০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

ঘুষ দিলে মেলে অধিকার

-

‘রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ’ এমন নীতিবাক্য লেখা রয়েছে দেশের প্রতিটি কারাগারের প্রধান ফটকে। কিন্তু কারা অভ্যন্তরে বন্দীরা কতটুকু দেখে আলোর পথ, কেবল ভুক্তভোগীরাই তা বুঝতে পারেন। কারাগারে দুই ধরনের বন্দীদের বসবাস। হাজতি ও কয়েদি। যাদের মোকদ্দমার রায়ে শাস্তি সাব্যস্ত হয়েছে এবং সে অনুযয়ী কারাভোগ করছেন; তাদের বলা হয় কয়েদি। বিচারাধীন কারাবন্দীদের বলা হয় হাজতি।
কারাবন্দীদের মানবিক আচরণ পাওয়া তার মৌলিক অধিকার। দেশের সংবিধানের ৩৩ নম্বর অনুচ্ছেদে আটক ব্যক্তির অধিকার সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। এ ছাড়াও International covenant on civil and political rights- এর ১০ নম্বর অনুচ্ছেদে আটক ব্যক্তির অধিকার স্বীকৃত হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তিকে আটক হওয়ার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে (যুক্তিসঙ্গত কারণে বিলম্ব ব্যতীত) আদালতে সমর্পণ করতে হবে। কারাগারে তার আবাসন, আহার, চিকিৎসা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ইত্যাদির সুব্যবস্থা করতে হবে। অভিযুক্তদের অপরাধ প্রমাণের আগে তাদের নিরাপরাধ বলে ধরে নিতে হবে। হাজতি ও কয়েদি এবং কিশোর অপরাধী ও বয়স্কদের বা নারীদের পৃথক রাখতে হবে। সুতরাং এসব আটক ব্যক্তির অধিকার।
কিন্তু দেশের বেশির ভাগ কারাগারে বন্দীদের সাথে অমানবিক আচরণ করা হয় বলে অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। হামেশা লঙ্ঘন করা হচ্ছে তাদের এসব অধিকার। অধিকার আদায়ে আইনের দোহাই সেখানে অকার্যকর; বরং ঘুষ দিলে সবই কার্যকর। বাইরে চলে ক্যাশ টাকা আর ভেতরে চলে বিভিন্ন ধরনের ‘বিশেষ মুদ্রা’। সিগারেট হলো, এখানকার অন্যতম বিনিময় মুদ্রা।
নতুন বন্দী গেলে প্রথমে তার স্থান হয় আমদানিতে। সেখান থেকে তার আবাসন নির্ধারণ হয়। একজন বন্দীর কোথায় এবং কোন মানের শয্যা বরাদ্দ হবে তা নির্ভর করে ম্যাট এবং রাইটারদের কি পরিমাণ ‘মুদ্রা’ দেয়া হয়েছে তার উপর। এর অংশ চলে যায় সুবেদার হতে জেলার পর্যন্ত। অসুস্থ ব্যক্তি ওয়ার্ডে কাতরালেও টাকার জোরে মাসের পর মাস হাসপাতালের শয্যায় থাকে সুস্থ-সবল রাঘব বোয়ালরা।
কারাগারের সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী প্রতি ১৫ দিনে একদিন স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ লাভের সুযোগ পাবে হাজতিরা। সাক্ষাতের জন্য নির্দিষ্ট রয়েছে ‘সাক্ষাৎ ঘর’। এ যেন আরেক নির্মমতা! সাক্ষাতের সময় ২০ থেকে ৩০ মিনিট। স্বজনদের খুঁজে পেতে পেতেই পার হয়ে যায় অর্ধেক সময়। কখনো ভিড়ের মধ্যে অনেকের দেখাই মেলে না। দেখা হলেও কথা বলতে হয় অন্তত পাঁচ ফিট দূরত্বে দাঁড়িয়ে। মাঝে চার-পাঁচ স্তরের লোহার শিক। চিৎকার দিয়ে প্রিয়জনকে প্রয়োজনীয় কথা বা প্রাণের কথা শোনাতে মরিয়া সবাই। কিন্তু শত-সহস্র স্বরের মধ্যে জমানো কথাগুলো অব্যক্তই রয়ে যায়।
বিকল্প ব্যবস্থাও রয়েছে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে। অফিস কল। বন্দীর সাথে একান্তে আলাপের বিশেষ ব্যবস্থা। এ বিশেষ ব্যবস্থার জন্য গুণতে হয় বিশেষ ‘হাদিয়া’। এক শ’ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়ে থাকে। এ টাকা ভাগে ভাগে চলে যায় সংশ্লিষ্ট সবার পকেটে। কারাগারে বন্দীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার কথা। অপরাধপ্রবণ মানসিকতা পরিহার করানো ও কর্মদক্ষতা সৃষ্টি করার কথা। এ জন্য নৈতিক ও কারিগরি প্রশিক্ষণের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে বন্দীরা আলোর পথের দেখা আর পায় না। বরং যে ছোট অপরাধের দায়ে জেলে যায় বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, সে আরো বড় অপরাধ করার হিম্মত নিয়ে বের হয়।
দেশের ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার আর ৫৫টি জেলা কারাগার মিলে বন্দী আছে প্রায় ৮০ হাজার। যাদের ৮১ শতাংশ বিচারাধীন। যাদের বিরুদ্ধে এখনো সুস্পষ্ট কোনো অপরাধ প্রমাণ হয়নি। তার মধ্যে রাজনৈতিক মামলা, ‘গায়েবি মামলা’ কিংবা মিথ্যা মামলায় বিপন্ন হয়েছে হাজার হাজার পরিবার। কারাগারের ভেতরে-বাইরে, নামে-বেনামে ঘুষ দিতে গিয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে এসব পরিবার।
অভিযুক্ত কিংবা অপরাধী প্রত্যেকেই মানুষ। তাদেরও মানবাধিকার রয়েছে। রয়েছে আইনের সমান সুযোগ লাভের অধিকার। সে অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে প্রতিটি কারারুদ্ধ নিরুপায় মানুষকে। কারাবন্দীরা অতিরিক্ত না হোক; নির্ধারিত অধিকারটুকু যেন পান নির্বিঘেœ। কারাগার যেন পরিণত হয় অপরাধীদের শোধনাগারে। হ
লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।


আরো সংবাদ



premium cement
আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিককে পঙ্গু করে রেখেছিল : ড. মাসুদ সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্রের বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ৩ পল্লী উন্নয়ন অ্যাকাডেমি থেকে বাদ গেল শেখ পরিবারের নাম বইমেলায় ৮ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি সময় পরিবর্তন হচ্ছে, থাকছে না শিশুপ্রহর রাখাইন স্টেট : ঘুমধুমে স্থলবন্দর করার চিন্তা করছে সরকার ফ্যাসিবাদ উৎখাত করেছে ছাত্ররা আর তাদের সাহস জুগিয়েছেন শিক্ষকরা মশিউর রহমানের নতুন বই ‘টেকসই সমৃদ্ধিতে আল-কুরআনের দর্শন’ পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এপ্রিলে ঢাকা সফর করতে পারেন : তৌহিদ আ’লীগের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতার আগুন প্রবীণ সাংবাদিকদের জন্য মাসিক ভাতা আগামী বছর থেকে : মুহাম্মদ আবদুল্লাহ শেখ হাসিনার ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে অনুসন্ধান করবে দুদক

সকল