জাতীয় মসজিদ ও মুসল্লিদের সমস্যা
- মো: তোফাজ্জল বিন আমীন
- ০২ জুলাই ২০১৯, ০০:০০
বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম নিয়ে একটি লেখা কিছু দিন আগে একটি দৈনিক পত্রিকায় পড়লাম। লেখাটির শিরোনাম ছিল ‘নারী মুসল্লিদের সুখ-দুঃখ’। নারীর জীবন ও ইজ্জত নিয়ে আমরা সবাই শঙ্কিত। প্রতিনিয়ত হত্যা, গুম, খুন, ধর্ষণ আর নারীর প্রতি নিষ্ঠুরতার লোমহর্ষক ঘটনা পত্রিকার পাতায় চোখ বুলালে দেখা যায়। অপর দিকে, ‘মসজিদের শহর’ নামে খ্যাত ঢাকায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে শত শত মহিলা মুসল্লি তারাবিহ ও কিয়ামুল লাইল নামাজে শরিক হচ্ছেন। এ বিষয়টি হাজারো বেদনার মধ্যে একটি প্রস্ফুটিত গোলাপের মতো, যা আমাদের প্রেরণার উৎস। মসজিদের সাথে আমাদের হৃদয়ের সম্পর্ক। এ সম্পর্ক মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে। যা হোক, বায়তুল মোকাররম সম্পর্কে যখন নেতিবাচক কিছু শুনি তখন মনে দাগ কাটে। জানতে পারলাম নারী মুসল্লিদের খাবারের জায়গার সমস্যার কথা। স্বাভাবিকভাবেই রাতের খাওয়া এবং সাহরি তাদের মসজিদেই করতে হয়েছে। সুতরাং তাদের খাবারের স্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া অতি প্রয়োজনীয়। মসজিদের ভেতর জায়গা না থাকায় তারা কখনো ভেতরে, কখনো বারান্দায় খেয়েছেন। ভেতরে খেলে আপত্তি যে, মসজিদ নোংরা হয়। কর্তৃপক্ষ খাবারের ব্যাপারে ভালো করে ব্যবস্থা করবেন বলে আশা করি। কর্তৃপক্ষ নারী মুসল্লির সাহরির ব্যবস্থা নিজেরাও করতে পারেন।
ভালো আচরণ বা ব্যবহার সবাই অন্যের কাছে প্রত্যাশা করে কিন্তু অনেকে নিজে ভালো আচরণ অন্যের সাথে করেন না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। যারা আল্লাহর ঘরের খাদেম তাদের আচরণ সুন্দর হওয়া প্রয়োজন। লেখায় বলা হয়েছে যে, তাদের ব্যবহার ভালো নয়। আমরা আশা করি, নারী খাদেমের ব্যবস্থা করা হবে। তাদের আচরণ সুন্দর করতে কর্তৃপক্ষ ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারেন। ইতিকাফে যারা বসেছিলেন তাদের অধিকাংশ বয়স্ক। মনে রাখতে হবে, মানুষ যখন বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়ে তখন মেজাজ একটু গরম থাকে। এটা প্রকৃতির রীতি বা নিয়ম। এটা সবাইকে মানতে হবে। বয়স্ক নারী মুসল্লিদের সেবা করার মনমানসিকতা খাদেমদের থাকা উচিত।
যেসব মহিলা কষ্ট করে বায়তুল মোকাররম মসজিদে তারাবি ও কিয়ামুল লাইল পড়েন তাদের দিকে দৃষ্টি দেয়া খুবই প্রয়োজন। মাননীয় ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর বেগম সাহেবাও কিয়ামুল লাইল পালন করেন, যা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। যে দেশের মন্ত্রী-এমপির স্ত্রীর দাপটের খবর পত্রিকার পাতায় মুদ্রিত হয় সে সমাজে একজন মন্ত্রীর স্ত্রী কিয়ামুল লাইলের নামাজ পড়েন, তা সত্যিই প্রশংসার বিষয়। পুরুষ মুসল্লিদের সমস্যা এত প্রকট নয়। কারণ তারা চাইলেই ফজরের কিংবা তারাবি নামাজ শেষ হওয়ার পর চলে যেতে পারেন। কিন্তু নারী মুসল্লিরা ইচ্ছে করলেই তা পারেন না। নিরাপত্তার কারণে এটা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এ কথা বিশেষ করে মনে রাখতে হবে। ২০ থেকে ২৭ রোজা পর্যন্ত, কিয়ামুল লাইল নামাজ পড়ার জন্য অনেকে খতমে তারাবি নামাজ পড়ে মসজিদেই রাত যাপন করেছেন। এমনকি অনেক মুসল্লি অফিস করে সরাসরি মসজিদে চলে এসেছেন। অনেকে ফজরের নামাজ পড়ে মসজিদে একটু ঘুমিয়ে অফিস করেছেন। তাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো হতো। অনেকে খাবারের ব্যবস্থা না করতে পেরে শুধু খেজুর খেয়েই রোজা রেখেছেন। মসজিদের ভেতরেই রমজানের রোজা উপলক্ষে, বিশেষ করে কিয়ামুল লাইলের রাতগুলোতে মানসম্মত খাবারের ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ করতে পারেন।
ফজরের পর সকাল ৭টা পর্যন্ত মসজিদের গেট খোলা থাকে। কিন্তু ৭টার পরপরই ১০টা পর্যন্ত গেট বন্ধ থাকে। এতে অনেকেই সময়মতো অফিসে যেতে পারেন না। সারা রাত জেগে নামাজ পড়ার পর একটু না ঘুমালে ঘুম থেকে উঠতে শরীর আর মন সায় দেয় না। এ কারণে অনেকে ৮টা কিংবা সাড়ে ৮টার দিকে বের হন। কিন্তু মসজিদের গেট বন্ধ থাকার কারণে তাদের সকাল ১০টা পর্যন্ত মসজিদেই বসে থাকতে হয়। এদিকে অফিসে দেরি হয়ে যায়। আর প্রতিদিন তো অফিসে দেরি করে যাওয়া যায় না। আশা করি, এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করবেন। বায়তুল মোকাররম কর্তৃপক্ষের উচিত বিশেষত মহিলাদের ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত বই এক সেট করে উপহার দেয়া যাতে করে তারা ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারেন এবং ইসলামের সেবক হতে পারেন। আমরা আশা করব, বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করবেন এবং আমাদের মা-বোনদেরকে ইসলামের প্রচারক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করবেন। হ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা