস হয়ে উঠেছে ফেসবুক। এতে যা ইচ্ছা তা-ই পোস্ট করা যায় বলে একে সুযোগ হিসেবে নিয়ে দুষ্টচক্র বাধাহীন ভুয়া সংবাদ পোস্ট করছে। কারা ফেসবুকে ভুয়া কথা ছড়ায়, বিভ্রান্তি ছড়ায়, আইডি হ্যাক করে মিথ্যা তথ্য দেয়, তা বের করা কঠিন কিছু নয়। তা ফেসবুক ব্যবহারকারীদের জানা থাকা দরকার। ফেসবুকে গুজব ছড়ানো সহজ বলে মাধ্যমটিকে দুর্বৃত্তরা সম্প্রতি এর ওপর ভর করেছে। সম্প্রতি গুজব রটনা করা হয়, পদ্মা সেতুতে মাথা লাগবে। যার জেরে সারা দেশে আতঙ্ক ছড়ায়, গণপিটুনিতে নিহত হন এক মাসহ বেশ কয়েকজন নিরীহ মানুষ। তাই ফেসবুকে পাওয়া কোনো তথ্যে অস্থির হয়ে, ঘটনার সত্যতা যাচাই না করে, কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা ভারী অন্যায়। ফেসবুকে ভুয়া তথ্য দিয়ে যেহেতু ধর্মীয় বিরোধ সৃষ্টি করার নজির রয়েছে, সে জন্য এ বিষয়ে সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আলোচনার ব্যবস্থা থাকলে ভালো হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফেসবুক ও ইন্টারনেটের অপব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষাদান জরুরি হয়ে পড়ছে। এর ব্যবহারকারীদের বোঝাতে হবে, যা ক্ষতিকর, যা অপরাধ, তা ছড়িয়ে দেয়া ও নিজের অ্যাকাউন্টে যুক্ত করাও অপরাধ। সোস্যাল মিডিয়ায় কোনো তথ্য দেখে যাচাই-বাছাই না করে যারা গর্জে উঠবে, সমাজে বিদ্বেষ ছড়াবে, তাণ্ডব সৃষ্টি করবে, তাদেরও আইনের আওতায় আনা দরকার।
আসলে সোস্যাল মিডিয়ার নিউজ নির্ভরযোগ্য নয়। বেশির ভাগ নিউজ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর খেয়াল-খুশি ছাড়া অন্য কিছু নয়। আবেগপ্রবণ ফেসবুকাররা লাইক বা কমেন্ট শেষে এসব মিথ্যা পোস্ট শেয়ার করে থাকেন। সত্যতা যাচাই না করে তারা যে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে ভেবে দেখতে হবে। কিছু মানুষ ফেসবুকের যে যথেচ্ছাচার ব্যবহার করছেন তাতে যন্ত্রণার বড় কারণ হয়ে উঠছে। এর ব্যাপ্তি বেড়ে যাওয়া এবং তথ্যপ্রযুক্তির সাথে আমাদের নিত্য বসবাস হওয়ায় ফেসবুকসহ সব সামাজিক মাধ্যম নিয়ে আইটি বিশেষজ্ঞদের আরো গভীরভাবে ভাবতে হবে। এ ভাবনায় সম্মিলিত ভূমিকা থাকা আবশ্যক। বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপকৌশলকে তাৎক্ষণিক মোকাবেলা করে, হ্যাকার শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে তৎপর হতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে শক্তিশালী সাইবার ক্রাইম বিভাগ খোলা হয়েছে। তাদের দেশ-বিদেশের উপযুক্ত ট্রেনিং দিয়ে যুগোপযোগী করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দেশের সব সামরিক ও বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থাকে সাইবার ক্রাইম তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্তের উপযোগী প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রশিক্ষিত করা অত্যাবশ্যক।
