০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

দেশে প্রতিদিন ৩০ জনের আত্মহনন

-

১০ সেপ্টেম্বর ছিল আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। ২০০৩ সাল থেকে প্রতি বছর এ তারিখে বিশ্বব্যাপী সচেতনতামূলক দিন হিসেবে পালন করা হয়। দিবস পালনে আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ সংস্থার সাথে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বৈশ্বিক মানসিক স্বাস্থ্য ফেডারেশন যৌথভাবে কাজ করে। ২০১১ সালে বিশে^র ৪০টি দেশে দিবসটি পালিত হয়।
২০১৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বের নি¤œআয়ের কোনো দেশে আত্মহত্যা প্রতিরোধে নির্দিষ্ট কৌশল বা কর্মপন্থা ঠিক করা নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৪ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশে^ আট লক্ষাধিক মানুষ আত্মহত্যা করে। অর্থাৎ প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন মানুষ আত্মহত্যা করে। এরও প্রায় ১৫ থেকে ২০ গুণ মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। আমাদের দেশে প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন আত্মহনন করেন। এর মধ্যে নারী-পুরুষ-শিশু সব বয়সের মানুষ রয়েছে। তবে বেশির ভাগ আত্মহত্যা করেন ২১-৩০ বছরের নারী। এ বয়সী কিছু পুরুষও নানা কারণে আত্মহনন করছেন। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে গত বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১১ হাজারের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে আত্মহত্যা করেছেন ৫৪ হাজার ৩৯ নারী-পুরুষ-শিশু। সে হিসেবে গড়ে প্রতি বছর আত্মহত্যা করেন প্রায় ১১ হাজারের মতো। দিনের হিসেবে তা দাঁড়ায় প্রায় ৩০ জন। অর্থাৎ অন্যান্য অপমৃত্যু ছাড়াও দেশে প্রতিদিন গড়ে ৩০ নারী-পুরুষ-শিশু আত্মহনন করছে। সংখ্যাটি আমাদের দেশের জন্য চরম উদ্বেগজনক। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে দেশে আত্মহননের সংখ্যা সাড়ে ছয় হাজারের বেশি।
আত্মহত্যার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞদের অভিমতÑ বৈষম্য, বঞ্চনা, বিভ্রান্তি, হতাশা এবং না পাওয়ার যন্ত্রণায় মানুষ আত্মহত্যা করে। যেখানে সমাজের ভারসাম্য কম, অগ্রগতির সুফল সবাই সমানভাবে পায় না এবং বিভক্তি বেশি; সেখানে আত্মহত্যার প্রবণতাও বেশি। আত্মহত্যা ঠেকাতে হলে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। জাগ্রত করতে হবে সুস্থ মানবিক মূল্যবোধ। তাহলে আত্মহত্যার প্রবণতা কমে আসবে।
অপরাধ, সমাজ ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে সংগঠিত প্রতিটি আত্মহত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) হলেও জোরালো ও সুষ্ঠু তদন্ত হয় না। সুষ্ঠু তদন্ত হলে এসব ঘটনার নেপথ্য কারণ বেরিয়ে আসবে। এতে অপরাধী বা অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি সমাজের সাধারণ মানুষের সচেতনতা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা থাকলে আত্মহত্যার ঘটনা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। মূলত সব অপমৃত্যুর ঘটনার ব্যাপারে দেশের সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে।
পুলিশ সদর দফতরের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশে আত্মহত্যাসহ অপমৃত্যু হয়েছে ৮৭ হাজার ৬১৯ জনের। এর মধ্যে আত্মহত্যা করেছেন ৫৪ হাজার ৩৯ নারী-পুরুষ-শিশু। অন্যান্য কারণে অপমৃত্যু হয়েছে ৩৩ হাজার ৫৮০ জনের।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে সবার আগে আত্মহত্যাপ্রবণ লোকদের শনাক্ত করতে হবে। তারপর তাকে আত্মহত্যা থেকে দূরে রাখতে প্রয়োজন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ। বিশেষ করে যারা বিভিন্ন মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত তাদের স্বাস্থ্য সেবা এবং সামাজিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে। মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, কীটনাশক বা বিষ, বিষাক্ত পদার্থ ইত্যাদি দূরে রাখতে হবে। এছাড়া গণমাধ্যমে আত্মহত্যাবিরোধী প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে।
বিশ্বের বহু দেশ আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস পালন করে এবং আত্মহত্যা প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। আমাদের দেশে এ ধরনের কোনো কার্যক্রম নেই। তবে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আমাদের দেশেও আত্মহত্যার ঘটনা কমানো সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। হ
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার)
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement
দেশী-বিদেশী মিডিয়া নিয়ে আয়নাঘর পরিদর্শনে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা শামীম ওসমানের পৈত্রিক বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ কুমিল্লা আদালতে গুঁড়িয়ে দেয়া হলো শেখ মুজিবের ম্যুরাল দু’দিন বন্ধ থাকার পর বেনাপোল দিয়ে ফল আমদানি শুরু গল টেস্টের প্রথম দিন অস্ট্রেলিয়ার নিয়ন্ত্রণে অমুসলিম শিক্ষার্থীদের সাথে ইবি ছাত্রশিবিরের মতবিনিময় কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের কার্যালয়কে ‘পাবলিক টয়লেট’ ঘোষণা গাজা নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্যের বিরোধিতা চীনের চৌদ্দগ্রামে শিবির নেতা হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে সমাবেশ বাংলাদেশকে হাসিনা তার পৈত্রিক সম্পত্তিতে পরিণত করেছিল : মাওলানা শাহজাহান ১৬ বছর ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতিকে কোনঠাসা করে রাখা হয়েছিল : শামসুল ইসলাম

সকল