‘আমি কী পাপ করেছি যে এত বড় শাস্তি পেলাম! সব শেষ হয়ে গেলো’
- ঢাকা মেডিক্যাল প্রতিবেদক
- ০১ মার্চ ২০২৪, ১২:৪০, আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৪, ১৫:৪৪
‘আমি কি পাপ করেছি যে এত বড় শাস্তি পেলাম! সব শেষ হয়ে গেলো।’
শুক্রবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গের সামনে এভাবেই আহাজারি করছিলেন বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে নিহত পপি আক্তারের মা বাসনা।
সন্তানদের আবদার মেটাতে রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন পপি রাণী ও তার দুই সন্তান। রাজধানীর বেইলি রোডের ভয়াবহ আগুনে মারা যান তারা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে আহাজারি করছিলেন পরিবারের সদস্যরা। দুই সন্তান ও স্ত্রীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ শিপন পোদ্দার।
বৃহস্পতিবার রাতে বহুতল ভবনটিতে লাগা ভয়াবহ আগুনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ জনে। ফায়ার সার্ভিসের ১৩ ইউনিটের চেষ্টায় দুই ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও পুড়ে গেছে বাণিজ্যিক ভবনটি।
ঘটনার দিন রাত ৮টার দিকে গ্রিন কোজি নামের এই ভবনের একটি রেস্তোরাঁয় খেতে যান শিপন পোদ্দারের স্ত্রী পপি রানী। সাথে ছিল সাত বছর বয়সী ছেলে সংকল্প ও তেরো বছর বয়সী মেয়ে সম্পূর্ণা।
শিপন পোদ্দার জানান, ‘ওরা যখন ওখানে খেতে গেছে, তখনই আগুন লেগেছে। আমাকে ফোন দিয়েছে। আমি ঢাকার বাইরে ছিলাম। যখন শান্তিনগর মোড়ে আসলাম, তখন আর কেউ ফোন ধরছিল না।
রাত পৌনে ১০টার দিকে গাড়ি চালক মোশাররফ হোসেনকে ফোন দিয়ে বাঁচার আকুতি জানান পপি রানী। কথা বলতে বলতেই নিস্তেজ হয় যায় তার কণ্ঠ।
মোশাররফ হোসেন জানান, এক জায়গায় থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার পথেই আমাকে ফোন দেয় যে আমরা আটকা পড়েছি আগুনে। কোথায় লেগেছে? বলে যে রেস্টুরেন্টের নিচে থেকে আগুন আসছে। তখন তাদের বলা হয়েছে যে আপনারা উপরে চলে যান ছাদের দিকে। ছেলে, মেয়ে, মা তিনজনের কেউই আর থাকল না। পরিবারের তিনজনকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ স্বামী ও স্বজনেরা। তাদের কান্নার কণ্ঠস্বর যেন বলছে, এমন মৃত্যু যেন আর কারো না হয়।
হাসপাতালের সামনে পপি রানীর এক স্বজন জানান, ‘আমি ১০টার দিকে খবর পেয়েছি। ভাইয়ের শাশুড়ি ফোন করেছে যে বেইলি রোডে আগুন লেগেছে। ওরা ওখানে গেছে। আটকা পড়েছে। তখন থেকেই শুধু চারিদিকে ফোন দিয়ে খবর নিচ্ছি। কাচ্চি ভাইয়ে রাতের ডিনার শেষ করে আসবে। ওরা শান্তিবাগে থাকে। ছেলে মেয়েদের নিয়ে গেছে। বলেছে যে খেয়েই বাসায় ফিরব।
অনিরাপদ গ্যাস সিলিন্ডারের মজুদ থেকে আগুন ছড়ায় দ্রুত স্বজন হারিয়ে কাঁদছেন জিহাদ জোয়ার্দার। তার মামা কামরুল হাসান রকি ছিলেন কাচ্চি ভাই-এর ক্যাশিয়ার। ঢাকা মেডিকেলের মর্গের সামনে আহাজারি দেখা গেছে বেইলী রোডের আগুনে প্রাণ হারানো আরো অনেকের স্বজনের।
বেইলি রোডে ভবনে আগুনের ঘটনায় উদ্ধার হওয়া ৭৫ জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত মারা যান ৪৫ জন। নিহতদের মধ্যে ৩৫ জনের লাশ এখন পর্যন্ত পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দগ্ধ হয়ে শেখ হাসিনা বার্ন ইন্সটিটিউট ও ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি ২২ জন। যাদের বেশিরভাগেরই পুড়ে গেছে শ্বাসনালী। ৯টা ৫৬ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট কাজ শুরু করে। একে একে যোগ দেয় ১৩টি ইউনিট।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পান তারা। মূহুর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে। কেমন ছিল সেই বিভিষিকার মুহূর্ত।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা, পুরো ভবনে অসংখ্য গ্যাস সিলিন্ডার মজুত ছিল। এমনকি সিঁড়িতেও মজুত ছিল সিলিন্ডার। ফলে ভবনটিতে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তা দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। ভবনটিতে পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা ছিল না বলে জানিয়েছে পুলিশ।