সামাজিক যোগাযোগ সহজলভ্য হওয়ায় মানুষ মুহূর্তে খবর পেয়ে যায়। এরই সাথে রয়েছে অতি বাড়াবাড়ির আবেগ ও অপপ্রচার। পুরো ঘটনা না জেনে উত্তেজিত প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। এর মাধ্যমে সৃষ্টি হচ্ছে সঙ্ঘাত। এর জন্য আমাদের অসচেতনতা অনেকাংশে দায়ী। লক্ষণীয়, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল এ অপপ্রচারের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। অনুমোদনহীন এসব সংবাদমাধ্যম যা ইচ্ছা তা প্রচার করছে। এতে সহজে বিভ্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। এটি রোধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কিছু স্বার্থান্বেষী সে যে ধর্মেরই হোক না কেন, স্বধর্মকে পুঁজি করে সামাজিক অস্থিরতা ও সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা বিনষ্টের লক্ষ্যে অপপ্রয়াস চালিয়ে থাকে। ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমগুলোতে কিছু বিকৃত, নিচু মানসিকতার মানুষ দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করে। অথচ দেশে ১৮ বছরের নিচের শিশু-কিশোররা ব্যাপকভাবে ফেসবুক ব্যবহার করে। কেন, কিভাবে তারা চালায় খোঁজ নিতে হবে তাদের অভিভাবকদের। মা-বাবার উচিত সন্তানদের ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক থাকা। ১৮ বছরের নিচের বয়সী কেউ যেন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আদৌ খোলা উচিত কি না তা নিয়ে ভাবা দরকার। এ ছাড়া ফেসবুকে ব্লাকমেইল করা হয় নারীদের; নোংরা ছবিজুড়ে দেয়া হয়। লজ্জায়, অপমানে অনেক নারী আত্মহত্যাও করেছেন। ফেসবুকে এসব অপকর্ম পুরোপুরি বন্ধ করা না গেলেও অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। সে রকম প্রযুক্তিও বিশ্বব্যাপী রয়েছে। সরকার যেভাবে পর্নো সাইট বন্ধ করেছে, ঠিক সেভাবে অপরাধীদের আইডি শনাক্ত করে তা বন্ধে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সাথে সমঝোতা করতে পারে সরকার। কারণ, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থেই সহায়তা করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
ফেসবুক গুজব আগামীতে দেশের ভয়ঙ্কর ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। শিশু, কিশোর ও তরুণদের ইন্টারনেটযুক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে অভিভাবক ও শিক্ষকদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে। স্কুল, কলেজ, মাদরাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাইকে সচেতন করতে হবে। সারা দেশে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের সাথে গণমাধ্যমকে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। ভুয়া তথ্য দিয়ে তাণ্ডব সৃষ্টির ঘটনায় জড়িতদের বিচার বিশেষ আদালতে সীমিত সময়ে শেষ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা দেশে কম ঘটবে। হ
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement
আত্মহত্যা ঠেকাতে পরিবারের ভূমিকা অগ্রণী বিপিএলের প্রাইজমানি বাড়ালো বিসিবি হঠাৎ ফাইনাল ম্যাচের সূচিতে বদল আনলো বিসিবি ধামরাইয়ে পিকআপ চাপায় স্কুলছাত্র নিহত আ’লীগের আমলে ‘বঞ্চিত’ অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বকেয়া টাকা পাচ্ছেন শিগগিরই যশোরে শেখ মুজিবের সবচেয়ে বড় ম্যুরাল অপসারণের কাজ অব্যাহত আ’লীগের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতার আগুন টাঙ্গাইলে ট্রাকচাপায় মাদরাসাশিক্ষক নিহত পাবনায় আন্দোলনে সরাসরি গুলি করা সাঈদ চেয়ারম্যানের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ছাত্র-জনতা অভিনেত্রী শাওন গ্রেফতার দেশী-বিদেশী মিডিয়া নিয়ে আয়নাঘর পরিদর্শনে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা

সকল