ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ
- জুবায়ের আহমেদ
- ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
ব্রিটিশ আমল থেকে কম ভাড়ায় নিরাপদ ও আনন্দদায়ক চলাচলের জন্য যাত্রীদের আস্থা ট্রেন ভ্রমণে। বাংলাদেশের যেসব অঞ্চলে ট্রেনে ভ্রমণ করা যায়, সেসব এলাকার লোকজন ট্রেনেই একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত করেন। সময়ে সময়ে রেল দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটলেও ট্রেনের প্রতি মানুষের আস্থা দিন দিন বাড়ছে। সড়কপথে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়া এর অন্যতম কারণ। ট্রেনের নিরাপদ ও আনন্দদায়ক ভ্রমণের মধ্যেও হতাশার বিষয় এই যে, ট্রেনের ছাদে উঠে ভ্রমণকারী মানুষের সংখ্যাও অনেক। ১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইনের বিধান মতে, ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ নিষেধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে তা মানছে না যাত্রীরা, বিশেষ করে বিভিন্ন উৎসবের সময় ট্রেনের ছাদে করে ভ্রমণকারী মানুষের সংখ্যা আসন পাওয়া যাত্রীর চেয়েও বেশি হয়, যা ঝুঁকিপূর্ণ এবং ছাদে ভ্রমণে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে ব্যাপক, ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও শোনা যায়। পাশাপাশি ছাদে ভ্রমণের ফলে ট্রেন চলাচলে বিঘœ ঘটাসহ সরকারি মূল্যবান সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
স্ট্যান্ডিং টিকিট ও বিনা টিকিটেই ছাদে ভ্রমণ করেন অনেক যাত্রী। ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণের বিষয় নিয়ে এবার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও কঠোর হয়েছে। রেল মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ, অনিরাপদ ও দণ্ডনীয় অপরাধ। ছাদে ভ্রমণকারী ও ভ্রমণে উৎসাহদানকারী সমান অপরাধী। ট্রেনের ছাদে চড়লে এক বছরের কারাদণ্ড অথবা জরিমানা কিংবা উভয় প্রকার দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। নির্দেশনাটি পয়লা সেপ্টেম্বর ২০১৯ থেকে কার্যকর হয়েছে।
ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে কেউ ভ্রমণ করেন, তার কারণ খুঁজতে গেলে দেখা যাবেÑ যেসব যাত্রী স্ট্যান্ডিং টিকিট কাটার পরও বগিতে দাঁড়িয়ে যেতে পারেন না, তারা ঝুঁকি নিয়ে ছাদে চেপে গন্তব্যস্থানে যান, আবার ভাড়ার টাকা নেই কিংবা বিনা পয়সায় ভ্রমণের সুযোগ খোঁজা লোকজনও ছাদে ওঠেন। শুধু বিভিন্ন উৎসবের সময়ই ট্রেনের ছাদে ভ্রমণের বিষয় লক্ষ করা যায়, এ সময় যাত্রীর প্রচুর ভিড় থাকে। আসন না পাওয়া যাত্রীরা অপেক্ষা করেন স্ট্যান্ডিং টিকিটের জন্য। ট্রেন ছাড়ার ৩০ মিনিট আগে থেকে স্ট্যান্ডিং টিকিট দেয়া হলেও এ সময় বহু যাত্রী স্ট্যান্ডিং টিকিট কাটেন। টিকিট কাটার পর যারা বগিতে দাঁড়িয়ে গমনের সুযোগ পান তারা দাঁড়িয়ে গেলেও যারা দাঁড়িয়ে যাওয়ারও সুযোগ পান না তারা বাধ্য হন ছাদে উঠতে, কেননা টিকিট ফেরত দেয়ার কোনো সুযোগ নেই সে মুহূর্তে, স্ট্যান্ডিং টিকিট ফেরত নেয়ারও কোনো বিধান নেই। রেলওয়ে আইনে ফলে বাধ্য হয়ে সঠিক সময়ে গন্তব্যস্থানে যাওয়ার তাড়া থেকেই মানুষ ঝুঁকি নেন।
কিছু অসাধু যাত্রী উৎসবের সময় ছাড়াও ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করেন বা বিনা টিকিটে ছাদে ভ্রমণ করেন। তাদের অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হলেও যারা বিভিন্ন উৎসবের সময় স্ট্যান্ডিং টিকিট কেটে বগিতে দাঁড়িয়েও যেতে না পেরে বাধ্য হয়ে ছাদে ভ্রমণ করেন, তাদের ছাদে ভ্রমণ বিদ্যমান আইন ও নতুন বিজ্ঞপ্তিতে অপরাধজনক কাজ হলেও টিকিট ফেরত নেয়ার বিষয়ে কোনো বিধান কিংবা নির্দেশনা নেই। ফলে ছাদে গমন নিষিদ্ধ ও যত ইচ্ছা তত স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি এবং বগিতে দাঁড়িয়ে যেতে না পেরে বাধ্য হয়ে ছাদে ভ্রমণে অসামঞ্জস্যতা থাকছে। কাজেই ট্রেনের ছাদে চড়লেই এক বছরের কারাদণ্ড অথবা জরিমানা কিংবা উভয় প্রকার দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে এমন বিধান কার্যকর করার মাধ্যমে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ প্রসঙ্গ শেষ নয়, যারা স্ট্যান্ডিং টিকিট কেটেও বগিতে দাঁড়িয়ে যেতে পারেন না, তাদের টিকিট ফেরত নেয়ার বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান ও বাস্তবায়ন করা এখন সময়ের দাবি। তাহলে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ কমবে বলে আশা করা যায়। হ
লেখক : শিক্ষার্থী, ডিপোমা ইন জার্নালিজম, বিজেম
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা