নিউমার্কেট এলাকায় ছাত্ররা বারবার সংঘর্ষে জড়ায় কেন
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২১ এপ্রিল ২০২২, ২২:৫৩
বাংলাদেশের ঢাকায় নিউমার্কেট এলাকায় দোকান কর্মীদের সাথে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের দু’দিনের সংঘর্ষে মোট দু’জন নিহত হয়েছে। তবে এক সমঝোতা বৈঠকের পর ব্যবসায়ী ও ছাত্ররা বলেছে এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে তারা একযোগে কাজ করবে।
সমঝোতার পর বৃহস্পতিবার থেকেই নিউমার্কেটে দোকানপাট খুলেছে এবং পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
যদিও দোকানকর্মী ও শিক্ষার্থীদের সাথে এ ধরণের সংঘর্ষ গত পাঁচ বছরে অন্তত দশবার হয়েছে এবং প্রতিবারই বিভিন্ন কায়দায় সমঝোতা হলেও শেষ পর্যন্ত তা খুব একটা স্থায়ী হয়নি।
বরং ওই এলাকার মার্কেটগুলোতে ছাত্রদের হরহামেশাই নানা ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনায় ঘটনায় জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।
এবারে নিউমার্কেটের দু’টি দোকানের দু’জন কর্মীর মধ্যকার বিরোধে একজনের হয়ে ঢাকা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী অপরজনকে মারধরের ঘটনা নিয়েই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সূত্রপাত হলো।
সোমবার রাত থেকে শুরু হয়ে সংঘর্ষ হয়েছে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত। বুধবার দিনে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের জের ধরে দোকানপাট বন্ধ ছিল।
অবশেষে বুধবার রাতভর আলোচনার পর বৃহস্পতিবার থেকে মার্কেটের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
দু’দিনের ব্যাপক সংঘর্ষের পর নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে বুধবার থেকে আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে ঢাকা নিউমার্কেট এলাকা। ভোর রাতে যখন ওই সমঝোতা বৈঠক চলছিল তখন ঢাকা মেডিক্যালে কলেজ হাসপাতালে মারা যান সংঘর্ষে আহত একজন দোকান কর্মচারী মোরসালিন। তবে ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ ধরণের সংঘর্ষ যেন না হয় সেজন্য একযোগে কাজ করবেন তারা।
বৃহস্পতিবারের নিউমার্কেটের পরিস্থিতি
নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বৃহস্পতিবার দুপুরে মার্কেটে সমিতির কার্যালয়ে বসে জানান, যে মার্কেটটিতে প্রায় পাঁ শ’ দোকান আছে এবং তারা ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছে।
পুরো মার্কেট ঘুরে দেখা যায় দোকানপাট সব খুলেছে কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা ছিল খুব কম।
অবশ্য মার্কেটের ভেতরে ও বাইরে ফুটপাতগুলোতে কিছুটা ভিড় দেখা গেছে।
নিউমার্কেট সংলগ্ন গাউছুল আযম মার্কেটের একজন ব্যবসায়ী ফজলুল হক বলেছেন, যে নিউমার্কেটে হুটহাট করেই শিক্ষার্থীদের সাথে নানা সমস্যা হয়ে যায়। পুরো এলাকাটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঘেরা। এখানকার ক্রেতাদের একটি অংশই হলো এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। অনেক সাবেক শিক্ষার্থীরা ব্যবসাও করছেন অনেকে। এখানে শিক্ষার্থীদের সাথে যেটা হয় সেটা আসলে হঠাৎ করে কোনো কিছু নিয়ে কর্মচারীদের সাথে লেগে যায় যা পরে কন্ট্রোল করা কঠিন হয়ে যায়।
তিনি বলেন, আরেকটি বিষয় দেখা দরকার সেটা হলো এখানে অনেকে ব্যবসা করেন যার অনুমতি থাকার কথা না যেগুলো অবৈধ।
অর্থাৎ এ ব্যবসায়ী যেটি বোঝাতে চেয়েছেন তা হলো নিউমার্কেটে এলাকার ফুটপাত ঘিরে অবৈধ দোকানপাট ও চাঁদাবাজি।
মার্কেটজুড়ে চাঁদাবাজি, অসহায় মার্কেটের ব্যবসায়ীরাও
ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলছেন, নিউমার্কেটে দোকান আছে পাঁচ শ’ মতো আর নিউমার্কেট ঘিরে ফুটপাতে দোকান আছে অন্তত পাঁচ হাজার।
এর সাথে জড়িত আশপাশের ২০টির মতো মার্কেট ঘিরে ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করে আরো অন্তত দশ হাজার দোকান।
একদল প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা যাদের থেকে নিয়মিত চাঁদা পান বলে অভিযোগ আছে।
দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলছেন, এখানে যেসব সংঘর্ষ বা মারামারি হয় মাঝে মধ্যে এর মূল কারণ কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের অসহিষ্ণুতা। এ এলাকাটিতে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্টুডেন্ট সেন্টিমেন্ট অনেক সময় আবেগ থেকে দাবির পর্যায়ে চলে যায়। দামাদামি থেকে মাঝেমধ্যে বচসা হয়। এটা থেকেই সূত্রপাত হয়। নিউমার্কেটে চাঁদাবাজি হয় না। কিন্তু আশেপাশের ফুটপাতগুলো ঘিরে নীরব বা সরব চাঁদাবাজি ওপেন সিক্রেট, যা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
দেওয়ান আমিনুল ইসলামের কথার সূত্র ধরে ফুটপাত ঘুরে যা জানা গেলো তা হচ্ছে ফুটপাতে বসতে একজন হকারকে স্থানভেদে এককালীন ১/২ লাখ টাকা যেমন দিতে হয় আবার প্রতিদিন দিতে হয় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা।
সবমিলিয়ে এ এলাকায় দৈনিক চাঁদার পরিমাণ ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকা। যার নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্বকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষগুলোর আকার ও ব্যপ্তি নির্ভর করে।
ঢাকা কলেজের ছাত্ররা জড়িয়ে পড়ে কেন
ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীরা বলছেন অনেক সময় ছোটোখাটো ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজ থেকে শিক্ষার্থীরা দলবদ্ধভাবে গিয়ে হামলা করে যার জের ধরে সংঘর্ষ হয় দোকান কর্মীদের মধ্যে যা পড়ে ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়।
এবারের ঘটনাতেও দু’টি দোকানের কর্মীদের মধ্যে বিবাদে একজনের হয়ে আরেকজনের ওপর হামলা করেছে ঢাকা কলেজের একদল শিক্ষার্থী।
তবে ঢাকা কলেজের একজন শিক্ষার্থী বলছেন এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা যা তখনি শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এসব ঘটনাকেই পুঁজি করে বড় গণ্ডগোল বাধিয়ে দেয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। এখানে কিছু হলেই ঢাকা কলেজের দোষ হয়। আমরা কালকের বৈঠকেও বলেছি যে, আপনারা তদন্ত করেন যে সিন্ডিকেটে কারা। কারা এ পরিস্থিতি তৈরি করে। তৃতীয় পক্ষ কারা ইন্ধন দিয়ে এটা করে আর ঢাকা কলেজের ছাত্রদের দোষ দেয়।
আরেকজন শিক্ষার্থী বলছেন, নিউমার্কেটের দোকানি ও কর্মচারীদের আচরণের কারণেই সমস্যার সূত্রপাত হয়, অনেক সময় যা শিক্ষার্থীদের মেনে নেয়া কঠিন হয়। মাঝে মধ্যে এমন আচরণ করে যে মেনে নেয়া যায় না। তখন হয়তো আমরা এসে বড়দের বা বন্ধুদের বলি। তখন ঘটনা ঘটে।
তবে বাস্তবতা হলো এই যে, শিক্ষার্থীদের সাথে যখন কোনো ঘটনা ঘটে তখনি তাতে জড়িত হয় কথিত সিন্ডিকেট।
কারণ এ দ্বন্দ্ব, সংঘাত যতবার হয়, ততবারই ফুটপাত কেন্দ্রিক শত কোটি টাকার বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রকরা আরো লাভবান হওয়ার সুযোগ পান। কিন্তু এ সিন্ডিকেটের পেছনে কারা সেটি মুখ ফুটে বলতে চাননি কেউ।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা