১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

'বৃক্ষ-মানব' বাজানদার আবার হাসপাতালে, কেন এমন হলো?

বৃক্ষ-মানব হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ আবুল বাজানদার - সংগৃহীত

দীর্ঘ আট মাস পর আবারো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ফিরে এসেছেন বৃক্ষ-মানব হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ আবুল বাজানদার। তার অসুখ সারেনি, হাতে আবারো আগের মতোই গজিয়ে গেছে শেকড়।

গত বছরের মে মাসে কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজ বাড়ি খুলনায় চলে গিয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু দীর্ঘদিন চিকিৎসা না নেয়ার কারণে হাতে আবারও আগের মতো শেকড় গজিয়ে গেছে মিস্টার বাজানদারের।

"বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি মোটেও সঠিক ছিল না" - সোমবার বিবিসি বাংলাকে বললেন আবুল। তবে তার ফিরে যাওয়ার বিষয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে তার কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল বলে উল্লেখ করছেন তিনি।

বাজানদার বলেন, "আমাকে স্যারেরা (ডাক্তাররা) যখন জানালেন যে আমার হাত পুরোপুরি ঠিক হবে না, এটা মাঝে মাঝেই গজাবে আর সেটা অপারেশন করতে হবে। এটা জেনে আমি মানসিকভাবে দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই।"

এমন অবস্থায় বাজানদার চিকিৎসকদের জানান যে তিনি নতুন করে আর কোনো অস্ত্রোপচার করবেন না, বাড়ি ফিরে যাবেন। যদি এই শেকড় বাড়তে থাকে, তাহলে তিনি পুনরায় চিকিৎসা নিতে আসবেন।

তার এমন সিদ্ধান্তের কথা শুনে চিকিৎসকরা বিষয়টি লিখিত আকারে সই করার শর্ত জুড়ে দেন বলে জানান বাজানদার। সেই কাগজে সই করলে পরবর্তী চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় কাউকে কিছু না জানিয়েই হাসপাতাল ছেড়ে যান তিনি।

"আমি স্যারেদের (ডাক্তারদের) বলেছি আমার রোগটা যেহেতু পুরোপুরি সারবে না, তারা যেন আমাকে ছুটি দেন, আমি বাড়ি যাব। কিন্তু আমি সই করতে চাইনি। যদি চিকিৎসা আর না পাই এই ভয়ে। কিন্তু সবাই যে বলছে আমি পালিয়ে গেছি। আমি আসলে পালিয়ে যাইনি।"

তবে বাজানদারের এই চিকিৎসা না পারার আশঙ্কাকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়কারী ডাক্তার সামন্ত লাল সেন।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, "বাজানদারের এখান থেকে চলে যাওয়ার পেছনে মান অভিমান অনেক কিছুই আছে। তার হয়তো মনে হয়েছিল এখানে তার সঙ্গে কেউ কেউ ভালো ব্যবহার করেনি। পরে এলে তাকে ভর্তি করবে না।

"এসব কিছুই তার ভুল ধারণা। আমরা চিকিৎসকরা রোগকে প্রাধান্য দেই - রোগীকে না। রোগী যেই হন, যেমনই হন আমরা তার চিকিৎসা করবোই।"

ছেলের ভুল হয়েছে স্বীকার করেছেন মা আমেনা বিবিও।

বাজানদারের যাবতীয় চিকিৎসার ব্যয়ভার সরকার বহন করায় কিছুটা স্বস্তিতে আছেন ঠিকই, তবে ছেলের শারীরিক অবস্থার দিন দিন অবনতি হতে থাকায় প্রতিনিয়ত উদ্বেগের মধ্যে থাকতে হয় তাকে।

তার দাবি বাজানদারের চিকিৎসা যেন পুনরায় শুরু করা হয়।

আমেনা বিবি বলেন, "আমার ছেলে না হয় ছোট মানুষ ভুল করেছে, বাড়ি চলে গিয়েছে। আমি থাকলে স্যারেদের (ডাক্তারদের) বুঝায় বলতাম। আমি চাই আমার ছেলে চিকিৎসার মধ্যে থাকুক। তারা আমার ছেলেকে সুস্থ করে আমার কোলে ফিরায়ে দেবে আমি সেই আশাই করি।"

আবুল বাজানদার খুলনায় নিজের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পরও ডাক্তার সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে তার বেশ কয়েকবার ফোনে কথা হয়। ড. সেন প্রতিবারই তাকে ফিরে আসার কথা বলেন।

আবুল বাজানদার ঠিক কি কারণে হাসপাতাল ছেড়েছিল, তার কোনো অভিযোগ ছিল কিনা সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলেননি ড. সেন।

তিনি বলেন, "ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাত্র দুই শ' রোগীর জনবল দিয়ে সাড়ে পাঁচ শ' রোগীর চিকিৎসা দেয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে অনেকের অভিযোগ থাকতেই পারে। আমি সেটা অস্বীকার করি না। তবে আশা করি সামনে আর কোনো অভিযোগ থাকবে না। এ বিষয়টা আমি খেয়াল রাখব।"

টানা দুই বছর চিকিৎসার পর আবুল বাজানদার অনেকটা সুস্থ হয়ে এলেও দীর্ঘদিন চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে না থাকায় এবার তার হাতে-পায়ে আবারো আগের মতো শেকড়ের গজিয়ে উঠতে দেখা যায়।

এ অবস্থায় বাজানদারের চিকিৎসা নতুন করে শুরু করতে হবে বলে জানিয়েছেন ডা. সেন।

বেলা ১১টার দিকে ৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড বাজানদারের পরবর্তী চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে তিনি জানান। প্লাস্টিক সার্জারি, চর্মরোগ, এনেসথেশিয়া ও প্যাথলজি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে বোর্ডটি গঠন করা হবে।

গত ১০ বছর ধরে হাত-পায়ে শেকড় মতো গজানোর মতো বিরল এক জেনেটিক রোগে ভুগছেন আবুল বাজানদার।

মেডিকেলের ভাষায় এপিডার্মো ডিসপ্লেশিয়া ভেরুকোফরমিস ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে তার এমনটা হয়ে থাকে। বিষয়টি গণমাধ্যমের নজরে এলে ২০১৬ সালে ঢাকা মেডিকেলে রাষ্ট্রীয় খরচে আবুল বাজানদারের চিকিৎসা শুরু হয়।


আরো সংবাদ



premium cement
আদালতে মুখ খোলেননি মুনতাহা হত্যা মামলার প্রধান আসামি মার্জিয়া দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করাই দেশের জন্য কল্যাণকর : মির্জা ফখরুল শহীদ জিয়া কমপ্লেক্স নির্মাণসহ ১৯ দফা দাবি ইবি ছাত্রদলের ‘আমার ছেলেকে কেন পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হলো?’ মনোহরদীতে চোর সন্দেহে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা আমেরিকা নিজের দুর্বল হয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করছে : ইরান শহীদ জিয়া কমপ্লেক্স নির্মাণসহ ১৯ দফা দাবি ইবি ছাত্রদলের ‘বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের আবর্তে আটকা পড়েছে’ চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলপথে ৩০টি ভারতীয় ওয়াগন পৌঁছেছে পাবনায় বিএনপির দু'গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১ কেউ যেন অর্থপাচার না করতে পারে সেই ব্যবস্থা করে যাবো : অর্থ উপদেষ্টা

সকল