০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

ক্ষুদ্র নৃ-জাতিগোষ্ঠীর ভাষা

-

বাংলাদেশ সরকারের সম্প্রতি প্রণীত গেজেট অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ৫০ জাতের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী রয়েছে। এগুলো হলোÑ ওরাঁও, কোচ, কোল, খাসিয়া বা খাসি, খিয়ং, খুমি, মারমা, পাংখোয়া বা পাংখো, গারো, পাহাড়ি বা মালপাহাড়ি, চাক, চাকমা, ডালু, তঞ্চঙ্গা, ত্রিপুরা, বম, বর্মণ, মণিপুরী, মুণ্ডা, ম্রো, রাখাইন, লুসাই, বড়াইক বা বাড়াইক, সাঁওতাল, হাজং, মাহাতো বা কুর্মি মাহাতো বা বেদিয়া মাহাতো, কন্দ, কড়া, গঞ্জু, মালো বা ঘাসিমালো, গড়াইত, গুর্খা, তেলি, তুরি, পাত্র, বাগদি, বানাই, বেদিয়া, ডিল, ভূমিজ ভূঁইমালি, খারিয়া বা খাড়িয়া, মাহালি, মুসহর, রাজোয়াড়, লোহার, শবর, হুদি, হো এবং খারওয়ার বা খেড়োয়ার। এসব নৃ-গোষ্ঠীর বেশির ভাগের বসবাস পাহাড়ে ও কিছু সমতলে।
বনাঞ্চল, চা বাগান আর পাহাড়ি টিলাবেষ্টিত বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রত্যেকের আলাদা আলাদা বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি, প্রথা, ধর্মীয় ভাবধারা ও উৎসব মুগ্ধ করে আমাদের। তাদের প্রত্যেকেরই একসময় নিজস্ব মাতৃভাষা ছিল। কিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষা আজ হারিয়ে গেছে কালের গহ্বরে। বাকিদের মাতৃভাষা হারিয়ে যেতে বসেছে।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষা বিপন্নের অন্যতম কারণ হলো নিজেদের মধ্যে তাদের ভাষাচর্চা কমে যাওয়া। তারা এখন বাংলায় কথা বলায় বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এছাড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রাতিষ্ঠানিক চর্চাকেন্দ্র নেই এবং কোনো পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়ায় মাতৃভাষা, নিজস্ব কৃষ্টি ও সংস্কৃতি বর্তমানে হুমকিতে পড়েছে।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। তথাপিও তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভূমির অধিকারসহ জনগুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সম্মুখীন। পাশাপাশি তারা তাদের নিজস্ব মাতৃভাষাকেও হারাতে বসেছে। নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক মাতৃভাষা চর্চাকেন্দ্র না থাকা, সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, নিজেদের বাড়িঘরসহ অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাতৃভাষার ব্যবহার কমে যাওয়ার ফলে ক্ষুদ্র নৃ-জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষা হারিয়ে যাচ্ছে বলে গবেষকরা জানান।
দেশের চা শিল্পাঞ্চলে অসংখ্য ভাষাভাষী মানুষ রয়েছেন। তবে তারা নিজেদের মাতৃভাষা কেউ ব্যবহার না করায় এবং বাড়িঘরেও চর্চা না থাকায় চা শিল্পাঞ্চলের নানা ভাষাভাষীর নিজেদের মাতৃভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। এজন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মাতৃভাষা চর্চাকেন্দ্র চালু করা অতি আবশ্যক বলে গবেষকদের অভিমত।
দেশের সিলেট অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় অসংখ্য খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করেন। পাহাড়ে তারা পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তাদের গুচ্ছবদ্ধ গ্রাম পানপুঞ্জি বা খাসিয়াপুঞ্জি নামে পরিচিত। এসব পানপুঞ্জি বা খাসিয়াপুঞ্জিতে খাসিয়ারা তাদের নিজস্ব ভাষা চর্চা রাখতে নিজেদের অর্থায়নে স্কুল পরিচালনা করে থাকে। এসব স্কুলে খাসিয়া ভাষা ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া খাসিয়ারা তাদের প্রতিটি ধর্মীয়, সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে নিজস্ব ভাষা ব্যবহার করে থাকে। প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা একাডেমিক ব্যবস্থা না থাকার কারণে নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি এখন হুমকিতে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে খাসিয়াদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি অদূরভবিষ্যতে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে ৭০টি খাসিয়াপুঞ্জি রয়েছে। এসব পুঞ্জির মধ্যে হবিগঞ্জের বাহুবলের আলীয়াছড়া পানপুঞ্জি এবং সিলেটের গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ের নকশিয়ার পানপুঞ্জিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বাকি ৬৮টি পানপুঞ্জিতে কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। এসব পুঞ্জিতে খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন নিজেদের মধ্যে চাঁদার ব্যবস্থা করে কমিউনিটি বিদ্যালয় পরিচালনা করে। কমিউনিটি বিদ্যালয়ে নিজস্ব ভাষা চর্চার চেষ্টা চলছে। হ
লেখক : গণমাধ্যম কর্মী, শ্রীমঙ্গল
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement
৩ পল্লী উন্নয়ন অ্যাকাডেমি থেকে বাদ গেল শেখ পরিবারের নাম বইমেলায় ৮ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি সময় পরিবর্তন হচ্ছে, থাকছে না শিশুপ্রহর রাখাইন স্টেট : ঘুমধুমে স্থলবন্দর করার চিন্তা করছে সরকার ফ্যাসিবাদ উৎখাত করেছে ছাত্ররা আর তাদের সাহস জুগিয়েছেন শিক্ষকরা মশিউর রহমানের নতুন বই ‘টেকসই সমৃদ্ধিতে আল-কুরআনের দর্শন’ পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এপ্রিলে ঢাকা সফর করতে পারেন : তৌহিদ আ’লীগের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতার আগুন প্রবীণ সাংবাদিকদের জন্য মাসিক ভাতা আগামী বছর থেকে : মুহাম্মদ আবদুল্লাহ শেখ হাসিনার ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে অনুসন্ধান করবে দুদক ছাত্রদের যৌক্তিক অযৌক্তিক দাবি-দাওয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বনাম ইরানের অগ্রযাত্রা

সকল