০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ৭ শাবান ১৪৪৬
`

সন্তানের পছন্দ-অপছন্দ

-

সন্তানের জন্মের পর থেকে বাবা-মা অনেক কষ্ট করে তাকে লালন-পালন করেন। সন্তান যখন পরিণত বয়সে উপনীত হয়, তখন তার নিজস্ব চিন্তাশক্তি, ভালোলাগার অনুভূতি প্রভৃতি তৈরি হয়। কারো গান গাইতে ভালো লাগে, কেউবা ছবি আঁকতে ভালোবাসে; কেউ আবৃত্তি করতে পছন্দ করে; কেউ ছড়া, কবিতা, গল্প লিখতে ভালোবাসে; কারো স্বপ্ন থাকে খেলোয়াড় হওয়ার। কিন্তু আমাদের বাবা-মায়েরা অনেক সময় সন্তানের এসব ইচ্ছাকে কোনো গুরুত্ব দিতে চান না।
অভিভাবকেরা মনে করেন, জীবনে ‘প্রতিষ্ঠিত’ হতে হলে একমাত্র পথ পড়ালেখা শেষে চাকরি করা। শিশুদের যে একটি মন রয়েছে, তাদের যে কিছু চাহিদা থাকতে পারে; তা যেন বাবা-মারা ভুলে যান। সন্তানকে প্রতিষ্ঠিত করতে অভিভাবকদের চেষ্টার কমতি থাকে না। এসব নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত চেষ্টার ফলে শিশুমনে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে কি না, তা দেখার সময় যেন নেই। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে তাড়াহুড়া করে নাশতা করিয়ে নিজের ওজনের চেয়েও ভারী বইয়ের ব্যাগ ঘাড়ে চাপিয়ে সন্তানকে পাঠানো হয় স্কুলে। দুপুরে বাসায় এসে তড়িঘড়ি গোসল ও খাওয়ার পর শুরু হয় কোচিংয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি। সন্ধ্যায় গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে বসা বাধ্যতামূলক। শৈশব থেকে এমন চাপে শিশুমনের পরিপূর্ণ বিকাশ হতে পারে না। পড়ালেখার চাপে শিশুদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের পথ খোলা থাকে না। এভাবেই ‘হত্যা’ করা হয় অসংখ্য সম্ভাবনাময় প্রতিভাকে।
ক্যারিয়ার নিয়ে সন্তানের কাছে কখনো জানতে চাওয়া হয় না, সে বড় হয়ে কী হতে চায়? মা-বাবা বাল্যকাল থেকে সন্তানকে শেখাচ্ছেন, ভবিষ্যতে সে কী হবে। তারাই ঠিক করে দেন সন্তান ডাক্তার নাকি ইঞ্জিনিয়ার হবে। জন্মের পর থেকে সন্তানকে যেন কেবল বাবা-মায়ের সাধ পূরণের গল্পই লিখে যেতে হয়। বাবা-মায়ের জেদের কাছে সন্তানের নিজের স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যায়। বিশেষ করে এটা ঘটে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে। হয়তো সন্তানের ইচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার; কিন্তু বাবা-মায়ের সিদ্ধান্ত, সন্তানকে প্রকৌশলী বা চিকিৎসক বানাবেন। বাধ্য হয়ে সে মেডিক্যালের জন্য ভর্তি প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। সে সরকারি মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ না পেলে কোনো বেসরকারি মেডিক্যালে তাকে ভর্তি হতে হয়। কারণ, ছেলেকে ডাক্তার বানাতেই হবে। এটি শুধু একটি উদাহরণ মাত্র। একটি উপদেশ আছেÑ ‘আত্মার স্বাধীনতা যদি খর্ব করা হয়, দুনিয়ার সব ধন-দৌলত সেখানে তুচ্ছ।’ তাই সন্তানের ইচ্ছা-অনিচ্ছার দিকে অভিভাবকের খেয়াল রাখা জরুরি। মনে রাখা প্রয়োজন, আত্মার স্বাধীনতাই পরম প্রশান্তি। হ
লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া


আরো সংবাদ



premium cement