০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ৭ শাবান ১৪৪৬
`

সীমান্ত হত্যা বন্ধ হবে কবে

-

পত্র-পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই যুবক নিহত, তিন গরু ব্যবসায়ীকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, দুই দিন পরে তাদের লাশ ফেরত পাঠায়। কিন্তু কেন? প্রতিবেশী দেশের আচরণ কি এমন হওয়া উচিত? ভারতের উচ্চপর্যায় থেকে বারবার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যা বন্ধ হয়নি। এমনকি সীমান্ত হত্যা বন্ধে কোনো দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারেনি ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
উভয় দেশের মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, বন্ধুরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার এ ধরনের উদাহরণ খুব কম। ভারতের সাথে বোঝাপড়ায় কোথাও কোনো কমতি থেকে যাচ্ছে। আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে যদি প্রতিবেশীর সাথে সমস্যার সমাধান না করা যায়, তাহলে জাতিসঙ্ঘে যাওয়ার বিকল্প নেই। ২০০৮ সালে ভারত সরকার ও বিএসএফ বাংলাদেশের জনগণকে আশ্বস্ত করেছিল, সীমান্তে প্রাণঘাতী কোনো অস্ত্র ব্যবহার করা হবে না। ২০১১ সালে বিএসএফ এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) পাচারকারী ও অবৈধপথে সীমান্ত পার হওয়া নাগরিকদের ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করার চুক্তিও করে। ভারত সরকারের উচ্চপর্যায় থেকেও সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার কথা বারবার বলা হয়েছে। এরপরও চলছে সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩ সালে মোট ২৭ বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে বিএসএফ সদস্যরা। এদের মধ্যে ১২ জনকে গুলি করে এবং ১৪ জনকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। ২০১৪ সালে হত্যা করা হয়েছে ৩৩ বাংলাদেশীকে। ২০১৫ সালে হত্যা করা হয় ৪২ জনকে, সে বছর তাদের নির্যাতনে আহত হন ৬৮ জন, ২০১৬ সালে তা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বিএসএফ ১৮ জনকে হত্যা করে।
বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০০১-১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সীমান্তে বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকদের হাতে মারা গেছেন ৯৩৬ বাংলাদেশী। এর মধ্যে বিএসএফের হাতে ৭৬৭ জন ও ভারতীয়দের হাতে ১৬৯ জন বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন।
বিজিবির দেয়া তথ্য অনুসারে আরো জানা যায়, ২০০৯ সালে ৬৭ জন, ২০১০ সালে ৬০ জন, ২০১১ সালে ৩৯ জন, ২০১২ সালে ৩৪ জন, ২০১৩ সালে ২৮ জন, ২০১৪ সালে ৪০ জন, ২০১৫ সালে ৪৫ জন, ২০১৬ সালে ৩১ জন এবং ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২১ জন নিহত হয়েছেন। পাকিস্তান ও নেপালের সাথেও তো ভারতের সীমান্ত আছে, সেখানে তো এসব হচ্ছে না। বাংলাদেশ সীমান্তে কেন হচ্ছে? বাংলাদেশের বন্ধু ও প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। কিন্তু বহুল আলোচিত সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। দুই দেশের সীমান্তে নিয়োজিত বাহিনীগুলোর মধ্যে ঘন ঘন পতাকা বৈঠক এবং বিজিবি ও বিএসএফের নিয়মিত শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বরং বাংলাদেশীদের হত্যাকাণ্ড ঘটেই চলেছে। বাংলাদেশের নাগরিকেরা অপহরণেরও শিকার হচ্ছেন।
ফেলানী হত্যা ঘটনার পরেও বিএসএফ দায়মুক্তির সুযোগ পেয়েছে। বিচার এমনভাবে হয়েছে, দায়মুক্তি প্রতিষ্ঠিত করেছে। এক দিকে ফেলানীর মামলা নষ্ট হয়েছে, অন্য দিকে রিটটিও সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে আছে। এ ধরনের হত্যা বন্ধে যে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন, তা নেয়া হচ্ছে না। দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা এবং এ সম্পর্কিত চুক্তি অনুযায়ী যদি কোনো দেশের নাগরিক অনুমতি ছাড়া সীমান্ত অতিক্রম করে, তবে তা অনুপ্রবেশ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার কথা। সেই মোতাবেক ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে বেসামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের নিয়ম। গুলি করে নিরস্ত্র মানুষ হত্যা করা কেন? যেখানে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা, মানুষ পাচার এবং চোরাচালান বন্ধে যৌথ উদ্যোগ এবং দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা ও আস্থা বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে দুই দেশ কাজ করছে, সেখানে সীমান্তে গুলি-হত্যা কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত নয়।
মনোবেদনায় ভরে ওঠে যখন দেখি, ফেলানীকে হত্যা করে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখে বিএসএফ, যখন দেখি গরু ব্যবসায়ীকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে বিএসএফ। তাদের বিচার হয় না। দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে সীমান্ত বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা, তবু দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি ভারতের পক্ষ থেকে।
আর কত দিন চলবে এভাবে সীমান্তে হত্যাকাণ্ড? আর কত মায়ের বুক খালি হবে কেউ কি বলতে পারেন? এ বর্বরতার একটা শেষ চাই, এই নৃশংসতার অবসান চাই। হ
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement