কর্মস্থলে বাড়ছে মৃত্যু, গত ৬ মাসে ৪৭৫ জনের প্রাণহানি
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০১ জুলাই ২০২৪, ২০:৫০
২০২৩ সালের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। অলাভজনক সংস্থা সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি (এসআরএস) পরিচালিত সর্বশেষ জরিপে উঠে এসেছে এ চিত্র।
১৫টি জাতীয় ও ১১টি স্থানীয় সংবাদপত্রের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই জরিপে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৪২০টি পৃথক কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৪৭৫ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
অন্যদিকে ২০২৩ সালের একই সময়কালে ২৮৭টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ৩৮৯ জন শ্রমিক।
একই সময়ের তুলনায় দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানির সংখ্যার বৃদ্ধি উদ্বেগজনক বলে জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে।
জরিপে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে পরিবহন কর্মস্থলে, ২৫০ জনের। এরপর পরিষেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে (যেমন- ওয়ার্কশপ, গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি) ৭৪ জন মারা গেছে, কৃষিতে ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, নির্মাণস্থলে ৫২ জন মারা গেছে এবং কারখানা ও অন্যান্য উৎপাদন প্রতিষ্ঠানে ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জরিপে সড়ক দুর্ঘটনাকে মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেখানে পরিবহন খাতের শ্রমিকসহ কর্মস্থলে যাতায়াতের সময় দুর্ঘটনায় ৩১০ জন প্রাণ হারিয়েছে।
এছাড়াও বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে, তারপরে বজ্রপাত ৫১ জনের, পড়ে গিয়ে ২৩ জনের এবং ভারী বস্তুর আঘাতে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়াও মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে রাসায়নিকের সংস্পর্শ, ডুবে যাওয়া, আগুন, বিস্ফোরণ ও ধসের ঘটনা।
ক্রমবর্ধমান প্রাণহানির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে মৃত্যুর কারণে হিসেবে অনানুষ্ঠানিক খাতগুলোতে অপর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং শ্রম আইনের শিথিলতাকে দায়ী করেছেন সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটির (এসআরএস) নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা।
কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা রোধে বিশেষ করে পরিবহন, কৃষি, নির্মাণ ও উৎপাদন খাতের মতো খাতে কর্তৃপক্ষের তদারকি বাড়ানোর জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি।
এছাড়াও সরকারি সংস্থাগুলোকে কঠোর সুরক্ষা নির্দেশিকা গ্রহণ, পুঙ্খানুপুঙ্খ ঝুঁকি মূল্যায়ন পরিচালনা এবং কার্যকর প্রশমন কৌশল বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন এসআরএস পরিচালক। কঠোর পরিদর্শনের মাধ্যমে নিরাপত্তা মানদণ্ড মেনে চলা নিশ্চিত করতে শ্রমিক ও সরকারি সংস্থাগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ এবং প্রশিক্ষণে নিয়োগকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দেন তিনি।
এসআরএস পরিচালক বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইনের অধীনে, নিয়োগকর্তাদের ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম সরবরাহ এবং নিরাপদ কাজের পরিবেশ বজায় রাখা বাধ্যতামূলক, যেখানে শ্রমিকরা সুরক্ষা প্রোটোকল মেনে চলবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এসআরএস প্রশিক্ষণ সেশন এবং অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে পেশাগত নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণপ্রত্যাশী পরিবারকে আইনি সহায়তা দিয়ে থাকে।
সূত্র : ইউএনবি