০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

বায়ুদূষণের কবলে নগরবাসী

-

উন্নয়ন অবশ্যই প্রয়োজন। সেই উন্নয়ন যদি কোটি কোটি মানুষের ক্ষতির কারণ হয়, তা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়াই স্বাভাবিক। তেমনি রাজধানীতে নানা ধরনের উন্নয়নকাজ চলছে। এজন্য ঢাকার বেশির ভাগ এলাকা বায়ুদূষণের শিকার। ধুলোয় চোখ বন্ধ হয়ে আসে তাদের। যদিও ঢাকায় অনেক আগে থেকে বায়ুদূষণ ছিল। তবে বর্তমানে মেট্রোরেলের কাজে তা বেড়ে গেছে মাত্রাতিরিক্ত।
নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো পরিবেশের দিকটি বিবেচনায় নেয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের ভূমিকা কী? জলবায়ু, পরিবেশ নিয়ে বড় বড় সেমিনার করে খুব সুন্দর সুন্দর কথা বলা হচ্ছে। কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ১০ কোট টাকার মালামাল পাহারা দিতে ৪৬ কোটি টাকা খরচের তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। এ যদি হয় পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড, তাহলে কিভাবে বায়ুদূষণ বন্ধ হবে? যদি নেশা থাকে শুধু লুটপাটের, তাদের দিয়ে কী সম্ভব পরিচ্ছন্ন দেশ গড়া? এদিকে লুটপাটকারীদের কাছে সরকারি দফতরগুলো অসহায়। সরকারি কোনো অফিসের চিত্র দেখলে এ ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না।
ঢাকার আগারগাঁওয়ে বিশাল একটি ভবন আছে। যেটি জিটিসিএলের অফিস। ভবনটির বেশির ভাগ ফ্লোর ফাঁকা। যারা কাজ করছেন তাদের বেশির ভাগই অন্য কাজে ব্যস্ত। বৈধভাবেই তাদের অঢেল আয়। অথচ অফুরন্ত চাহিদায় তারা পেরেশান। ওই দফতরে যিনি স্থায়ী গাড়িচালকের চাকরি করেন, তারাও ঢাকায় বাড়ি আছে। বড় কর্মকর্তাদের তো বাড়ি-গাড়ির অভাব নেই। রাস্তাঘাটে খোঁড়াখুঁড়ি করে বড় বড় পাইপ ফেলে রেখে তারাও বায়ুদূষণ করছেন। সড়ক খোঁড়াখুঁড়িতে যেমন বাড়ছে যানজট; তেমনি বাড়ছে বায়ুদূষণ। সম্প্রতি ১৯ সেপ্টেম্বর একটি পত্রিকার এক খবরের শিরোনাম ছিলÑ ‘মাতৃগর্ভেই বায়ুদূষণের শিকার’। উপশিরোনাম ছিলÑ গবেষকেরা মনে করছেন বায়ুদূষণের কারণে গর্ভপাত সময়ের আগেই শিশুর জন্মগ্রহণ এবং জন্মের সময়ে শিশুর কম ওজনের ঝুঁকি বাড়ছে। প্রতিবেদনটির একটি অংশে বলা হয়েছেÑ ‘প্লাসেন্টা বা গর্ভফুলে অতিক্ষুদ্র কার্বন কণার অস্তিত্ব পেয়েছেন গবেষকেরা। নতুন এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ভ্রƒণের বেড়ে ওঠায় গর্ভফুলের যে অংশ থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদান সরবরাহ করা হয়, সেখানে অতিক্ষুদ্র কার্বন কণার অস্তিত্ব প্রথমবারের মতো গবেষকেরা পেয়েছেন।’
এটি আমাদের দেশের জন্য ভয়াবহ এক তথ্য। সমগ্র বাংলাদেশ আজ ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে। ঢাকার বাইরেও অতিরিক্ত ধুলোবালির দেখা মেলে। ২৩ বছর পর সস্ত্রীক চট্টগ্রাম শহরে বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানেও প্রচণ্ড পরিবেশ দূষণ। ধুলোবালুর জন্য সেখানেও চোখ আটকে যায়। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায় বন্দরনগরী। শহরটিতে নিজের ছেলেবেলা কেটেছে। তখন বায়ুদূষণ ছিল না। এখন সিটি করপোরেশন, এলজিইডি, ওয়াসা, তিতাস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের খোঁড়াখুঁড়িতে দেশের মহানগরীসহ প্রায় সব শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে।
উন্নয়নকাজ হলে খোঁড়াখুঁড়ি হবে, তা স্বাভাবিক। কিন্তু মাসের পর মাস গর্ত করে ফেলে রাখলে তো পরিবেশ নষ্ট হবেই। বাড়বে বায়ুদূষণ। কর্তৃপক্ষ বলতে যারা আছেন; তাদের কাছে গণমাধ্যমকর্মীরা প্রশ্ন করলে যে উত্তর দেন; তাতে মনে হয় তারা পূতপবিত্র! অথচ বড় কর্তকর্তারা অনেকেই কোটি টাকার নিচে ঘুষ খান না বলে অভিযোগ রয়েছে! তারা দামি পোশাক পড়ে রকমারি খাবার খেতে অভ্যস্ত। তাদের দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি চাই।
ঘন ঘন বিদেশ সফরে না গেলে ইজ্জত থাকে না। দেশে বিদেশে একধিক ফ্ল্যাট দরকার। কী নেই তাদের? হ্যাঁ একটি জিনিস তাদের নেই; নীতি-নৈতিকতা। সাধারণ বালিশ, পর্দার কাপড়, বই, টিনের ভাউচার নিয়ে এত হইচই। অন্য বড় বড় জিনিসের ভাউচার তো উন্মোচিত হয়নি। তাহলে বোঝা যেত আরো কী কী হচ্ছে। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় সরকারি কর্মকর্তা, নীতিনির্ধারক ব্যক্তিরা অফুরন্ত চাহিদা মেটাচ্ছেন। অথচ নাগরিকেরা দূষণমুক্ত পরিবেশটুকুও পাবেন না? পরিবেশ দূষণে গরিবেরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এর শিকার সবাই।
পরিবেশ নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান গবেষণায় রত। এসব প্রতিষ্ঠানের কেউ রামপালে ভারতীয় কোম্পানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতির বিষয়ে মাথাব্যথা নেই। গুলশানে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান আছে। যাদের কাজ মাটি, পানি, বায়ু নিয়ে গবেষণা করা। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন এটির নাম সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন অ্যান্ড সার্ভিসেস। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের ভাবখানা দেখলে যে কারো মনে হবে, তারা প্রত্যেকেই এক একজন বিখ্যাত গবেষক! তাদের অনেক টাকা আয়। তারা নাকি ভালো গবেষণা করতে পারেন। তাদের একটি পাঠাগার আছে। সাধারণ কেউ সেখানে বসে বই পড়বেন, সে সুযোগ নেই।
সামনে শীত মওসুম আসছে। শীতে বায়ুদূষণ আরো বাড়বে। আমারা শিশুদের নিয়ে রাস্তায় বের হতে পারছি না। বায়ুদূষণ আর শব্দদূষণের কারণে। ঢাকায় যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে; তাতে পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে তা কিভাবে মোকাবেলা করা যায়Ñ এ নিয়ে এখনই চিহ্নিত করে সমাধান বের করা জরুরি। কিন্তু তার কোনো লক্ষণ নেই। সবাই কেমন যেন নির্বিকার। অথচ নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠী বায়ুদূষণে ক্ষতি নয়, সবাই এর শিকার। হ
লেখক : শিক্ষার্থী


আরো সংবাদ



premium cement
দেশী-বিদেশী মিডিয়া নিয়ে আয়নাঘর পরিদর্শনে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা শামীম ওসমানের পৈত্রিক বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ কুমিল্লা আদালতে গুঁড়িয়ে দেয়া হলো শেখ মুজিবের ম্যুরাল দু’দিন বন্ধ থাকার পর বেনাপোল দিয়ে ফল আমদানি শুরু গল টেস্টের প্রথম দিন অস্ট্রেলিয়ার নিয়ন্ত্রণে অমুসলিম শিক্ষার্থীদের সাথে ইবি ছাত্রশিবিরের মতবিনিময় কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের কার্যালয়কে ‘পাবলিক টয়লেট’ ঘোষণা গাজা নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্যের বিরোধিতা চীনের চৌদ্দগ্রামে শিবির নেতা হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে সমাবেশ বাংলাদেশকে হাসিনা তার পৈত্রিক সম্পত্তিতে পরিণত করেছিল : মাওলানা শাহজাহান ১৬ বছর ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতিকে কোনঠাসা করে রাখা হয়েছিল : শামসুল ইসলাম

সকল