বাড্ডার ইউনাইটেড হাসপাতাল বন্ধ, যা বলছে কর্তৃপক্ষ
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:৫২
খতনার জন্য অজ্ঞান করার পর এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীর সাতারকুলের ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটিতে আয়ান আহমেদ নামে এক শিশুর মৃত্যুর পর তার বাবার অভিযোগের প্রেক্ষিতে অধিদফতরের কর্মকর্তারা গত ১০ জানুয়ারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটি পরিদর্শন করেন।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, নিবন্ধন ছাড়াই এতদিন চলছিল প্রতিষ্ঠানটি। এমন কী এই নামে কখনো নিবন্ধনের আবেদনও করা হয়নি।
তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী গতকাল রোববার হাসপাতালটি বন্ধ ঘোষণা করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, যথাযথ নিয়ম মেনে মূল প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড হেলথকেয়ার সার্ভিসেস লিমিটেড নামে নিবন্ধন আবেদন করা হয়েছিল। যেটি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন। আর মেডিক্যাল কলেজ চালুর পরই সেখানে চিকিৎসা সেবা দেয়া শুরু হয়েছিল’।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের আদেশে যা আছে
রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে হাসপাতাল কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা আছে, স্বাস্থ্য অধিদফতর হাসপাতালটি পরিদর্শন কালে কর্তৃপক্ষ যথাযথ লাইসেন্স দেখাতে করতে ব্যর্থ হয়।
এছাড়াও অনলাইন ডাটাবেজ পর্যালোচনা এবং পরিদর্শনকালে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রাদি যাচাই-বাছই করে দেখা যায় যে, ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ইউনাইটেড সিটি, সাতারকুল বাড্ডা ঢাকা নামে কোনো প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিকট নিবন্ধন/লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য কখনোই অনলাইন আবেদন করে নাই।
সেখানে আরো বলা আছে, প্রতিষ্ঠানটি কোন প্রকার আইনানুগ নিবন্ধন অথবা লাইসেন্স ব্যতিরেকে চিকিৎসা সেবা নির্মাণাধীন ভবনে পরিচালনা করে আসছে যা সরকারের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী।
এমতাবস্থায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিবন্ধন/লাইসেন্স প্রাপ্ত না হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করায় দ্য মেডিক্যাল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স ১৯৮২ অনুযায়ী ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ইউনাইটেড সিটি, সাতারকুল, বাড্ডা, ঢাকা নামক প্রতিষ্ঠানটির সকল কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধের আদেশ প্রদান করা হলো।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, যথাযথ নিয়ম মেনে মূল প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড হেলথকেয়ার সার্ভিসেস লিমিটেড নামে নিবন্ধন আবেদন করা হয়েছে। যেটি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন। আর মেডিক্যাল কলেজ চালুর পরই সেখানে চিকিৎসা সেবা দেয়া শুরু হয়েছে’।
ইউনাইটেড হাসপাতালের পাবলিক রিলেশন ও কমিউনিকেশন ম্যানেজার আরিফুল হক বলেন, ‘নিবন্ধনের জন্য করা আমাদের আবেদনটি যে ত্রুটিযুক্ত এ বিষয়ে কোনো চিঠি বা নোটিশ আমাদের আগে থেকে দেয়নি স্বাস্থ্য অধিদফতর’।
‘আমরা গণমাধ্যমে চিঠির একটা কপি দেখেছি। আমরা অফিসিয়ালি এই চিঠিটা এখনো রিসিভ করিনি। আমরা পেলে পরবর্তী যে নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’ বলছিলেন হক।
তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আমরা আবেদন করেছিলাম ইউনাইটেড হেলথকেয়ার সার্ভিসেস লিমিটেড নামে। আমাদের প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল। কিন্তু নিবন্ধনের অ্যাপ্লিকেশন করেছিলাম ইউনাইটেড হেলথকেয়ার সার্ভিসেস লিমিটেড নামে। সেটি আমাদের মাদার কোম্পানি। সেক্ষেত্রে গণমাধ্যমে ডিজি হেলথ থেকে এখন বলছে এটি ত্রুটিপূর্ণ’।
‘আমরা যদি জানতাম এটা ত্রুটিপূর্ণ তাহলে অবশ্যই আমরা ত্রুটি ঠিক করার জন্য ব্যবস্থা নিতাম। যেহেতু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আমাদের রেগুলেটরি বডি সেহেতু ওনাদের সব নির্দেশনা আমরা মেনে চলবো। ত্রুটির বিষয়টা সবার প্রথম গণমাধ্যমে এসেছে, তারপর আমাদের কাছে চিঠি এসেছে। সংশোধনের জন্য অবশ্যই আমরা কাজ করবো’।
এমন অবস্থায় কী বন্ধ থাকবে স্বাস্থ্য সেবা বা শিক্ষা কার্যক্রম? এমন প্রশ্নের জবাবে আরিফুল হক বলেন, ‘মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল যেহেতু সে কারণে মেডিক্যাল কলেজের স্টুডেন্টদের ব্যবহারিক ক্লাস হতো। পাশাপাশি এলাকার লোকজন ওপিডি, আইপিডি ও এমার্জেন্সি সেবাটা গ্রহণ করতো। অবশ্যই আমরা সকল প্রস্তুতি নিয়ে অপারেশন রান করার জন্য যা যা করার তাই করবো’।
হাসপাতালটি নিয়ে আলোচনার মূল কারণ
গত ৩১ ডিসেম্বর খতনার জন্য শিশু আয়ানকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হয়। অজ্ঞান করে খতনা করার পর আর শিশুটির চেতনা না ফেরায় তাকে গুলশানে অবস্থিত ইউনাইটেড হাসপাতালের পিআইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। সেখানেই গত ৭ জানুয়ারি মারা যায় শিশু আয়ান।
এই ঘটনায় দেশজুড়ে নানা সমালোচনা তৈরি হয়। শিশু সন্তানের এমন মৃত্যুর ঘটনায় আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ বাড্ডা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলায় আসামি করা হয় হাসপাতালের অ্যানেস্থিওলজিস্ট সাইদ সাব্বির আহমেদ, সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক তাসনুভা মাহজাবিন অজ্ঞাতনামা পরিচালকসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয় সেখানে।
এই ঘটনায় গত মঙ্গলবার হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবি এম শাহজাহান আকন্দ। এতে শিশু আয়ানের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা চেয়েছিলেন ওই আইনজীবী।
ওই চিকিৎসককে গ্রেফতারসহ ছয় দফা দাবিতে গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের সামনে মানববন্ধন করে আয়ানের স্বজন ও এলাকার বাসিন্দারা।
সূত্র : বিবিসি