০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ৭ শাবান ১৪৪৬
`

আত্মহত্যা নয়, আত্মরক্ষা প্রয়োজন

-

দেশে দেশে আত্মহত্যার মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, তরুণ-তরুণী এবং ৩৫ বছরের নিচে যাদের বয়স, তারাই বেশি আত্মহত্যা করছে। পত্রিকা, টেলিভিশনে চোখ পড়লেই দেখা যায় আত্মহত্যার খবর। এ দেশে আত্মহত্যার সঠিক কোনো তথ্য না থাকলেও একটি বিষয় পরিষ্কার, তরুণ-তরুণীরা আত্মহত্যার পথে বেশি ঝুঁকে পড়ছে।
আত্মহত্যার আগে জীবনকে মূল্যহীন মনে করা হয়। এ চিন্তা থেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এর পেছনে রয়েছে বহু কারণ। হতাশা, দারিদ্র্য, পরিবার থেকে বিচ্ছেদ, বিয়ের ভাঙ্গন, প্রেমে ব্যর্থতা, বেকারত্ব, পরীক্ষায় অকৃতকার্যতা, আশানুরূপ বৈষয়িক উন্নতি করতে না পারা, মাদকাসক্তি প্রভৃতি আমাদের দেশে আত্মহত্যার উল্লেখযোগ্য কারণ।
একজন ব্যক্তি যখন হতাশায় ভোগেন, তখন সব কিছুই তার কাছে বিস্বাদ লাগে। ভালো-খারাপ কোনো কিছুরই বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষমতা তখন থাকে না। নিজেকে একজন ব্যর্থ মানুষ মনে করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় অনেকে। দেশের বেশির ভাগের জীবন অর্থনৈতিক সঙ্কটে হয়ে ওঠে জটিল। পরিবারের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়ে অনেকে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। সব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এমন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে কেউ কেউ।
পরিবার অতীব গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রতিষ্ঠান। আগে বাবা-মা, ভাই-বোন, দাদা-দাদী, চাচা-চাচী এবং তাদের সন্তানদের নিয়ে ছিল পরিবার। বর্তমানে যৌথ পরিবার খুব একটা দেখা যায় না। এগুলো ভেঙে একক পরিবার তৈরি হচ্ছে। বাবা-মা সন্তানদের থেকে দূরেই থেকে যান। অনেক সময় সন্তানও বাবা-মা থেকে আলাদা হয়ে যায়। এ কারণে অনেক সময় মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হয় এবং অনেকে একাকিত্বে ভোগে। ফলে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ে। বিচ্ছেদ বা স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্যও মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করে। নিঃসঙ্গতা তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয়। অনেকে মনে করেন, নিঃসঙ্গতা থেকে মুক্তি পেতে আত্মহননই শ্রেয়। তরুণ-তরুণীরা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যায় কথিত সমাধান খোঁজে।
জীবন হচ্ছে অমূল্য। তাই আবেগপ্রবণ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া মোটেও ঠিক নয়। মনে রাখতে হবে, সব সমস্যারই সমাধান আছে। জীবন বিনাশ করা হলে সমস্যার সমাধান হয় না। অন্যদেরও ভালো রাখা যায় না। ‘আমি আত্মহত্যা করব, বাঁচতে চাই না, এ জীবন ব্যর্থ, সব কিছুর জন্য আমিই দায়ী’Ñ এমন চিন্তা যখন কাউকে গ্রাস করে; তখনই সে আত্মহত্যার পথে এগোতে থাকে। এসব কথা কারো কাছ থেকে শুনলে তাকে অবশ্যই ভালো পরামর্শ দিতে হবে। সুপরামর্শের মাধ্যমে তার মনোজগতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করতে হবে। হয়তো এতে কেউ আত্মহত্যা থেকে বিরত হতে পারে। পরিচিতদের সাথে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করলে তার ফল ভালো হয়ে থাকে। আত্মহত্যা থেকে রেহাই পেতে হলে ধর্মগ্রন্থ বেশি পড়া জরুরি। কেননা, ধর্মের মূল বাণী হচ্ছে, মানুষের কল্যাণ ও শান্তি। হ
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

 


আরো সংবাদ



premium cement