পুরান ঢাকার আগুন নিয়ন্ত্রণে, মৃত্যু ২
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৩ এপ্রিল ২০২১, ০৯:২৭, আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২১, ১১:৪০
রাজধানীর পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় কেমিক্যাল গোডাউনের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে হাজী মুসা ম্যানশন ভবনের ওই আগুনে দগ্ধ হয়ে দু’জন মৃত্যুসহ ১৮ জন আহত হয়েছেন। মৃত এক ব্যক্তি এই ভবনের সিকিউরিটি গার্ড ছিলেন বলে জানা গেছে। তিনি নিচতলায় থাকতেন। অপরজন নারী। তিনি ওই ভবনের উপরের তলায় পরিবারের সাথে বাস করতেন। আহতদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের তিন কর্মী রয়েছে।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এ আগুনের সূত্রপাত হয় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমান ঘটনাস্থল থেকে গণমাধ্যমকে বলেন, আগুনে এক নারী ও এক পুরুষের মৃত্যু হয়েছে। নারী ওই ভবনের বাসিন্দা। আর পুরুষ ব্যক্তি ভবনটির নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন।
ফায়ার সার্ভিস সদরদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাত ৩টার দিকে বাবুবাজার ব্রিজ সংলগ্ন আরমানিটোলা মাঠের পাশে একটি কেমিক্যাল গোডাউনে আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা। প্রথমে সাতটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে আরো ১২টি ইউনিট এতে যোগ দেয়। ১৯টি ইউনিট প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা জানান, ১৫ জনকে আহত অবস্থায় ভবনের ভেতর থেকে বের করে আনা হয়। আটকা পড়াদের উদ্ধার করতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিন কর্মীও আহত হন। তাদেরকে চিকিৎসার জন্য মিডফোর্ট ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, প্রচণ্ড কালো ধোঁয়ার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের কিছুটা বেগ পেতে হয়। কেমিক্যাল গোডাউন হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত। ভবনের পূর্ব দিকে শর্ট সার্কিট থেকে লাগা আগুন কেমিক্যাল গোডাউনে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
নিচে কেমিক্যাল গোডাউন, উপরে আবাসিক ফ্ল্যাট
পুরান ঢাকার বাবুবাজার ব্রিজের পাশে আরমানিটোলায় ছয়তলা বিশিষ্ট হাজী মুসা ম্যানশন ভবনটির নিচতলায় ১০ থেকে ১২টি কেমিক্যাল গোডাউন কয়েকটি দোকান রয়েছে ছিল। আর দ্বিতীয় তলার থেকে ছয় তলায় আবাসিক হিসেবে ১৮-১৯টি পরিবারের বাস। তবে সেহরির সময় আগুন লাগায় বাসিন্দারা সবাই জেগে ছিলেন বলে হতাহতের পরিমাণ কম হয়েছে।
এ দিকে প্রচণ্ড ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় পুরো এলাকা। এ সময় আশপাশের ভবনের বাসিন্দাদেরও সরিয়ে নেয়া হয়। বারান্দার গ্রিল কেটে ভবনের বাসিন্দাদের নামিয়ে আনা হয়। ভবনে আটকে পড়াদের উদ্ধারে ব্যবহার করা হয় ক্রেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রতিটি ফ্লোরে তল্লাশি চালান। পরে শুক্রবার ভোট সাড়ে ৫টার দিকে উদ্ধারকাজ সমাপ্ত ঘোষণা করে ফায়ার সার্ভিস।
পুরান ঢাকায় আগুন লাগার খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: সাজ্জাদ হোসাইন। তিনি আগুন নেভানো ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা ৩টা ১৮ মিনিটে আগুন লাগার খবর পাই। ৩টা ২৫ মিনিটে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে প্রচেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কেমিক্যাল গোডাউনে আমরা ফাইনাল ডাম্পিং গ্রাউন্ড করছি। এখান থেকে আমরা একজন পুরুষের লাশ উদ্ধার করেছি। এ ছাড়া ১৫ জনকে আহত অবস্থায় ভবন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। একজন দগ্ধ রয়েছেন। অন্যরা ছোটখাটো আঘাতপ্রাপ্ত। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিসের তিন কর্মী আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপর দু’জন সামান্য আহত হয়েছেন।’
আগুনের কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি হলে তার মাধ্যমে আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে আমরা জানতে পারবো। প্রাথমিকভাবে এখানে পাউডার লিকুইডজাতীয় কেমিক্যাল দেখতে পেয়েছি। যেগুলোর মোড়কে কোনো লেভেল নেই। এ সব বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন হলে তদন্তের মাধ্যমে বিস্তারিত জানা যাবে।’
এর আগে ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে অবৈধভাবে পরিচালিত কেমিক্যালের গুদামে আগুন লেগে ১২৪ জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চকবাজারের চুরিহাট্টা এলাকায় ভয়াবহ আগুনে অন্তত ৬৭ জনের মৃত্যু হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা