২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৫ শাবান ১৪৪৬
`

অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা গ্রহণে বাধা দেয়া হয় : ওএইচসিএইচআর

অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা গ্রহণে বাধা দেয়া হয় : ওএইচসিএইচআর - ছবি : সংগৃহীত

জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার দফতর জানিয়েছে, গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় রাস্তায় বিক্ষোভে আহতদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা গ্রহণে বাধা প্রদান এবং কিছু জায়গায় তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে।

এই মাসের শুরুতে প্রকাশিত জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার দফতরের তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেখানে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা সহিংসতার আশঙ্কা বিবেচনা করেন বা বল প্রয়োগের প্রত্যাশা করেন, সেখানে কর্তৃপক্ষকে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

ওএইচসিএইচআর বা মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় বলেছে, ‘ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবহৃত বল প্রয়োগের বৈধতা নির্বিশেষে আহত বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সহায়তা এবং চিকিৎসা সেবা দিতে হবে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিকিৎসা সেবার বিষয়টি ‘বেশিভাগ ক্ষেত্রেই অন্যান্য বিক্ষোভকারী এবং উদ্বিগ্ন স্থানীয় নাগরিকদের উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছিল, প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান এবং আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বরতদের মধ্যে অনেক রিকশাচালকও ছিলেন।

ওএইচসিএইচআর বলেছে, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর অবহেলার কারণে এইসব লঙ্ঘনের ফলে আহতদের মধ্যে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে।’

ভিডিও এবং ছবি থেকে নিশ্চিত হওয়া ভুক্তভোগী এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে- তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা প্রদানে জন্য সহায়তার পরিবর্তে পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে সময়মত চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করেছে।

প্রতিবেদনে ১৮ জুলাই রাজধানীর উপকণ্ঠে সাভারে শাইখ আশহাবুল ইয়ামিন নামে একজনের মৃত্যুর উদাহরণও উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে তিনি নীল রঙের পুলিশের সাঁজোয়া যানে (এপিসি) উঠার সময় তাকে ‘বারবার পুলিশের গুলিবিদ্ধ’ করার উদাহরণ দেয়া হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯ জুলাই একটি হেলিকপ্টার একটি হাসপাতালের সামনে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে, এতে প্রবেশের চেষ্টা করা লোকজন তাড়িয়ে দেয় এবং একই দিনে আহত বিক্ষোভকারীদের জন্য অস্থায়ী চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত একটি গ্যারেজে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।

৪ আগস্ট ফার্মগেট এলাকায় পুলিশ ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরকে গুলি করে আহত করে এবং পরে ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা আহত ছেলেটিকে রিকশায় তুলে সরিয়ে নিয়ে যেতে চালককে নির্দেশ দেয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিন্তু অন্য পুলিশ কর্মকর্তারা রিকশাটিকে পাশের হাসপাতালে যেতে বাধা দেয়। একজন পুলিশ অফিসার চালককে আহত ছেলেটিকে ড্রেনে ফেলে দেয়ার নির্দেশ দেয়। শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করেন এবং তাকে যেতে দেন। কিন্তু আহত ছেলেটিকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, ততক্ষণে তিনি মারা যান।

ওএইচসিএইচআর বলেছে, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছে যে আধাসামরিক বাহিনী ৩২ জন আহত বিক্ষোভকারীর জন্য নিজস্ব উদ্যোগে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করেছে, তবে ওএইচসিএইচআর কর্তৃক নথিভুক্ত সামগ্রিক প্যাটার্নের ‘এটি ব্যতিক্রম বলে মনে হবে’।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওএইচসিএইচআর যে প্রমাণ পেয়েছে তাতে দেখা গেছে যে পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী একইভাবে গুলিবর্ষণের শিকারদের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান, জরুরি পরিবহন বা আহত বিক্ষোভকারী এবং পথচারীদের অন্যান্য সহায়তা দেয়ার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

এতে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানার আশপাশে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে আহত বিক্ষোভকারীদের সহায়তাকারী স্থানীয় এক ব্যক্তিকে আটক করে ‘শত্রুদের’ সহায়তা করার অপরাধে শাস্তি হিসেবে তাকে চারবার গুলি করা হয় এবং তাকে বলতে বাধ্য করে যে সে কোথায় গুলি খেতে চায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘লোকটি প্রাণভিক্ষা চেয়েছিল, কিন্তু একজন কর্মকর্তা তখনই খুব কাছ থেকে তার পায়ে একবার গুলি করে। কর্মকর্তা রক্তাক্ত ওই ব্যক্তিকে টেনে-হিঁচড়ে নর্দমায় ফেলে রেখে যান।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই), ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসআই), পুলিশের গোয়েন্দা শাখা এবং অন্যান্য সংস্থাগুলো হাসপাতালগুলোকে নজরদারিতে রাখা, গুলিবিদ্ধ রোগীদের শনাক্তকরণ, স্বাস্থ্যকর্মী ও আহত রোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের আঙুলের ছাপ নেয়ার জন্য ব্যাপক অভিযান চালানোর সময় চিকিৎসা সেবায় বাধা সৃষ্টি করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভকারীদের শনাক্ত করতে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতার ব্যাপকতার প্রমাণ গোপন করতে তারা যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই অনেক হাসপাতালের মেডিক্যাল রেকর্ড এবং সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ করেছে।

ওএইচসিএইচআর বলেছে, চিকিৎসা কর্মীদের আহত বিক্ষোভকারীদের প্রয়োজনীয় যত্নের সাথে চিকিৎসা না করার জন্য এবং আঘাত এবং তাদের কারণগুলো সঠিকভাবে রেকর্ড করা মেডিক্যাল ডকুমেন্টেশন সরবরাহ না করার জন্য চাপ দেয়া হয়েছিল, যখন ওএইচসিএইচআর প্রাপ্ত সাক্ষ্যগুলো ইঙ্গিত দেয় যে উপরের নির্দেশের ভিত্তিতে বাধা দেয়া হয়েছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের বিভিন্ন হাসপাতালে বিভিন্ন নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনীর মধ্যে একই ধরনের বাধার কারণেও এ ধরনের আদেশের অস্তিত্বের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে পরিবারগুলোকে সহিংসতায় মারা যাওয়া প্রিয়জনদের কবর দিতেও দেরি করিয়ে দেয়া হয়। কারণ, ময়নাতদন্ত করা হচ্ছিল না এবং পুলিশও পরিবারগুলোকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিতে দিচ্ছিল না।
সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement
বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে দক্ষ মানবসম্পদ জরুরি জলাভূমি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ : ড. আইনুন নিশাত আদালতে স্বীকারোক্তি : নোয়াখালীতে চুরির সময় চিনে ফেলায় নারীকে কুপিয়ে হত্যা পেছন থেকে বিএনপির সাইনবোর্ড সরে গেলে বাজারে কেউ মূল্য দেবে না : আলাল পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সাথে ভারত সরাসরি জড়িত : ডা: তাহের ইবি জিয়া পরিষদের নেতৃত্বে ড. ফারুক-রফিক জেলেনস্কিকে অবশ্যই আলোচনা করতে হবে : মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতহানির ঘটনায় গ্রেফতার আরো ২ কুলাউড়ায় যুবলীগ নেতার কবল থেকে ১২ বছর পর সরকারি রাস্তা উদ্ধার মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে : রংপুর ডিসি ইউক্রেনের বিষয়ে জাতিসঙ্ঘের প্রস্তাবে রাশিয়ার পক্ষ নিলো যুক্তরাষ্ট্র

সকল