০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ৭ শাবান ১৪৪৬
`

টেকসই উন্নয়নে নতুন উদ্যোক্তা

-

বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। দেশের ১৭ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে উচ্চশিক্ষিত বেকার প্রায় ২৫ লাখ। এ সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। বলতে গেলে বেকারত্বের হার বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। প্রতি বছর গড়ে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী বিএ, এমএ পাস করে বেকারের খাতায় নাম লেখাচ্ছেন। এ জন্য দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা অনেকাংশে দায়ী। আজ আমাদের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেকার তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ এখন টেকসই উন্নয়নের মহাসড়কে দাঁড়িয়ে আছে। তবে এ বিপুলসংখ্যক যুবক বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে কতটুকু টেকসই উন্নয়নের ভূমিকা পালন করবে তা এটি বড় প্রশ্ন। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় নতুন উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। কিন্তু দেশে নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা আর প্রতিকূলতা। আলোচ্য কলামে টেকসই উন্নয়ন ও নতুন উদ্যোক্তার প্রতিবন্ধকতাগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করা হবে।
প্রথমত, নতুন উদ্যোক্তাদের কাছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুঁজি থাকে না। পুঁজি সংগ্রহ করতে গিয়ে নতুন উদ্যোক্তারা পেরেশান হয়ে যান। আমাদের ব্যাংকগুলোও সৃষ্টিশীল কোনো কাজে অর্থায়ন বা ঋণ দিতে উৎসাহী নয়। ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া নবীন উদ্যোক্তাদের জন্য একটি কঠিন কাজ।
দ্বিতীয়ত, আমাদের সামষ্টিক একটি সমস্যা হলোÑ কেউ ভালো কিছুর উদ্যোগ নিলে আমরা তা মেনে নিতে পারি না। নতুন উদ্যোক্তাদের এটি একটি প্রধান প্রতিবন্ধকতা। সমাজে কাউকে সৃষ্টিশীল কাজে ইতিবাচক পরামর্শ দেয়ার নজির খুব কম। কোনো কাজ শুরুর আগে আদাজল খেয়ে তার সমালোচনা আর নেতিবাচক মন্তব্য করতে আমরা খুব ভালোবাসি। নেতিবাচক মন্তব্য উৎসাহী বেশির ভাগ উদ্যোক্তাকে নিরুৎসাহিত করে। এভাবে শুরুতেই একজন নতুন উদ্যোক্তা হতাশ হয়ে পড়েন। অথচ ওই নতুন উদ্যোক্তার গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানে শতাধিক বেকারের কর্মসংস্থান হতে পারত। আমাদের নেতিবাচক মন্তব্যে গোড়াতেই তা ভণ্ডুল হয়ে যায়।
তৃতীয়ত, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও অসহযোগিতা। আমাদের দেশে যখন কোনো নতুন কাজের উপায় উদ্ভাবন করা হয়; তখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রশাসনিক জটিলতায় পড়ে। চতুর্থত, সব পেশাকে সমান চোখে না দেখা। আমরা মুখে যতই বুলি কপচাই না কেন, প্রতিটি কাজকে এখনো শ্রদ্ধার চোখে অভ্যস্ত হয়ে উঠিনি। এটি আমাদের একটি দৃষ্টিভঙ্গিগত সম্যা। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এমন, উচ্চশিক্ষিত সবাইকে বড় চাকরি করতে হবে। নইলে প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা মূল্যহীন।
পঞ্চমত, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির অনুপস্থিতি। কেউ ব্যতিক্রমী কিছু করবে তা অকল্পনীয়। ষষ্ঠত, ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতার অভাব। অনেকে বড় কিছু হতে চান। কিন্তু ঝুঁঁকি নিতে সাহস রাখেন না। অথচ আমাদের সবার জানা, ব্যতিক্রমী কিছু করতে ঝুঁঁকি নিতে হবে। আমরা কি কখনো এ রকম ভেবে দেখছিÑ কেউ চাইলে বেকারত্ব ঘোচাতে পারেন। হতে পারে তা কুটির শিল্পের ছোট্ট একটি দোকান কিংবা শোপিসের শোরুম। যারা একটু তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে ভালোবাসেন; তারা দিতে পারতেন কম্পিউটার বা মোবাইলের দোকান কিংবা সার্ভিসিং সেন্টার। সৃজনশীল যারা আছেন, তারা ফ্যাশন হাউজ বা তৈরী পোশাকের দোকান। অনেকের প্রিয় খাবার চটপটি ফুচকা। এর দোকান দিয়ে কেউ বেকারত্ব অনায়াসে ঘোচাতে পারেন। অথবা ফাস্টফুডের দোকান দেয়া যেতে পারে। এসব ব্যবসায় খুলতে তেমন পুঁজির দরকার পড়ে না। আর গ্রামের কেই শুরু করতে পারেন নিজের জমিতে সবজি কিংবা ফুলের চাষ। এ ক্ষেত্রে নিজের জায়গা না থাকলে অন্যের জমি লিজ নেয়া যেতে পারে। করা যেতে পারে মজা-পচা পুকুর পরিষ্কার করে মাছ চাষ। পাশের বাজারে বা হাটে ফসল কেনাবেচার ব্যবসায় করা যেতে পারে। উন্নত প্রযুক্তির সেবা কৃষকদের সরবরাহ করেও হওয়া যেতে পারে সফল ব্যবসায়ী। যা তরুণদের দিতে পারে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি। হতে পারেন যে কেউ সফল উদ্যোক্তা।
একটি দেশের মোট জনসংখ্যার বিরাট একটি অংশ নিষ্ক্রিয় হলে সে জাতির পক্ষে কী উন্নয়নের চরম শিখরে যাওয়া সম্ভব? দেশে যদি ছোট ছোট উদ্যোগের মাধ্যমে বেকারত্ব ঘোচানো না যায়, তা হলে আমাদের জাতীয় অর্থনীতির শক্ত পাটাতন হবে না। তাই টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে চাই ছোট ছোট নতুন উদ্যোগ। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement