খালেদা জিয়াকে দুনিয়া থেকে সরাতে চায় সরকার : রিজভী
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১০ জুলাই ২০১৯, ১৩:০০, আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৯, ১৩:১০
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশের জনগণের প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার নীলনকশা তৈরী করেছে সরকার। তাকে মিথ্যা মামলায় ক্ষমতার মত্ততায় দেড় বছর বন্দী রাখা হয়েছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ। তার জামিনে এখন সরাসরি বাধা দিচ্ছেন মিডনাইট নির্বাচনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আদালতে হস্তক্ষেপ করার পাশাপাশি দেশনেত্রীর আইনজীবীদেরও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে বাধা দেয়া হচ্ছে। দেশনেত্রীর ওকালতনামায় স্বাক্ষর করতে দেয়া হচ্ছে না।
এর মাধ্যমে একজন নাগরিক হিসাবে সংবিধান প্রদত্ত আইনগত অধিকার থেকেও তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এর থেকে জুলুম আর কি হতে পারে? এখানেই প্রমানিত হয়-কর্তৃত্ববাদী সরকারের হাতের মুঠোয় থাকে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলবো-মধ্যরাতের নির্বাচনে মিথ্যা জয়ের অহংকারে, আর কত জুলুম করবেন ৭৪ বছর বয়সী একজন মহিয়সী বয়স্ক নারীকে? আর কতদিনে মিটবে আপনার নির্দয় প্রতিহিংসার তৃষ্ণা? আমি এই মূহুর্তে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তার নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।
রিজভী বলেন, এই নিশিরাতে ভোট ডাকাতির খনি প্রকাশিত হওয়ার পর এখন ভোট ডাকাত সরকারের আর এক মূহুর্তও ক্ষমতায় থাকার ন্যুনতম অধিকার নেই। সারাদেশের ১০ কোটি ৪১ লাখ ভোটারের ভোটাধিকার দস্যুবৃত্তির দ্বারা ছিনিয়ে নিয়েছে। এখন জববদখলকারী দস্যুরাই দেশ শাসন করছে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত দেশের প্রকৃত মালিক জনগণ তাদের ক্ষমতা ফিরে পাবে না।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে দেশের মালিক জনগণকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে বর্তমান ধিকৃত আগ্রাসী সরকার। ভোটারদের সাথে প্রতারণা, সন্ত্রাস ও হিস্রতা দিয়ে জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকলে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা বদলের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। তখন জনরোষে, দুর্বার আন্দোলনের মুখে এই সরকারের পতন ইতিহাসের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, নির্বাচন কমিশনকে বলবো-আপনাদের প্রকাশিত ফলাফল ও বক্তব্যে প্রমাণ হয়েছে যে, দেশে কোনো নির্বাচনই হয়নি। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও দেশের স্বনামধন্য নাগরিক সংগঠনগুলো ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে অনুসন্ধানী রির্পোট প্রকাশ করেছে।
বিবিসি বলেছে-১৯৭ কেন্দ্রে শতভাগ এবং হাজারো কেন্দ্রে ৯৫ থেকে ৯৯ শতাংশ ভোট পড়েছে, সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে বলেছে-৩০০টি আসনে ৪০১৫৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১০৩টি আসনের ২১৩টি ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে, ৯৯ শতাংশ ভোট পড়েছে ৩৫৮টি কেন্দ্রে, ৯৬ শতাংশ ভোট পড়েছে ৫১৬টি কেন্দ্রে। অর্থাৎ ১৪১৮টি ভোটকেন্দ্রে ৯৬ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ ভোট পড়েছে। সুজন সিইসিসহ সংশ্লিষ্টদের দায়ী করে সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি জানিয়েছে। আমরা মনে করি এই দাবি যথার্থ।
মূলত: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৩০০টি আসনেই ভোট জালিয়াতি ছিল নজীরবিহীন ও বিস্ময়কর। রিজভী বলেন, গত ৩০শে ডিসেম্বর ভোটের আগের রাতে গোটা দেশে ব্যালট বাক্স ভর্তি করার দালিলিক প্রমাণ এবার স্বয়ং আওয়ামী লীগের অনুগত ও গভীর আস্থাভাজন নির্বাচন কমিশন নিজেই প্রকাশ করেছে। নির্বাচনের ছয় মাস পরে নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রভিত্তিক যে ফলাফল প্রকাশ করেছে তাতে দেখা গেছে, কোনো নির্বাচনই হয় নাই বাংলাদেশে।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনও যে ফলাফল প্রকাশ করেছে তাতেও উল্লিখিত তথ্যগুলির বর্ণনা আছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা ৩০ জুন দায় স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, শতভাগ ভোট পড়া কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে যেটি ফুটে উঠেছে তাহলো এই নির্লজ্জ ভোটারবিহীন সরকারের নির্বাচন কমিশন ৩০ ডিসেম্বরের ভোট নিয়ে ভোটারদের সাথে ‘ফান’ বা হাস্যকৌতুক করেছে। বিএনপির এই নেতা বলেন, মধ্যরাতে নবআবিস্কৃত ভোট ডাকাতির অভিনব পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে জালিয়াতি করতে সহায়তা করার জন্য অবশ্যই সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্টদের বিচার হওয়া উচিৎ।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বিবেকশুণ্য পদলোভী প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেননি। এই নির্বাচন কমিশনের সাংস্কৃতিক অভিরুচির পরিসর অত্যন্ত সংকীর্ণ বলেই মিথ্যার ওপর বৈধতার সীল মেরেছে। রিজভী বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে আমাদের আবেদন, পৃথিবীর ইতিহাসে অকল্পনীয় এই ভয়াবহ ভোট চুরি ও ভোট ডাকাতির একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল করুন। উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিশন করে যারা এই অনিয়মের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ আপনার।
রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসাবে ভোট বঞ্চিত ভোটাররা দ্রুত আপনার সুবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। রিজভী আরো বলেন, গত ছয় মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ কমে গেছে। বিশ্ববাজারে দরপতনের এই সময়ে বাংলাদেশের গণবিরোধী সরকার গ্যাসের দাম গড়ে ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়িয়েছে। কৃষি, বিদ্যূৎ ও শিল্পে বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। সার উৎপাদনে বেড়েছে ৬৪ শতাংশ। ফলে জীবনযাত্রা ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যে অস্থির অবস্থা।
আন্তর্জাতিক বাজার থেকে যে গ্যাস ভারত কেনে ৬ ডলারে, পাকিস্তান কেনে ৮ ডলারে, সেখানে বাংলাদেশকে কেন তা ১০ ডলারে কিনতে হবে ? দায়দায়িত্ব জনগণকে কেনো গ্রহণ করতে হবে ? তাই আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বলবো কোনো অজুহাত দেখাবেন না। গ্যাসের দাম কমান। গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। জনগণ ক্ষোভে ফুঁসছে। অনতিবিলম্বে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা স্থগিত করুন। অন্যথায় রাজপথে নেমে জনগণ দাবী আদায় করে নিবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা