০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

উন্নয়ন ও দারিদ্র্য ভাবনা

-

একটি দেশের সম্পদের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে প্রত্যেক নাগরিককে সেবা দেয়া এবং প্রক্রিয়াটি সাবলীলভাবে সচল রাখাই মানসম্পন্ন উন্নয়ন। তাতে অবশ্যই ক্ষতির পরিমাণ কম। মান নিশ্চিতকরণে অসুবিধা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সমৃদ্ধ করতে হবে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ছিল দারিদ্র্য কমানো ও মানসম্মত জীবনযাপন নিশ্চত করার অন্যতম প্রয়াস, এর বাস্তবায়নের দায়িত্ব প্রথম থেকে অবশ্যই সরকারের। তবে নানা গবেষণা সংস্থাসহ বিশ্লেষকেরা তখন বলেছেন, ২০১৫ সালের যা যা অর্জন সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে ঘিরে হয়েছে, তা কতটুকু মান নিশ্চিত করছে; তা ঠিকভাবে বিবেচিত হয়নি। এরপর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (২০১৫-২০৩০), যেখানে দারিদ্র্যকে নানা বিষয়ের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে; যেগুলো ইতিবাচকভাবে রূপান্তরিত করার অঙ্গীকার নির্দিষ্টকরণ করা হয়েছে। সরকার ২০টি মন্ত্রণালয়ের সচিবদের নিয়ে এসডিজি বাস্তবায়ন এবং পরিবীক্ষণ কমিটি নিয়ে কমিটি গঠন করে, রয়েছে একজন কমিটি মুখ্য সমন্বয়ক। যার প্রথম ১৪টি লক্ষ্যমাত্রা কার্যকরভাবে দৃশ্যমান।
২০১৫ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত যত উন্নয়ন হয়েছে; তাতে টেকসই উন্নয়ন কতটুকু হয়েছে তা অনেক দিক থেকে প্রশ্নবিদ্ধ। এ পর্যায়ে একটু স্পষ্ট করা জরুরি। দারিদ্র্য বলতে শুধু আর্থ-সামাজিক দিক বোঝানো হয়নি বরং স্বাভাবিক জীবনযাপন ও সেবাগ্রহণে যেসব বিষয় এবং সিদ্ধান্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তাও বোঝানো হয়েছে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় যেসব বিষয় গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, সেগুলো হলো পুষ্টি এবং মানসম্মত খাদ্য, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন, উদ্ভাবন, টেকসই নগরায়ণ, সবার জন্য শান্তি ও ন্যায়বিচার এবং শাসনব্যবস্থার উন্নয়নে যেসব বিষয় জরুরি; সেগুলোতেও নির্দিষ্ট গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। দুঃখের বিষয় হলো ২০১৯ সালে বিএসটিআই ৫৬টি খাদ্যপণ্যে ভেজাল পায়। যেটি প্রমাণ করে, এসডিজির প্রথম অঙ্গীকারই আমরা সার্বিকভাবে এত বছরে নিশ্চিত করতে পারিনি। এখানে আরো একটি বিষয় যোগ করা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিশেষজ্ঞ শিক্ষক যখন একটি খাদ্যপণ্যে মারাত্মক ভেজাল পেলেন, তখন তাকে নানাভাবে হুমকির মুখোমুখি হতে হলো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি তখন ঝড় তোলে।
জিডিপি বেড়ে ৮ শতাংশ ছাড়াচ্ছে। বিশ্বব্যাংক জিডিপি দুই সংখ্যায় অর্জনের প্রতি গুরুত্বারোপ করছে। সংস্থাটির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি চারজনে একজন না খেয়ে থাকে। বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা এবং এ দুটি বিষয়ের সমন্বয় জরুরি। আমাদের দেশ শুধু অর্থনৈতিক নিদের্শকগুলো নিয়ে খুশি, অথচ দেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তখন অসহায় দরিদ্র শ্রেণী। কিন্তু এ দেশ স্বাধীন হয়েছিল অসহায় শ্রেণীর মুক্তি এবং জীবনযাপনের মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে। যে শ্রেণীর হাত ধরে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে; তাদের কথা একটু স্মরণ করা প্রয়োজন।
একটি পত্রিকায় ‘কেমন আছে রোল মডেল বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ ছাপা হয়। তাতে বলা হয়েছেÑ এ বছরের প্রথম দিকে, যেখানে অর্থনীতি বাড়ার প্রধান কারণ হিসেবে চারটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, ম্যানুফ্যাকচারিং, কনস্ট্রাকশন, বাম্পার হারভেস্ট এবং রেমিটেন্স। এ খাতগুলোতে যারা কাজ করেন, তারা ভালো নেই। ৮০ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দেয়া পোশাকশিল্প শ্রমিকেরা অপর্যাপ্ত মজুুরিতে জীবনযাপন করেন, অনশন করেন এত টানাপড়েনের মধ্যে থেকেও। তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকির মারাত্মক প্রভাব যে এ শিল্পের ওপর পড়ে; তাতে কতটা গুরুত্বারোপ করা হয়? বরং ব্যবসায়ীরা নানা প্রণোদনা পান ঘন ঘন। কেনইবা এ অল্প মজুরির লোকজন গুরুত্ব পাবেন? তাদের দু’জন সংখ্যায় কমলে পাঁচজন আসছেন। ২০০৮ সাল থেকে দশ বছরের মাথায় তিন গুণ রফতানি বেড়েছে এসব খাতে, কেন শুনবেন কর্তৃপক্ষ এসব সমস্যার কথা? এটিও দারিদ্র্য।
প্রতি বছর মধ্যপ্রাচ্য থেকে তিন হাজারের বেশি লাশ ফিরে কফিনে। অতিরিক্ত শ্রম, অল্প খাবার, ঋণের বোঝা আর দুশ্চিন্তায় হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, এভাবে প্রাণ দিচ্ছেন একটি হতদরিদ্র দেশের অর্থনীতিকে গায়ে গতরে সচল রাখা তরুণ শ্রমিকেরা। প্রতিবার ভালো ফলনের পর কৃষকের যে দুর্ভোগ হয়; সে প্রতিবেদন আমাদের চোখে পড়ে না। এভাবে দারিদ্র্য সংস্কৃতি বাড়ছে বৈ কমছে না। তাই সময় এসেছে দারিদ্র্য এবং উন্নয়ন নিয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ আর গ্রহণযোগ্য গবেষণা এবং পর্যবেক্ষণের।
লেখক : শিক্ষার্থী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়


আরো সংবাদ



premium cement
বাংলাদেশকে হাসিনা তার পৈত্রিক সম্পত্তিতে পরিণত করেছিল : মাওলানা শাহজাহান ১৬ বছর ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতিকে কোনঠাসা করে রাখা হয়েছিল : শামসুল ইসলাম সুন্দরগঞ্জে স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধার, আটক ২ সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ মির্জাপুরে ছিনতাই হওয়া ট্রাকসহ ১২ হাজার লিটার সয়াবিন উদ্ধার নবীনগরে তিতাস নদীতে ট্রলার ডুবিতে নিহত ১ বগুড়ায় ইজিবাইকচাপায় ভাই-বোন হতাহত একুশে পদকের জন্য মনোনীত ১৪ ব্যক্তি ও নারী ফুটবল দল চ্যাটজিপিটির বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো পাকিস্তান থেকে চিটাগুড় আমদানি করছে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে বিপদে অস্ট্রেলিয়া

সকল