২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

মেঘলার লাশে আঘাতের চিহ্ন : পারিবারিক নির্যাতনে মারা গেছে ঢাবি ছাত্রী!

স্বামীর সাথে মেঘলা - ছবি সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের একজন শিক্ষার্থীকে পারিবারিক নির্যাতনে হত্যা করা হয়েছে, এমন অভিযোগে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

ইলমা চৌধুরী মেঘলা নামে এই তরুণী নিহত হন মঙ্গলবার রাতে। এ ব্যাপারে বনানী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন তার বাবা।

তাতে প্রধান আসামি করা হয়েছে তরুণীর স্বামীকে। এরই মধ্যে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার তাকে আদালতে পাঠিয়ে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন জানানো হয়েছে।

পুলিশ বলছে, নিহত তরুণীটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।

ইলমা চৌধুরী মেঘলার সহপাঠীদেরও অভিযোগ, লাশে আঘাতের দাগ দেখতে পেয়েছেন তারা।

পুলিশ বলছে, ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে মিজ মেঘলার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে আজম মিয়া বিবিসিকে বলেছেন, মঙ্গলবার (১৪ই ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মেঘলার পরিবারের তরফ থেকে পুলিশকে খবর দিলে তারা ইউনাইটেড হাসপাতালে যান।

বনানীতে মেঘলার শ্বশুরবাড়ি থেকে সন্ধ্যায় তাকে গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালে আনার আগেই মেঘলার মৃত্যু হয়।

এরপরই পরিবার থেকে পুলিশে ফোন করা হয়।

পুলিশ গিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

মিয়া বিবিসিকে জানিয়েছেন, সুরতহালে বলা হয়েছে লাশে আঘাতের অনেকগুলো চিহ্ন ছিল।

তিনি বলেছেন, মেঘলার ঘাড়ে এবং গলায় দাগ রয়েছে, যা দেখে ধারণা করা যায় যে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হতে পারে।

এছাড়া মেঘলার দুই হাতে, পায়ে এবং অন্যান্য স্থানেও নতুন ও পুরনো অনেক কালশিটে ছিল, যা দেখে আঘাতের দাগ বলে মনে হয় বলে পুলিশ বলছে।

মামলায় কী বলা হয়েছে?
পুলিশ কর্মকর্তা মিয়া বলেছেন, মিজ মেঘলার বাবা মঙ্গলবার রাতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন বনানী থানায়। এতে আসামি করা হয়েছে মেঘলার স্বামী, শ্বশুর ও শ্বাশুড়ীকে।

মামলার আর্জিতে বলা হয়েছে, পুলিশ বলছে, এ বছরই মেঘলার বিয়ে হয়েছিল। স্বামী কানাডায় থাকেন। বিয়ের পর মেঘলা বনানীতে শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে থাকতেন। গত সপ্তাহে দেশে ফেরেন তার স্বামী।

মামলায় আরো অভিযোগ করা হয়, বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন সময় মেঘলাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো। মঙ্গলবারও শারীরিক নির্যাতনের ফলেই তার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।

আর্জিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মেঘলার লাশে আঘাতের 'প্রচুর' চিহ্ন ছিল।

বিয়ের পর মেঘলাকে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে দেয়া হতো না বলেও অভিযোগ করা হয়েছে আর্জিতে।

শিক্ষক সহপাঠীদের বিক্ষোভ :
এরই মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে মিজ মেঘলার লাশের কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে তার মুখমণ্ডলে, গলায়, হাতে এবং পায়ে অনেক কালচে দাগ দেখা যাচ্ছে।

মেঘলার সহপাঠী এবং বিয়ের আগ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের যে হলে তিনি আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন, সেই সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থীদের অনেকে ফেসবুকে অভিযোগ করে পোষ্ট দিয়েছেন মেঘলাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো।

ফেসবুকে অনেকেই এ নিয়ে পোষ্ট দিয়েছেন।

মেঘলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন।

হত্যার প্রতিবাদে ও অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধন করেছেন নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement