আহতদের বেশিভাগই ছাত্র
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৬ আগস্ট ২০২৪, ০৭:০৭
রাজধানী ঢাকার সচিবালয় এলাকায় রোববার (২৫ অগাস্ট) আনসার বাহিনীর সদস্যদের সাথে ছাত্রদের সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া।
'সচিবালয়ে সংর্ঘষের ঘটনায় রাত ১২টায় ৩৫-৪০ জন আহতকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। এরমধ্যে আনসার এবং ছাত্ররা রয়েছে,' তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন।
আহতদের মধ্যে কতজন ছাত্র আর কতজন আনসার জানতে চাইলে বাচ্চু মিয়া বলেন, 'ওইভাবে তো আলাদা করে বলতে পারবো না। তবে, ছাত্র বেশি রয়েছে।'
আহতদের অনেককে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। সংঘর্ষ রাত আনুমানিক ৯.৩০-এ শুরু হয়।
সচিবালয়ে দুই ছাত্র সমন্বয়ক
সংঘর্ষের সময় সচিবালয়ে আটকা পড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ এমারজেন্সি সেন্টারে (ওসেক) ভর্তি করা হয়।
'জরুরি বিভাগের ওসেকে তাকে অক্সিজেন লাগিয়ে রাখা হয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন তার বড় ধরনের কোনো সমস্যা হয়নি,' বাচ্চু মিয়া বলেন।
স্থানীয় সাংবাদিক খালিদ হাসান ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে আনসার সদস্যরা আটকে রেখেছে- এমন খবর পেয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা রাত ৮টার পর থেকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হতে থাকে। রাত ৯টায় সচিবালয়ের উদ্দেশে রওনা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা।
সামাজিক মাধ্যমে ভিডিওতে ছাত্রদের অনেককে এ সময় লাঠি-সোটা বহন করতে দেখা যায়।
ছাত্ররা সচিবালয়ে পৌঁছালে তাদের সাথে আনসার সদস্যদের সংঘর্ষ বাঁধে। দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার একপর্যায়ে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে এবং পুলিশ কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়েছে বলে জানান খালিদ হাসান।
আনসারদের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ
সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ।
সেখানে নাহিদ ইসলাম বলেন, 'আনসারদের হামলায় ৪০ জন আহত হয়েছে৷ চার-পাঁচ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মাথায় আঘাত করা হয়েছে অনেককে।'
তিনি আরো বলেন, 'আজকের ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে পরিকল্পিতভাবে অরাজক পরিস্থিতি তৈরির জন্য। কিন্তু অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করে ছাত্র জনতা রুখে দিয়েছে৷
'যারা এই ষড়যন্ত্রে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে৷ আজকে রাতের মধ্যে গ্রেফতার করা হবে,' নাহিদ ইসলাম বলেন।
সংর্ঘষের সময় আনসারের বাইরেও সিভিল পোশাকে অনেকে ছিল বলেও দাবি করে এই উপদেষ্টা। তিনি বলেন, 'পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে৷'
উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আসিফ মাহমুদ এক ফেসবুক পোস্টে আনসারদের চাকরি জাতীয়করণ দাবীর আন্দোলনকে 'ষড়যন্ত্র' আখ্যায়িত করে তার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেন।
'জুডিশিয়াল ক্যু, পথভ্রষ্ট আনসার বিদ্রোহের উদাহরণের পরেও যদি সাবধান না হোন তবে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে,' তিনি বলেন।
সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ
এই ঘটনার পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সচিবালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন (যমুনা) এর আশেপাশের এলাকায় যেকোনো প্রকার সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা, বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি নিষিদ্ধ করেছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার হতে এই নিষেধাজ্ঞা বলবত হবে।
রেস্ট টাইম প্রথা বাতিল
আন্দোলনরত আনসার সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে ২৫ আগস্ট বিকেলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, 'আনসারদের ৬ মাসের রেস্ট প্রথা আর থাকবে না। এটি বাতিলের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।'
তবে তিনি জানান, তাদের চাকরি জাতীয়করণের দাবি সুপারিশ কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে।
রেস্ট টাইম প্রথা সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আনসার আইনে বলা হয়েছে, একজন আনসার সদস্য টানা তিন বছর কাজ করার পর তাকে ছয় মাসের ছুটিতে পাঠানো হয়। এটাকে রেস্ট টাইম প্রথা বলা হয়। তারা ছয় মাস পর আবার কাজে যোগ দিতে পারবে। কিন্তু রেষ্টটাইম সময়ে তারা সরকারি বেতন পায় না। ফলে অর্থিকভাবে অভাব অনটনের মধ্যে তাদের দিন কাটাতে হয়।
এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা ফয়সল হাসান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, 'বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অধীন সাধারণ আনসার সদস্যদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে।'
সূত্র : ভিওএ