ঢাকার ফুটপাতে বছরে তিন হাজার কোটি টাকার চাঁদাবাজি
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৪ জুন ২০২৪, ০০:১৫
বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের দাবি, ঢাকার ফুটপাতে হকারদের কাছ থেকে বছরে তিন হাজার কোটি টাকার চাঁদা তোলা হয়। সেই হিসাবে প্রতিদিন আট কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় হয়।
ঢাকার ফুটপাত থেকে সংগ্রহ করা বিপুল চাঁদা পুলিশ, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও লাইনম্যানরা নেয় বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি আবুল কাসেম। তবে পুলিশ ও সিটি করপোরেশন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। নির্দিষ্ট কারো বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে তারা।
ফুটপাতের ‘ইজারা'
হকার্স ফেডারেশনের হিসাবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে হকারের সংখ্যা দুই লাখ। উত্তর সিটি করপোরেশনে ৭০ হাজার। দুই সিটিতে সব মিলিয়ে দুই লাখ ৭০ হাজার হকার রয়েছে। ঈদের সময় এই সংখ্যা আরো বেড়ে তিন লাখ ২০ হাজারের মতো হয়। গড়ে প্রতিদিন হকার প্রতি ৩০০ টাকা চাঁদা নেয়া হলে বছরে তিন হাজার কোটি টাকার চাঁদা আদায় হয়।
ঢাকার কয়েকজন হকারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অনানুষ্ঠানিকভাবে ফুটপাত ইজারার ব্যবস্থা আছে। আর সেটি দেয়া হয় রাস্তা ধরে, ফুট হিসাব করে। চৌকি, ভ্যান গাড়ি বা ভ্রাম্যমাণ হকারদের জন্যেও আলাদা হিসাব আছে। পুলিশ এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা এর নিয়ন্ত্রণ করে বলে অভিযোগ হকারদের। এই ব্যবসার ব্যবস্থাপনায় আছে লাইনম্যান।
ঢাকার গুলিস্তান, নিউ মার্কেট, বায়তুল মোকাররম, পল্টন, মতিঝিল, দৈনিক বাংলা মোড়, গোলাপশাহ মাজার, জিরো পয়েন্ট, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এবং ফুলবাড়িয়া এলাকার ফুটপাতে সবচেয়ে বেশি দোকান আছে। ফলে এই এলাকাগুলোকে কেন্দ্র করেই সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজি হয়। কিন্তু ঢাকার এমন কোনো অলিগলি নাই যেখানে ফুটপাতকেন্দ্রিক নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ নাই। ঢাকার কোনো গলিতে একটি ছোট সবজি দোকান বসাতেই দিনে দুই শ' থেকে তিন শ' টাকা চাঁদা দিতে হয়। আর এই চাঁদা পুলিশ ও লাইনম্যানেরা নিয়ে থাকেন বলে জানান হকাররা।
হকারপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০০ টাকা চাঁদা
গুলিস্তান ও নিউ মার্কেট এলাকায় টেবিল ও চৌকির আকারের ওপর নির্ভর করে দৈনিক চাঁদার পরিমাণ। পাঁচ ফুট লম্বা আর তিন ফুট চওড়া একটি টেবিল এবং তার সামনে একটি টুল বসিয়ে ব্যবসা করতে স্থান ভেদে দেড় শ' থেকে আড়াই শ' টাকা চাঁদা দিতে হয় প্রতিদিন। তবে ঈদের সময় তা আরো বেড়ে যায়। এর বাইরে বিদ্যুতের জন্য আলাদা টাকা দিতে হয়, তার হিসাব হয় বাল্ব প্রতি। একটি বাল্ব জ্বালালে দিনে ১০০ টাকা দিতে হয়। আবার নিরাপত্তার নামেও চাঁদা আদায় করা হয়।
বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, ‘ফুটপাতে দৈনিক ব্যবসা প্রতি চাঁদার পরিমাণ ১০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা। যারা ফেরি করে পান-সিগারেট বিক্রি করে তাদেরও কমপক্ষে ১০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। আর গুলিস্তানে যে গলির মধ্যে ঘেরাও দেয়া বেল্টের দোকান আছে তাদের দিনে চাঁদা দিতে হয় দেড় হাজার টাকা। এইভাবে স্থান ও আকার বিবেচনা করে বিভিন্ন হারে চাঁদা দিতে হয়।'
‘অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ'
ঢাকা মোট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘এই (চাঁদাবাজির) অভিযোগ তো বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ চলে আসছে। সিটি করপোরেশন পুলিশের সহায়তায় বার বার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে, আবার তারা ফুটপাতে বসে। আর আমরা তো চাঁদাবাজি নিয়ে গবেষণা করিনি। যারা করেছেন তারা বলতে পারবেন। আমরা যদি আমাদের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাই তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেই।’
প্রায়ই একই মন্তব্য করেছেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো: সিরাজুল ইসলামের। তিনি বলেন, ‘আমরা নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান চালাই। কিন্তু কাদের সহায়তায় তারা আবার বসে সেটা আসলেই দেখার বিষয় আছে। আমাদের কেউ যুক্ত থাকার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেব।’
তবে ফুটপাত থেকে হকারদের সরাসরি উচ্ছেদ না করে পুনর্বাসনে উদ্যোগ নেয়ার কথা জানান তিনি। ড. মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা আধুনিক সিটি গড়ার জন্য একটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। সেখানে শুধু ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ নয়, তাদেও পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও থাকবে।’
সূত্র : ডয়চে ভেলে