দাদন ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে আইনি পদক্ষেপ
- মাহমুদুল হক আনসারী
- ২২ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
টাকা ধার দেয়ার নামে দাদন ব্যবসায়ীরা গ্রামের নিরীহ মানুষকে চুষে খাচ্ছে। প্রতি লাখে মাসে ৩০ হাজার টাকা সুদ নেয়ার সংবাদ পত্রিকার মাধ্যমে দেশবাসী জানতে পেরেছে। নাওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার অর্জুন গ্রামের আপেল মাহমুদ নামে এক মৎস্যচাষি এক বছর আগে পাশের শালগ্রাম এলাকার দাদন ব্যবসায়ী বিপ্লবের কাছ থেকে মাসিক সুদে পাঁচ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। প্রতি মাসে বিপ্লবকে শোধ করতে হয় ৩০ হাজার টাকা, সে অঙ্কে পাঁচ লাখে মাসে তাকে সুদ গুনতে হয় দেড় লাখ টাকা। আপেল মাহমুদ তার ৫ বিঘা জমি বিক্রি করে সুদ-আসলে ১৫ লাখ টাকা দাদন ব্যবসায়ীকে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। ওই এলাকায় আপেল মাহমুদই শুধু নন, তার মতো দুই শতাধিক খেটেখাওয়া সাধারণ মানুষ ভিটেমাটি বিক্রি করে সুদের চক্রবৃদ্ধির কয়েক গুণ টাকা শোধ করতে গিয়ে পথে বসেছেন। এসব দাদন ব্যবসায়ীর খপ্পর থেকে বাঁচতে ওই এলাকায় নানা পেশার মানুষ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে মানববন্ধন করেছেন।
মানববন্ধনে রাজনৈতিক, সামাজিক প্রশাসনসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে জঘন্য চক্রবৃদ্ধি সুদ ব্যবসা থেকে বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন। সংবাদে দেখা যায়, ওই জেলার দেবীপুর গ্রামের আব্দুল কাদের নামের ফল ব্যবসায়ী ‘কৃষি প্রগতি উন্নয়ন সমিতি’ থেকে ব্যাংকের একটি ফাঁকা চেক জমা দিয়ে দেড় লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেছিলেন। প্রতিদিন এক হাজার ৫০০ টাকা করে তিন মাস কিস্তি দেয়ার পর ওই সমিতি উধাও হয়ে যায়। পরে দেখা যায়, সমিতি ফল ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে পাঁচ লাখ টাকার চেকের মামলা করে। এভাবে নাওগাঁ জেলায় বিভিন্ন এলাকায় চক্রবৃদ্ধি সুদি ব্যবসার মাধ্যমে দাদন ব্যবসায়ীদের সাধারণ খেটেখাওয়া মানুষকে চুষে খাওয়ার চাঞ্চল্যকর সংবাদ প্রকাশিত হয় ২৫ আগস্টের একটি জাতীয় পত্রিকায়। সারা দেশের মানুষের সুখ-দুঃখের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে নাওগাঁর প্রতিনিধি দাদন ব্যসায়ীদের নির্মম সুদি ব্যবসার চিত্র জাতির সামনে তুলে ধরেন।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, খেটেখাওয়া মানুষদের দাদন ব্যবসায়ীরা কী পরিমাণ চুষে খাচ্ছেন; তা অজপাড়াগাঁয়ের চিত্র না দেখলে বোঝা মুশকিল। এ ধরনের দাদন ব্যবসায়ী শুধু নওগাঁতেই নয়, দেশব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ভুক্তভোগী মানুষ সচেতন ও পড়ালেখা না জানায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে সাহস পান না। ফলে তাদের দৈনন্দিন জীবন ও পরিবার পরিচালনায় অর্থের প্রয়োজন হলে মহাজনদের দারস্থ হন। এটিই তাদের কাল হয়ে দাঁড়ায়। দেশে কয়েক লাখ দাদন ব্যবসায়ী রয়েছেন। তারা নগদ অর্থ নিয়ে বিভিন্ন সমিতির নামে দোকান দিয়ে বসে আছেন। ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠান এ ব্যবসার সাথে জড়িত। তারা কিছু প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় থাকেন। কথামতো টাকা শোধ করতে না পারলে ভুক্তভোগী গ্রহীতাকে চরমভাবে হেনস্তা করা হয়। মামলা ও মালামাল পর্যন্ত নিতেও পিছপা হন না। গ্রামগঞ্জ এবং শহরের বস্তিতে তাদের দাদন ব্যবসা সবার জানা। তাদের বিরুদ্ধে আইনি কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তারা সব সময়ই বেপরোয়া।
আধুনিক নামে এখন বিভিন্ন সমিতি, ক্লাব, মাল্টিপারপাস নাম দিয়ে জাঁকালো অফিস সাজিয়ে জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। নীরবে হাজার হাজার কোটি টাকা খেটেখাওয়া দুস্থ মানুষ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব বিষয় রাষ্ট্র ও বিভিন্ন সংস্থার জানা থাকলেও কোনো প্রতিকার বাস্তবে দেখা যায় না। সমবায় সমিতির নিবন্ধন নিয়ে কোটি কোটি টাকার সুদি ব্যবসার মাধ্যমে লুটপাটের অনেক সংবাদ জাতীয় দৈনিকে শিরোনাম হতে দেখা যায়। প্রয়োজন আর লাভের আশায় অনেক মানুষ এসব প্রতিষ্ঠানে যান। কয়েক মাসের মাথায় বড় অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করে প্রতিষ্ঠানটি নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। তখন তারা চলে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ ধরনের দাদন ব্যবসা আর প্রতারণায় দেশের অনেক মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। গ্রামের সহজ-সরল খেটেখাওয়া মানুষকে সুরক্ষায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নিতে হবে। অতি লোভী দাদন সুদি ব্যবসার হাত থেকে সমাজকে রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের। কোনোভাবেই সুদি দাদন ব্যবসায়ীদের হাতে সমাজকে ছেড়ে দেয়া যায় না। তাদের সমাজবিধ্বংসী অবৈধ কর্মকাণ্ড অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। হ
Email:[email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা