২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

টেকনাফ-তুমব্রু সীমান্তে সতর্কতা, ঢাকায় রোহিঙ্গা ফেরাতে আলোচনা

টেকনাফ-তুমব্রু সীমান্তে সতর্কতা, ঢাকায় রোহিঙ্গা ফেরাতে আলোচনা - ছবি : বিবিসি

মিয়ানমারের ভেতরে গত কয়েক সপ্তাহ যাবত চলা সংঘাতের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা এলাকায় সতর্কতা বাড়িয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

মিয়ানমারে যেখানে এসব সংঘাত চলছে, তা বাংলাদেশের সীমান্তের খুব কাছে অবস্থিত হওয়ায় তুমব্রু ও টেকনাফ সীমান্তে এরই মধ্যে সতর্ক অবস্থানের কথা জানিয়েছে কক্সবাজার এবং বান্দরবানের জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এদিকে, চলমান পরিস্থিতিকে ‘বৈরি অবস্থা' বলে বর্ণনা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘মিয়ানমারের পরিস্থিতি কখনোই ভালো ছিল না। তবে বাংলাদেশের আশা পরিস্থিতি ভালো হবে এবং দ্রুতই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে।’

রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এবং জাতিসঙ্ঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইসের সাথে বৈঠক করেছেন। সেখানে আলাপ হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে।

সীমান্তে কী পরিস্থিতি, কী সতর্কতা?

গত বেশ কিছুদিন ধরে মিয়ানমারে অস্থিরতা চলছে। একের পর এক এলাকা দখল করে নিচ্ছে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো, আর একে একে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে জান্তা সরকার।

দুই সপ্তাহ আগে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশ এবং ভারত সীমান্তে অতি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা।

বাংলাদেশে কক্সবাজারের টেকনাফ এবং বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্ত এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গোলাগুলি ও মর্টার শেল ছোঁড়ার শব্দ শুনছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা।

সীমান্ত লাগোয়া বাংলাদেশের কয়েকটি বাড়িতে গুলি এসে পড়েছে বলেও জানাচ্ছেন তারা।

এমন অবস্থায় সীমান্তে সর্তক ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেছেন,‘আমরা ইতোমধ্যে খবর পেয়েছি সীমান্ত এলাকা থেকে রোববারও সীমান্তে কিছু ফায়ারিং হয়েছে। এটা আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’

নাইক্ষংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু হেডম্যান পাড়া চাকমাপল্লীর অবস্থান সবচেয়ে কাছাকাছি।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন,‘প্রায় প্রতিনিয়ত গুলির শব্দ পাচ্ছি আমরা। এ নিয়ে আমাদের এলাকার মানুষ একটু আতঙ্কিত। ইউএনও ডিসি আছে। আমরা সবকিছু তাদের জানাচ্ছি।’

মিয়ানমার সীমান্তের কাঁটাতার ঘেঁষা এই পল্লীতে ২৭টি পরিবারের বসবাস। এখানকার বাসিন্দারা বলছেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ ও গোলাগুলির সময় দু’দিন আগে গুলি এসে এই পল্লীতে পড়েছে।

আতঙ্কে এই পল্লীর বাসিন্দারা রাতে নিয়মিত পাহারা চালু করেছেন। প্রতি পরিবার থেকে রাতে একজন করে জেগে থাকে, যাতে রাতে ওপার থেকে গুলির ভয়াবহতা শুরু হলে তারা দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যেতে পারে।

স্থানীয় সাংবাদিক আজিম নিহাদ বলেছেন, সীমান্ত অঞ্চলের মিয়ানমার অংশে ৩৪ পিলার রাইট ক্যাম্প এবং ঢেকিবুনিয়া ক্যাম্প দু’টি স্পষ্ট দেখা যায় বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে।

তিনি বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত ওই ক্যাম্প দু’টি জান্তা বাহিনীর দখলে দেখা যাচ্ছে, সেখানে বিপুল সংখ্যক সৈন্য সশস্ত্র অবস্থান করছেন।’

সর্তক অবস্থানে সেনাবাহিনী ও বিজিবি
মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৩ কিলোমিটার। এর বড় একটা অংশই পড়েছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ এবং বান্দরাবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়।

সীমান্তের ওপারে অব্যহত গোলাগুলি ও সংঘাতময় পরিস্থিতে বাংলাদেশেও কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

এ অবস্থায় নতুন করে বাংলাদেশে যাতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ না ঘটে, সেজন্য বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার এবং বান্দরবানের স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন,‘আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ অব্যহত রেখেছি। সীমান্ত এলাকার লোকজনের মধ্যে যদি ভীতির পরিমাণ বেশি থাকে, সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।’

