সত্য বলো সুপথে চলো
- মো: আবু তালেব মিয়া
- ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
লালন শাহর একটি গানের প্রথম লাইনÑ ‘সত্য বলো সুপথে চলো’, একটু অগ্রগামী হয়ে বলছি ‘সত্য বলো, সৎকর্ম করো, সুপথে চলো।’ এর ব্যাখ্যা হচ্ছে মহান সৃষ্টিকর্তা পরম করুণাময় আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন কেবল তারই এবাদত করার জন্য। মানুষের কিছু জৈবিক চাহিদাও রয়েছে, সেটা পূরণ না করলে তো মানুষ অচল হয়ে পড়বে। মানুষের জন্য মানবতার মহান নেতা সর্বশ্রেষ্ঠ ও মহানবী হজরত মোহাম্মদ মোস্তফা সা:-এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির মুক্তির জন্য পাঠিয়েছেন মহাপবিত্র আল কুরআন। সে অনুযায়ী প্রত্যেক মানুষ যদি জীবন যাপন করে, তাহলে কার্যত ২৪ ঘণ্টাই আল্লাহর এবাদতে মশগুল থাকা হয়ে যাবে। আর এই কুরআন অনুযায়ী চলার মানে হচ্ছেÑ ‘সত্য বলো, সৎকর্ম করো, সুপথে চলো।’ মানুষকে আল্লাহ মিথ্যা কথা বলা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। মানুষ যদি মিথ্যা কথা বলা বর্জন করতে পারে, তাহলে সে অনেক অপকর্ম করা থেকে সরে আসতে পারবে। মিথ্যা কথা হচ্ছে সকল পাপের মা। ঝগড়া-বিবাদ, খুনখারাবি, বন্ধুবান্ধবের সাথে শত্রুতা সৃষ্টি হওয়ার মূলে মিথ্যা কথার রয়েছে বড় রকমের ভূমিকা। মিথ্যা কথা বর্জন করার জন্য আল্লাহর কঠোর নির্দেশ অবশ্যই পালন করতে হবে। এরপর বলছি সৎকর্মের বিষয়ে। মানুষ জীবিকা অর্জনের জন্য কর্ম করবে, এটাই আল্লাহর হুকুম। বার্ট্রান্ড রাসেল বলেছেনÑ ‘অ্যান আইডল ব্রেইন ইজ দ্য ডেভিলস ওয়ার্কশপ’। অর্থাৎ অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। মানুষকে শয়তানের হাত থেকে বেঁচে থাকার জন্যই আল্লাহ সৎকর্ম করার নির্দেশ দিয়েছেন। সৎকর্মে লিপ্ত থাকলে মানুষ অন্যায় কাজকর্ম করার সময় পাবে না। ফলে শয়তান তার ধারে-কাছেও ঘেঁষতে সাহস পাবে না। এতে সে সর্বপ্রকার ঝগড়া-বিবাদ থেকে রক্ষা পেয়ে যাবে এবং হালাল উপার্জনে তার সংসার চলবে। এতে করে তার সংসারের অভাব দূর হবে, সন্তানসন্ততি সৎ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে, মানুষের শ্রদ্ধার পাত্রে পরিণত হবে, পরকালে আনন্দের সাথে চিরশান্তির আবাসস্থল জান্নাতে পৌঁছে যাবে। ভয়ের কোনো বালাই থাকবে না ইহকাল ও পরকালে।
প্রবাদ আছেÑ ‘দুষ্ট গরুর থেকে শূন্য গোয়াল ভালো।’ এর মূল অর্থ ভালো বন্ধু না পেলে বন্ধুহীন থাকা উত্তম। কারণ ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।’ এ জন্যই সুপথে চলতে হলে প্রথমেই চলতে হবে ভালো মানুষদের সাথে। ভালো মানুষের সঙ্গ ধরতে না পারলে, ওই যে রবীন্দ্রনাথ বলেছেনÑ ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে’। ভালো মানুষ না পেলে মন্দদের সাথে চলার থেকে বরং একলা চলাই উত্তম। তাই আগে মানুষ চেনার চেষ্টা করতে হবেÑ যাচাই করার ফর্মুলা হিসেবে ধরতে হবে লোকটি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে কি না, রোজা রাখে কি না, সত্য কথা বলে কি না, সাধ্যমতো দরিদ্রদেরকে সাহায্য করে কি না, সুদ-ঘুষ থেকে মুক্ত, অপকর্ম থেকে দূরে, গিবত ও জিনা বর্জনকারী এবং পরদ্রব্য আত্মসাৎ করা থেকে মুক্ত কি না ইত্যাদি। এ কাজগুলো থেকে যদি দূরে থাকে তাহলেই ধরে নিতে হবে লোকটি ভালো। তার সাথে চলাফেরা করলে সুপথেই চলা যাবে। এ নিয়মে জীবন চালালে ইবাদত কবুলের যে শর্ত হালাল রিজিক, তা গ্রহণ করা সম্ভব হবে।
এরপর আসি মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের উপায় খুঁজতে। সত্য বলো, সৎকর্ম করো, সুপথে চলো-এর সুফল হিসেবে জীবনকে গঠন করার একটি সঠিক দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে। কিন্তু শুধু জীবনকে গঠন করে তৃপ্ত হয়ে বসে থাকলেই চলবে না। প্রকৃত মুমিন বান্দা তার প্রভুর সান্নিধ্য লাভ না করে কিছুতেই তৃপ্ত হতে পারে না। আর প্রভু অর্থাৎ মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করতে হলে সেই ‘কোথায় আছেরে দীনদরদি সাঁই, চেতন গুরুর সঙ্গ লয়ে খবর করো ভাই’-এর স্মরণ করতে হবে। অর্থাৎ স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করতে হলে একজন জাগ্রত আত্মার গুরু খুঁজে তার নির্দেশ মতো অগ্রসর হতে হবে। এ বিষয়ে প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মহান আধ্যাত্মিক সাধক হজরত ইমাম গাজ্জালী র: বলেছেন একজন পীর ধরতে। তাকে হতে হবে নির্লোভ, নিরহঙ্কার, বয়স্ক, শিক্ষিত, মানবতার কল্যাণে নিবেদিত একজন আদর্শ মুমিন। তাহলেই স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করা সম্ভব। তাই প্রত্যেক মানুষকে হতে হবে সত্যবাদী, মিথ্যা বর্জনকারী, হালাল উপার্জনকারী, হারাম বর্জনকারী সুদ, ঘুষ, লুট, চাঁদাবাজি ইত্যাদি ত্যাগ করে সৎকর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করতে হবে এবং আল্লাহ ও নবী করিম সা:-এর নির্দেশিত সুপথে চলতে হবে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের সরকারি কাজে যারা জড়িত তাদের সবাইকেই অবশ্যই নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে। দুনিয়ার জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। এর পরে যে আখেরাতের জীবন রয়েছে, তা অনন্ত। ওই অনন্ত জীবনের পাথেয় সংগ্রহ করার জন্যই এই সংক্ষিপ্ত জীবনে সৎকর্ম করে সুপথে তথা আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ মেনে চললেই অনন্তকালের শান্তি ও মুক্তির আশা করা যেতে পারে। আর এ বিষয়টি বিশেষত, সব মুসলিম রাষ্ট্রের নেতাদের জন্য মেনে চলা একান্তই অপরিহার্য। কথায় কথায় মিথ্যা বলা ব্যক্তিদের অবশ্যই বর্জন করতে হবে। নিয়োগবাণিজ্যের মতো অন্যায় কাজের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ উপার্জন ত্যাগ করতে হবে। ক্ষমতার দাপটে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া বন্ধ করতে হবে। আল্লাহ কাউকেই ছাড়বেন না।
আর মৃত্যুর স্বাদ সবাইকেই আজ হোক কাল হোক অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। প্রতিশোধ-পরায়ণতা, হিংসা ও স্বেচ্ছাচারিতা ঝেড়ে ফেলে জীবন যাপন করলেই কেবল মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
লেখক : কবি ও গীতিকার, ভাঙ্গা, ফরিদপুর
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা