২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সীমান্তের ওপারে সঙ্ঘাত : কে থামাবে ইব্রাহীমের কান্না!

মোবাইলে মায়ের ছবি আর কান্না এখন ইব্রাহীমের সম্বল - ছবি : সংগৃহীত

মোহাম্মদ ইব্রাহীমের হাতে মায়ের রক্তেভেজা ব্লাউজ। কথোপকথনের এক পর্যায়ে দেখালেন সেটা। দিন কয়েক আগে প্রতিবেশী দেশ থেকে ছোঁড়া গোলার আঘাতে নিজের রান্নাঘরে প্রাণ গেছে তার মায়ের। তিনি তার মায়ের হত্যার বিচার চান।

ইব্রাহীমের সাথে কথা হচ্ছিল বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বাংলাদেশ অংশের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামে। ছোট্ট একটা টিলার ওপরে তাদের ঘর। ঘরের একপাশে বিস্তৃত সবুজ ধানক্ষেত। আর তারপরেই কাঁটাতারের বেড়া। এই বেড়া বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারকে বিচ্ছিন্ন করেছে।

ইব্রাহীমের বক্তব্য অনুযায়ী, গত ৫ ফেব্রুয়ারি এই বেড়ার ওপাড় থেকে ছোঁড়া একটি মর্টার শেল এসে পড়ে তার বাড়ির ছোট্ট উঠোনের ঠিক যেখানে তার মা হোসনে আরা বেগম দুপুরের রান্না করছিলেন, সেখানে। মাটির চুলায় রান্না করতে পছন্দ করতেন তার মা।

গোলার আঘাতে গুরুতর আহত হন। তবে তারপরেও কিছুক্ষণ বেঁচে ছিলেন তিনি। হাসপাতালে নিতে নিতে অবশ্য নিথর হয়ে পড়েন হোসনে আরা বেগম। আর ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান আরেক ব্যক্তি, আহত হয় কয়েকটি শিশুও।

স্বাধীন রাষ্ট্রে মায়ের এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না ইব্রাহীম। ভিনদেশীরা তার মাকে হত্যা করেছে বলে মনে করেন তিনি। ইব্রাহীম তাই এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চান।

তবে বিচার কিভাবে হবে সে সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। বিষয়টি ঠিক জানেন না তার বড় ভাই মোহাম্মদ শফিউল আলমও। তিনি শুনেছেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই ঘটনার বিচার চাওয়া হবে।

তবে বিচার চাওয়ার প্রক্রিয়াটি সেখানকার কেউই সেভাবে জানাতে পারলেন না। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এক কর্মকর্তা টেলিফোনে জানান, তার কাছেও এই বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। তবে তিনি জানিয়েছেন, নিহত হোসনে আরার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।

মোহাম্মদ ইব্রাহীম আক্ষেপের সুরে জানান, গোলার আঘাতে তার মা যখন গুরুতর আহত, তখন তাকে হাসপাতালে নিতে অ্যাম্বুলেন্স এসেছিল। সেই অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া দিতে হয়নি। কিন্তু তার মায়ের লাশ বহন করে আনা অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া ১৫ হাজার টাকা গুণতে হয়েছে তাদের। পাশাপাশি আরো খরচ করতে হয়েছে। দরিদ্র এই পরিবারের পক্ষে এভাবে অর্থ খরচ করা সহজ ব্যাপার নয়।

মোহাম্মদ ইব্রাহীম অভিযোগ করে বলেন, ‘মিয়ানমারে এই ঘটনা হচ্ছে অনেক আগে থেকেই। বিজিবি, প্রশাসনের লোক কোনো একটা মানুষকে সচেতন করেনি যে গোলাগুলি হবে, আপনারা বর্ডার সাইডে যারা আছেন সতর্ক হয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান। যদি ওই কথাটা বলতো, আমরা নিরাপদ স্থানে চলে যেতাম। আমার মা মারা যেত না এখানে।’

ঘুমধুমের স্থানীয় কয়েকজন এমন অভিযোগও করেছে যে সীমান্তের ওপাড়ে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এবং জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে গোলাগুলি শুরুর পর এ পাড়ের বিজিবির সদস্যরাও সরে গিয়েছিলেন।

ইব্রাহীমদের বাড়ি থেকে একটু দূরেই সীমান্তের কাছে দেখা গেল বিজিবির একটি নিরাপত্তা চৌকি। বিজিবির তিন সদস্য বিশ্রাম নিচ্ছিলেন সেখানে। ছবি তুলতে চাইলে জানান, বুলেট প্রুফ ভেস্ট আর হেলমেট ছাড়া তাদের ছবি তোলা যাবে না।

তারা যখন সেসব পরছিলেন, তখন জানতে চাওয়া হয় স্থানীয়দের অভিযোগের বিষয়ে। বিজিবির এক সদস্য তখন জানান, গোলাগুলির সময় বাঙ্কারে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা। তবে সীমান্তরক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।

সেই সদস্য এটাও জানালেন, তাদের ওপর যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেই দায়িত্ব পালন করছেন তারা, অন্য কোনো বিষয়ে জানেন না।

দায়িত্বটা কী জানতে চাইলে বলেন, রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকানো।

এখানে বলা প্রয়োজন, বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতরে প্রতিবেশী দেশের সীমান্তরক্ষীদের গুলিতে বাংলাদেশী নিহত হওয়া নতুন না। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে। সেসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা হলেও ন্যায্য বিচার হয়েছে এমন ঘটনার কথা তেমন একটা শোনা যায় না।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তেও বাস্তবতা একইরকম হবে কি-না এক্ষুণি হয়তো বলা যাবে না। তবে যে সীমান্তে মিয়ানমার থেকে ছোঁড়া গোলাগুলিতে হোসনে আর বেগমসহ একাধিক ব্যক্তির প্রাণ গেছে, সেখান থেকে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্ত পুলিশ, সৈনিক এবং সরকারি কর্মকর্তারা অবস্থান করছেন ইব্রাহীমদের বাড়ির কাছেই এক স্কুলে। বিজিবির কড়া নিরাপত্তায় সেখানে অবস্থান করছেন তারা। এমনকি সংবাদমাধ্যমকেও সুযোগ দেয়া হচ্ছে না মিয়ানমারের ওই নাগরিকদের কাছে যাওয়ার।

সীমান্তে গোলাগুলির দায়ে এসব ব্যক্তিকে বিচারের মুখোমুখি করা নিয়ে দৃশ্যত বাংলাদেশের বিশেষ মাথাব্যথা আছে বলে মনে হচ্ছে না। তাদেরকে শুধু নিজ দেশে ফেরত পাঠানো নিয়েই কথা বলছেন দায়িত্বশীলরা।

ইব্রাহীমের আশা, সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়াতে আরো সচেতন হবে বাংলাদেশ। সেটা করলে তার মতো আর মা-হারা হতে হবে না অন্য কাউকে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে : প্রেস উইং ব্যর্থ টপ অর্ডার, মুমিনুলের ফিফটির পর পথ দেখাচ্ছেন লিটন তেজগাঁওয়ে বুটেক্স ও ঢাকা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেলজিয়ামের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ছে এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’ গুমের ঘটনা তদন্তে কাউকে বরখাস্ত করা হয়নি : কমিশন প্রধান দায়মুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিশেষ তদারকি শুরু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সাহস ও অভিজ্ঞতা আমার আছে ইমরানের দলের বিক্ষোভ ঠেকাতে ইসলামাবাদ লকডাউন ডেঙ্গুতে ১ দিনে সর্বোচ্চ ১১ জনের মৃত্যু ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগ করা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সকল