জাকারিয়া জানিয়েছেন, এখনো পর্যন্ত সর্তকতা আগের মতোই আছে। যদি বাহিনীগুলোর পক্ষ থেকে কোনো ধরনের চাহিদা থাকে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সীমান্তের ওপার থেকে গোলাগুলির শব্দে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে এক ধরনের উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে জানিয়ে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা আরো দু-একদিন পরিস্থিতি দেখবো। এ বিষয়ে আমরা যারা আইনশৃংখলা বাহিনীর ও অন্যান্য প্রশাসনে সদস্যরা একত্রে কাজ করছি। আমাদের তৎপরতা ও সতর্কতা অব্যহত রয়েছে।’

যদিও সেখানকার কর্মকর্তারা সতর্কতা হিসেবে ঠিক কী ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তার বিস্তারিত তথ্য দেননি।

আবারো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা
এর আগে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটে ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে সংঘর্ষের পর।

গত তিন মাস ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাত চলছে। ফলে গত ডিসেম্বর থেকে ঘুমধুমের তুমব্রুসহ বেশকিছু সীমান্ত এলাকা থেকে অনুপ্রবেশ ঘটার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এদিকে, মিয়ানমারের চলমান সংঘাতের কারণে রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি ভূ-রাজনৈতিকভাবে জটিল আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

তারা বলছেন এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আবারো বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করতে পারে।

বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের মধ্যেও তেমন আশঙ্কা রয়েছে।

বিবিসি বাংলা নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম এবং ইশফাক ইলাহী চৌধুরীর সাথে কথা বলেছে। তারা দু’জনই মনে করেন, সংঘাতের তীব্রতা বাড়লে, জীবন বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওইসব এলাকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারে।

সেক্ষেত্রে যেহেতু এখানে আগেও এখানে (বাংলাদেশে) রোহিঙ্গারা এসে আশ্রয় নিয়েছে, তারা তাদের পরিচিত জনদের কাছে আশ্রয় চাইতে পারে।

এছাড়া এই সংঘাতের প্রভাব শুধু বাংলাদেশ না, প্রতিবেশী দেশ ভারতেও পড়ার আশঙ্কার কথা জানাচ্ছেন বিশ্লেষকেরা।

নতুন করে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সরকারকে নতুন কৌশল নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক এমদাদুল ইসলামের পরামর্শ বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝিদের রাখাইন রাজ্যের তাদের স্বজন ও পরিচিত জনদের সাথে যোগাযোগ রয়েছে।

‘তাদের মাধ্যমে সরকার মিয়ানমারের ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের পরামর্শ দিতে পারে যে, তারা বাংলাদেশমুখী হলে এবার বিপদ আরো বাড়তে পারে।’

ঢাকায় আলোচনায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যু
বাংলাদেশে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ঢল প্রবেশের পর গত ছয় বছর ধরে তাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে একের পর এক উদ্যোগ নেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে।

গত মেয়াদে সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেশ কয়েকবার মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে কিছু আশার বানীও শুনিয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের সে উদ্যোগ সফল হয়নি।

নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর রোববার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেন চীনের রাষ্ট্রদূত এবং জাতিসঙ্ঘের আবাসিক প্রতিনিধি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে রোহিঙ্গা ইস্যুটি। বিশেষ করে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানানো হয় চীনকে।

বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘মিয়ানমারের পরিস্থিতি কখনোই ভালো ছিল না। আমরা চীনকে বিষয়টি নিয়ে বলেছি। বাংলাদেশের আশা পরিস্থিতি ভালো হবে, এবং দ্রুতই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে।’

বাংলাদেশে জাতিসঙ্ঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইসের সাথে বৈঠকেও এই ইস্যুটি গুরুত্ব পায় বলে জানাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বৈঠকের পরে জাতিসঙ্ঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস বলেন,‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অগ্রাধিকার হলেও, সেটার জন্য চলমান পরিবেশ সহায়ক নয়।’

তবে নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কোনো ঘটনা ঘটছে না, বলে মন্তব্য করেন লুইস।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা, অন্যদের কথা ব্যক্তিগত : প্রেস উইং সালাহর জোড়া গোলে জিতল লিভারপুল ১০ সাংবাদিকসহ ১১ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ৬ দফা মেনে নেয়ার আহবান হাসিনা-কন্যা পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক লেনদেন স্থগিত বুটেক্স-পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে : প্রেস উইং ব্যর্থ টপ অর্ডার, মুমিনুলের ফিফটির পর পথ দেখাচ্ছেন লিটন তেজগাঁওয়ে বুটেক্স ও ঢাকা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেলজিয়ামের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ছে এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’

সকল