০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ৭ শাবান ১৪৪৬
`

ঝরে পড়া শিক্ষার্থী

-

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরের তথ্য অনুসারে, ২০১৮ সালে পিইসি পরীক্ষায় ২৭,৭৭,২৭০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। ছাত্র ১২ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪২ জন এবং ছাত্রীর ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৫২৮ জন। ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় তিন লাখ ১৭ হাজার ৮৫৩ পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। পিইসি পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৯৮ দশমিক ৫২ শতাংশ।
সারা দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২০১৮ সালের জেএসসি ও জেডিসি দু’টি পরীক্ষার মোট ২৯ হাজার ৬৭৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ২৬ লাখ ৭০ হাজার ৩৩৩ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। পাস করেছে ২২ লাখ ৩০ হাজার ৮২৯ জন। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় আটটি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের গড় পাসের হার ৮৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। মাদরাসা বোর্ডের অধীনে জেডিসিতে চার লাখ দুই হাজার ৯৯০ জন পরীক্ষা দেয়। মাদরাসার জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় পাসের হার ৮৯ দশমিক ০৪ শতাংশ।
পিইসি, জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় বেশ কিছু শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। মেয়ে শিক্ষার্থী হলে স্থানীয় মক্তবে আরবি শিক্ষা দিয়ে অনেকটা চুপিচুপি বাল্যবিয়ে দেয়া হয়। এ ছাড়া ঝরে পড়া ছেলে কিশোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ ওয়ার্কশপ, ফার্নিচার দোকান, মোটরযানের মেকানিকসের দোকানে কাজে লেগে পড়ে। অনেকে বাবা-মায়ের সাথে গৃহস্থালির কাজে সাহায্য করে। দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় জেএসসি/জেডিসি পরীক্ষায় ঝরে পড়া অনেক শিক্ষার্থী পাথর সাইটে, পাথর লোড-আনলোড শ্রমিক ইউনিয়ন, দালাল অফিসে ও চা-বাগানে কাজ করে।
২০১৮ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা পাসের পর সীমান্তবর্তী অঞ্চল ও শহরাঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থী স্থানীয় ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পায়নি। কারণ, বিভাগীয় শহরের মতো উপজেলা পর্যায়েও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভর্তির জন্য মেধা মূল্যায়ন পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করেছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়, সব প্রতিষ্ঠানে ভালো মেধাবী ছাত্রছাত্রী খুঁজে খুঁজে ভর্তি করানোর একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ডিজিটাল যুগে মেধাবীদের মূল্যায়ন হবে কথাটা যৌক্তিক। কিন্তু যেসব শিশু-কিশোর ডিজিটাল যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে পেড়ে উঠছে না, তাদের সুপ্তপ্রতিভা বিকাশে যথাযথ খরচ সঙ্কুলান করতে পারছেন না ওইসব শিক্ষার্থীর বাবা-মা। শুধু পরিবারের অভাব অনটনের কারণে কোচিং বাণিজ্যের যুগে মেধা মূল্যায়নে টিকতে পারছে না অভাবী পরিবারের সন্তানেরা। গ্রামের গরিব দিনমজুর ও কৃষক পরিবারে অনেক শিশু সুযোগ আর পরিবেশের অভাবে শহরের ছেলেমেয়েদের মতো চালাক হয় না।
তবে গ্রামের যারা বিত্তশালী ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তারা শৈশব থেকে শহরের পরিবেশে মিশতে পারে। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের সেই সুযোগ থাকে না। ফলে এ রকম পরিবারের অনেক ছেলেমেয়ের মেধা থাকা সত্যেও কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে বিকশিত হচ্ছে না তাদের মেধা। তারা শহরের ছেলেমেয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে পেড়ে উঠছে না।
২০১৮ সালে তেঁতুলিয়া উপজেলায় প্রাইমারি এডুকেশন সার্টিফিকেট (পিইসি) সমাপনী পরীক্ষায় পাস করা ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা দুই হাজার ৫৭৪ জন। এর মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা এক হাজার ১৫৬ জন এবং ছাত্রীর সংখ্যা এক হাজার ৪১৮ জন। মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে উপজেলার ২৬টি বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে দুই হাজার ২৭৯ জন। এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখনো ২৯৫ ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়নি। যদিও তাদের মধ্যে ডজন দুয়েক পঞ্চগড়ের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। তবু বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী পিইসি পাসের পরে কোনো স্কুলে ভর্তি হয়েছে কি না সেই পরিসংখ্যান জানা খুব দুস্কর। তেঁতুলিয়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১১০ জন। নতুন সরকারি করা এ বিদ্যালয়ে দু’টি শাখা চালুর ব্যবস্থা নেই। ফলে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মেধাক্রম অনুসারে ‘ক শাখায়’ ৬০ জনকে ভর্তি করা হয়। এ বিদ্যালয়ে ভর্তি ইচ্ছুক সীমান্তপাড়ের ৫০ জন ছাত্রছাত্রী বাদ পড়ে। একইভাবে কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ১৯১ জন। অংশগ্রহণকারী ছাত্রীদের মধ্যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মেধাক্রম অনুসারে (ক ও খ) শাখায় ১৪০ জন ছাত্রীকে ভর্তি করা হয়েছে। এ বিদ্যালয়ে ভর্তি ইচ্ছুক ৫১ ছাত্রী বাদ পড়ে। সীমান্তবর্তী গ্রামের বিভিন্ন এলাকার গরিব ৪১ ছাত্রীর অভিভাবক সন্তানের ভর্তি বিষয়ে দুশ্চিতায় পড়েছে। কারণ তেঁতুলিয়া সদরের আশপাশে প্রায় ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই।
জেএসসি/জেডিসি পরীক্ষায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে কারিগরি শিক্ষার বিষয়ে রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের ভাবতে হবে। এ ছাড়া, উপজেলাপর্যায়ে সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল না করলেও মেধাক্রমে না টেকা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার বিষয়টি ভাবতে হবে। সর্বপরি শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে হবে। সবার জন্য সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। কম মেধাবী ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মূল ধারায় যুক্ত করতে দেশের নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হবে। হ
লেখক : সাংবাদিক
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement