প্রসঙ্গ : শেয়ারবাজার
- আবুল কাশেম
- ১৫ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
প্রায় একদশক ধরে পতিত, শেয়ারবাজার উত্তরণের কি কোনো উপায় নেই? সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে বাজার পড়ছে তো পড়ছেই। বাজার ঠিক করার জন্য নতুন এসইসি এবং তাদের হাত দিয়ে শতাধিক নতুন কোম্পানি বাজারে যোগ হলো। দেখা গেল এত কোম্পানি আসার পরও শেয়ারবাজার আগের সূচকই ধরে রাখতে পারছে না। তাহলে নতুন কোম্পানিগুলোর ‘সূচক’ গেল কোথায়? এ প্রশ্নের জবাব আছে নাকি কারো কাছে? এ বাজার কি তাহলে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’? জুয়ার বাজার, লুটের বাজার হয়ে গেল? কারা এ সর্বনাশ করল? বাজারকে কৃত্রিমভাবে উত্তরণ করানো বা টেনে দমিয়ে রাখা কোনোটিই সঠিক নয়, তবে আপৎকালীন পর্যাপ্ত সহায়তা দিতে হবে।
২০১০ সালে ব্যাংকগুলো কার প্ররোচনায় সীমাছাড়া বিনিয়োগ করে বাজারকে আকাশে তুলে এমন জোরে আছড়ে মারল যে, ‘হাড়গোড় ভেঙে পঙ্গু হয়ে’ বাজার বসে পড়ল। এতে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী ‘ছারখার’ হয়ে গেল। অনেকে আত্মহত্যা করেছে। প্রশ্ন হলো, তখন বাজার কর্তৃপক্ষ, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ, সরকার কোথায় ছিল? থাকলে এসব অপকর্ম হলো কিভাবে? একজন সাধারণ বিনিয়োগকারীর বাজারের ধোঁকা বুঝতে সময় লাগে, কিন্তু কর্তৃপক্ষ কেন আগাম বা পরবর্তী কঠোর ব্যবস্থা নিলো না? আল্লাহর রহমতে বিগত এক দশকে দেশে এমন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সঙ্কট হয়নি যে, কোনো কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বরং কিছু লোকের অপকর্ম ও লুটপাটের কারণেই এমনটি হয়েছে। কিন্তু লুটেরাদের শাস্তি বা তাদের কাছ থেকে হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ আদায় করা হলো না। এ কারণে শেয়ারবাজারও মরে গেল। এ শূন্যতার মধ্যেই বাজার হাবুডুবু করছে। এ সঙ্কট যাচ্ছে না। ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি পূরণ করার জন্য নতুন কোম্পানিতে ২০ শতাংশ কোটা স্থির করা হলো। উদ্যোগটি ভালোই ছিল, আরো বেশি অংশ হলে ভালো হতো। রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকা ছাড়াই তারা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারত। তা ছাড়া ঋণাত্মক অ্যাকাউন্টের জন্য সূর্যাস্ত আইন না থাকলে, ওই অ্যাকাউন্টধারীরাও ঋণমুক্ত হতে পারত। দিনে বিক্রি করে ওই দিনই শেয়ার কিনতে গিয়ে ব্যবসায় করা যায়নি।
যে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বা এসইসি এবং নতুন কোম্পানিগুলো বাজারের উত্তরণের জন্য আনা হলো, সেগুলোই বাজারের জন্য ‘ঘাতক’ হয়ে বসল। প্রিমিয়াম দিয়ে যেসব কোম্পানি উচ্চমূল্যে বাজারে আনা হয়, সেসব কোম্পানি এখন আইপিও মূল্যের চেয়েও অনেক কম মূল্যবান। তারাই এখন মুমূর্ষু। দেখা যায়, আজেবাজে কোম্পানির ভুয়া অ্যাকাউন্ট দেখিয়ে বাজারে আনা হলো এবং বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়া হয়েছে। রক্ষকই রাক্ষস হয়ে গেল। একসাথে শতাধিক কোম্পানিতে এমন ভুল হতে পারে না। স্বেচ্ছায় এবং স্বজ্ঞানেই এমনটি করা হয়েছে বলে মনে করা যায়। বাজার আর দাঁড়াতে পারেনি। এখন কাজ একটাই, তা হলোÑ এসব কোম্পানি এবং যারা এসব ভুয়া কোম্পানি বাজারের আসার সাথে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় এনে অপরাধের শাস্তি প্রদান এবং ষোলোআনা ক্ষতি (হাজার হাজার কোটি টাকা) আদায় করতে হবে। যারা আমানতের খেয়ানত করেছে, তারা কোনো ছাড় পেতে পারে না এবং তাদের দায়িত্বেও থাকতে পারে না। বাজারের এ ক্ষতি পূরণ করতেই হবে। বাজারে এখন চাহিদা নেই নতুন আইপিওর। নতুন আইপিও আনতে হলে আগের শতাধিক ভুয়া কোম্পানির বিচার করতে হবে। না হয় শেয়ারবাজার ঠিক হবে না এবং বাজারের আস্থা ফিরে আসবে না।
এসব আইপিও আসার সময় বলা হতো, ‘দেখে শোনে বুঝে বিনিয়োগ করুন’। কথাটি ভালো, কিন্তু ভুয়া কাগজপত্র দেখে একটি কোম্পানির সঠিক অবস্থা কি জানা যায়? বা কোনো কোম্পানি আলাদাভাবে বিনিয়োগকারীদের তার সঠিক হিসাব না দেখালে বা কোম্পানি প্রথম তিন কিস্তি হিসাব ‘লাভজনক’ দেখিয়ে দুরভিসন্ধিমূলক চূড়ান্ত কিস্তিতে মারাত্মক লোকসান দেখালে বিনিয়োগকারী কিছু করতে পারে না। তাই আগে এসব অপকর্ম বন্ধ করতে হবে এবং প্রতিটি ব্রোকার হাউজকে ‘অ্যানালিস্ট প্যানেলের’ আওতায় আনতে হবে। শেয়ারবাজার সৎ লোক দিয়ে চালাতে হবে। অসৎ লোক দিয়ে বাজার যে ভালো হয় না, তা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে।
বাজার ঠিক করার কিছু দাবি ও সুপারিশ জানিয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা প্রধানমন্ত্রীকে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন। তা কাজে লাগানোর আগেই, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ তাদের নামে ভুয়া অভিযোগে ‘জিডি’ করে বসে। অপকর্ম বন্ধ না করে কণ্ঠরোধের এমন তৎপরতা কেন?
বাজারে কিছু অংশ আছে, কোম্পানি ভালো হোক আর খারাপ হোক, শেয়ারবাজারে এলেই তাদের লাভÑ এমন অংশীদারদের নিয়ে মিটিং করে লাভ নেই। আবার অনেকে বাজারের পতন নিয়ে বিদেশের উদাহরণ দেন। বিদেশের কর্তৃপক্ষ কি এমন অসৎ? তাদের সরকার কি এমন অব্যবস্থাপক? ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা কি বাজার পরিবর্তন করে দিতে পারে? চোর, লুটেরা, অপরাধী ধরার জন্য অনেক যন্ত্রপাতি, আইন-কানুন করা হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি, এসব যন্ত্রপাতি এবং আইনকানুন ছাড়া বাজার তার প্রায় সত্তর বছর বয়স অতিক্রম করেছে। কিছুটা ভুল বিনিয়োগ করেও এ সরকারের সময়ের মতো কেউ এত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি অতীতে। কোম্পানি ভালো হলে, সেখান থেকে সুফল আসবেই, সোনা ফলবেই। ডে ট্রেড করুক না করুক। ডিএসই রিভিউটি বাংলায় করা উচিত।
সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী বাজার অংশীদের সাথে মিটিং করেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে টাকা জোগান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে, তার পরও বাজারের স্থিরতা দেখা যাচ্ছে না। শেয়ারবাজার স্থিতিশীল হওয়া কি খুব কঠিন? বলাবাহুল্য, কেবল টাকা হলেই শেয়ারকে ভালো বলা যায় না। কোম্পানি ভালো হলে ভালো করলে শেয়ারবাজারও ভালো হয়। যে বাজার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে, কর্মসংস্থানে বিরাট ভূমিকা রাখে, সে বাজার বিনিয়োগকারী তথা দেশের জন্য বিরাট বোঝা বা গলার কাঁটা হয়ে গেছে। টাকার চেয়েও আস্থা বা বিশ্বাস বেশি দরকার। প্রধানমন্ত্রী যখন বললেন, আমি এ বাজার বুঝি না, তখন দুষ্কৃতকারীরা আরো সুযোগ পেয়ে গেল। তাহলে তার এত উপদেষ্টা কেন? শেয়ারবাজার নিয়ে এমন মন্তব্য করে উপদেষ্টাদের দায় এড়ানো বা ক্ষয়ক্ষতি অস্বীকার করা যায় না। ব্যবসায় লাভ-ক্ষতি হয়ই, কিন্তু লুটপাট হয় না। সরকারপ্রধানকেই হাল ধরতে হবে। দমন করতে হবে অসৎ লোকদের। সৎ লোক দিয়ে বাজার চালাতে হবে। দুর্বৃত্ত কোম্পানি ও কর্তৃপক্ষকে দমন এবং ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। শেয়ারবাজারকে দমিয়ে না রেখে প্রকৃত অবস্থায় ছেড়ে দিতে হবে। বিনিয়োগকারীদের কণ্ঠ রোধ না করে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে এবং কথা শুনতে হবে। বাজারকে ধ্বংস হতে দেবেন না। সঠিক ব্যবস্থা নিলে ইনশা আল্লাহ এ বাজার আবার ‘সোনার ডিম পাড়বেই’। হ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা