ঢাকার রাস্তায় ছোট্ট সুপারম্যান!
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ৩০ মার্চ ২০১৯, ১০:১৩
কারো কথায় নয়, অগ্নিকাণ্ডের শিকার ভবনে আটকে পড়া কোনো স্বজনের জন্য নয়, বরং নিজের ভেতর থেকে উঠে আসা দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছিল নাঈম। আগুন নেভাতে যখন পানির সঙ্কট দেখা দিচ্ছিল বারবার, তখন যেন এক ফোঁটা পানিও বাইরে পড়ে অহেতুক নষ্ট না হয়, সে চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের পানির পাইপে পলিথিন পেঁচিয়ে তার ওপর বসে পড়েছিল নাঈম। মুখ চেপে তার সেই প্রাণান্তকর চেষ্টার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে আসতেই ভাইরাল হয়ে যায় সে ছবি। প্রশংসার পর প্রশংসা আসতে থাকে তাকে নিয়ে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’-ও তাকে নিয়ে প্রতিবেদন করেছে। শিরোনাম করেছে ‘ঢাকার রাস্তায় ছোট্ট সুপারম্যান’।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার বনানীর এফ আর টাওয়ারে লাগা আগুনের লেলিহান শিখার সঙ্গে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা যখন প্রাণপণে লড়ছেন, পানির পাইপের লিক বন্ধ করে তখন দাঁতে দাঁত চেপে বসে ছিলেন নীল পোশাক পরা সুপারম্যান।
বৃহস্পতিবার দুপুরে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে সন্ধ্যা নাগাদ। ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ তো ছিলই, ছিলেন সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনীর সদস্যরাও। কিন্তু সাধারণ মানুষও যে পিছিয়ে ছিলেন না, সেই ছবি রাতেই ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। ছোট্ট একটি ছেলে কিছু পলিথিন নিয়ে লিক বন্ধ করতে বসে থাকে ফায়ার সার্ভিসের পাইপের ওপরে।
সেই ছবিই কার্টুনে ফিরে আসে, ছোট্ট ছেলেটি যেন সুপারম্যান! তবে ঢাকার সুপারম্যান বয়সে খুবই ছোট্ট, বয়স ১০ কি ১১! ফেসবুকে প্রথম তার পরিচয় জানান বনানীতে দায়িত্বে থাকা পুলিশের সার্জেন্ট সোহেল রানা- ‘আরে এ তো নাঈম!’।
তিনি আরো জানান, ছেলেটি থাকে কড়াইল বস্তিতে। মাঝে মাঝে এসে আলাপ জমায় পুলিশ বক্সে। তার বাবা অন্য কোথাও বিয়ে করে সংসার করছে। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে। মামি খেতে দিলে খেতে পায়, না হলে জোটে না। এর মধ্যেও বস্তির আনন্দ স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে, কারণ বড় হয়ে সে পুলিশ হতে চায়।
সার্জেন্ট লিখেছেন, ‘আমরা তাকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে উৎসাহ দিই। আমার সঙ্গে থাকতে ভালবাসে সে। তার দুঃখের কথা বলে। ছোট্ট ছেলে, কিন্তু বড় সুন্দর কথা বলে নাঈম।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে ৩২ নম্বরের এফ আর টাওয়ারে আগুন ছড়িয়ে পড়লে সবাই আগুন নেভাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। নাইমও বসে থাকেনি। লম্বা পাইপ এঁকে বেঁকে যে পানি নিয়ে আসছে, ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তা দিয়ে আগুন নেভাতে চেষ্টা করছেন।
তেমনই একটা পাইপে একটা ছিদ্র দেখতে পেয়ে প্রথমে হাতে করে চেপে ধরে নাইম। তাতেও পানি বেরিয়ে আসছে দেখে শুয়ে পড়ে সেটা বুকে চেপে ধরে। সেই সময়ে কিছু পলিথিন এনে দেয় কেউ। তা দিয়েই অদম্য জেদে লিক বন্ধ করে বসেছিল ছোট্ট ছেলেটি। টানা কয়েক ঘণ্টা!
পরদিন শুক্রবার সকাল হতেই খোঁজ পড়ে নাইমের। পুলিশ গিয়ে নিয়ে আসে তাকে। মুখে লাজুক হাসি নিয়ে বলে, ‘আমি মানুষের সাহায্য করেছি। মানুষের উপকার করার চেষ্টা করেছি।’ যেন- এ আর কী!
কিন্তু ওইদিন যে সব জায়গায় তার ছবি ছড়িয়ে পড়েছে তা সে জানে কি না জিজ্ঞাসা করা হলে সে উত্তর দেয়, ‘হ, আমি শুনসি। আমারে অনেকে কইসে!’ লাজুক কণ্ঠেই নাঈম পাশে দাঁড়ানো সার্জেন্ট রানাকে দেখিয়ে জানিয়েছে, ‘আমি বড় হয়ে এই স্যারের মতো হইতে চাই। পুলিশ হইতে চাই। পুলিশ হইলে মানুষের সাহায্য করা যাইব!’