কিশোরদের উচ্ছন্নে যাওয়ার প্রবণতা
- সাইফুল ইসলাম তানভীর
- ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
উত্তরায় আমার শৈশব-কৈশোর কেটেছে। সেখানকার নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র ছিলাম। বর্তমানে কিশোর গ্যাং নিয়ে মিডিয়াতে খবর প্রচারিত হচ্ছে। ঢাকার কিশোরেরা নাকি সঙ্ঘবদ্ধভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং নানা নামে সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ছে। এর মধ্যে প্রথমেই আসে উত্তরার নাম। মিডিয়ায় উত্তরা নামটি বেশি উচ্চারিত।
প্রশ্ন হচ্ছেÑ এসব কিশোর এক দিনে এমনভাবে গড়ে উঠেছে কী? বললে ভুল হবে না, সমাজ-রাষ্ট্র তাদের এমন হতে বাধ্য করেছে। দীর্ঘ দিনের ধারাবাহিকতায় এই কিশোরদের এমন অবস্থা। এখন থেকে ২৩ বছর আগের কথা। তখনই দেখেছি, উত্তরার একটি নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কিশোর অনেক শিক্ষার্থীকে সিগারেট টানতে। অথচ স্কুলটিতে মেধাবীরাই ভর্তি হয়ে থাকে। সেসব মেধাবীই যদি এমন হয়; তাহলে মেধা যাদের কম, তাদের অবস্থা কী সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে নওয়াব হাবিবুল্লাহ স্কুলেরও দু-একজন এমন ছিল। কিন্তু নামী ওই স্কুলের পোশাক পরিহিত ছাত্রদের রাস্তায় প্রকাশ্যে সিগারেট টানতে দেখে আমরা অবাক হতাম।
মিডিয়ায় অভিযোগ করা হচ্ছে, কিশোরদেরই সব দোষ। সমাজ-রাষ্ট্র কিভাবে তাদের এমনভাবে তৈরি করেছে, তা আমলে নেয়া হচ্ছে না। বিনা ভোটে এবং রাতের আঁধারে ভোটের বাক্স ভরে যারা ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্র চালাচ্ছেন; তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কী, সেদিকে কেউ প্রশ্ন তুলতে সাহস পাচ্ছেন না? চার দিকে মাদকের ছড়াছড়ি। পুলিশবাহিনী জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতন পেলেও তারা মূলত একটি দলের অনুগত হিসেবে কাজ করছেন। এ বাহিনীর অনেক সদস্য নানা অবরাধপ্রবণতায় ঝুঁকে পড়ছেন। মতিঝিলে যুবলীগের এক নেতার ক্লাবে অভিযানের পর সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি যে মন্তব্য করেছেন, তাতেও ওই সত্য ফুটে উঠেছে। ভোট ছাড়া যারা এমপি হয়েছেন, তাদের চারিত্রিক অবস্থাটা কী? তাদের কার্যালয়গুলোর চেহারা কী? স্কুল কমিটির সদস্যদের চারিত্রিক অবস্থা কী? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকদের বেশির ভাগই সরকারদলীয় লোকজন। অযোগ্য শিক্ষক দিয়ে স্কুল চালানো হচ্ছে। ঘুষ দিয়ে শিক্ষকতার চাকরিতে ঢুকছেন অনেকে। স্কুলগুলোতে অনেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।
ভারতীয় চ্যানেলের অনুষ্ঠানমালার কুপ্রভাব পড়ছে আমাদের সমাজে। নারীদের বড় একটা অংশ ভারতীয় সিরিয়ালে আসক্ত। তাদের সন্তানেরা কিভাবে গড়ে উঠবে সুস্থ-স্বাভাবিক হয়ে, তা অনুমেয়। এসব কিশোরের সবার বাবার আয়রোজগার কি বৈধ? তা ছাড়া, খেলার মাঠগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। তাদের হাতে কিভাবে মাদক যাচ্ছে? মাদক কোথা থেকে আসছে? সেটা কি সরকার, প্রশাসন বা রাজনৈতিক নেতারা জানেন না? কিশোরদের হাতে অস্ত্র কিভাবে আসে? নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্র হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকদের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। অথচ তারা জানেন না কিভাবে কিশোরদের হাতে মাদক, অস্ত্র এসেছেÑ এটি ভাবা যায়?
এখন গ্রাম শহর সব জায়গাতেই বিয়ে, সুন্নাতে খাতনা, নাক ফোড়ানো, জন্মদিন ইত্যাদি নামের অনুষ্ঠানে উচ্চশব্দে হিন্দি গান বাজানো হয়। এসব অনুষ্ঠানের কোনো কোনোটিতে মদ, বিয়ার খেয়ে নাচানাচি করেন সব বয়সীরা। দেশে হাজীর অভাব নেই। আবার অনেক হাজীকে দেখা যায়, তারা এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন। তাহলে অযথা কিশোরদের একা দোষ দিয়ে লাভ কী? মূলত আমাদের পুরো সমাজ কিশোরদের অপরাধী করতে দায়ী। তাই সবার আগে রাষ্ট্রে এবং সমাজে ফিরিয়ে আনতে হবে নৈতিকতার চর্চা। এটি যত শক্ত পাটাতনে দাঁড়াবে, সমাজ তত নৈতিক ভিতে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। হ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা