১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪ মাঘ ১৪৩১, ১৭ রজব ১৪৪৬
`

সেফটি প্ল্যান ছিল না হাজারীবাগের আগুন লাগা ভবনটির

আগুনে ২৩ দোকান পুড়ে যাওয়ায় নিঃস্ব জাহাঙ্গীর
হাজারীবাগের আগুন লাগা ভবনটির সেফটি প্ল্যান ছিল না বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস - ছবি : নয়া দিগন্ত

রাজধানীর হাজারীবাগে যে ভবনটিতে শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) আগুন লেগেছে সেটির সেফটি প্ল্যান ছিল না বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। বাহিনীটি জানিয়েছে ইলেকট্রনিক শর্ট সার্কিট কিংবা সিগারেটের কারণে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।

এদিন দুপুর ২টার দিকে লাগা এ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে।

পরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেনেন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘আগুনের সূত্রপাত এখনো বের করা যায়নি। তবে ইলেকট্রনিক শর্ট সার্কিট কিংবা সিগারেটের কারণে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। তদন্তের পর মূল কারণ জানা যাবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘দাহ্য পদার্থের কারণে হাজারীবাগ বাজারের ফিনিক্স লেদারের গোডাউনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিসকে। ভবনটিতে ছিল না কোনো সেফটি প্ল্যান।’

ভবনের মালিককে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার নোটিশও দেয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি।

তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এটি পুরোনো একটি ভবন। ভবনটিতে মিশ্র পদার্থ ছিল, কাঁচামাল, প্লাস্টিক, গার্মেন্টস পণ্য এবং উপরে ছিল জুতার কারখানা। জুতার কারখানায় বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ রয়েছে। আমরা ভয় পাচ্ছিলাম এখানে ঘিঞ্জি এলাকা, আগুন বিস্তার লাভ করলে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটতো। সেটি আমরা রোধ করতে পেরেছি, এটি আমাদের বড় সফলতা।’

তিনি আরো বলেন, ‘এটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মতোই। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লেগেছে প্রায় তিন ঘণ্টা। আমাদের সক্ষমতার পুরোপুরি কাজে লাগানো যায়নি। কারণ পানির সংকট, ভেতরের দাহ্য বস্তু, উৎসুক জনতার ভিড় ও চাপা (সরু) রাস্তা।’

‘ভবনটিতে ছিল প্লাস্টিক, লেদারসহ দাহ্য বস্তুর কারখানা। ছিল না কোনো অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। ভবনে ফায়ার সেফটির কোনো প্ল্যান ছিল না। কয়েকবার নোটিশও দেয়া হয়েছিল ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে।’

আগুন ভবনটির ৫, ৬ ও ৭ তলা পর্যন্ত ছড়িয়েছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘নিচের দিকে আগুন ছিল না। সরকারের আইনে ফায়ার সেফটি অবশ্যই থাকতে হবে। কিন্তু এই ভবনটিতে দাহ্য পদার্থ থাকার পরেও কোনো ফায়ার সেফটি ছিল না। আগুন ছড়িয়ে পড়লে হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারতো।’

তিনি বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের সব ইকুইপমেন্ট এখানে আনা সত্ত্বেও আমরা কাজ করতে পারিনি। কারণ এখানকার রাস্তা অনেক ছোট এবং ভবন একটির সাথে আরেকটি লাগানো। আমরা ১৩টি ইউনিট এনেছিলাম, কিন্তু সব ইউনিট কাজ করতে পারিনি।’

ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণ হলেও এখনো নির্বাপণ হয়নি। আগুন নির্বাপণের পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।’

জাহাঙ্গীরকে নিঃস্ব করলো আগুন
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ‘জাহাঙ্গীর ফ্রেম ঘর’র মালিক মো: জাহাঙ্গীর জানান, তার গোডাউনে প্রায় দেড় কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও মেশিনারি ছিল। আগুনে তার ২৩ বছরের সাজানো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিমিষেই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুন তাকে একেবারেই নিঃস্ব করে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, এর আগে করোনার পর ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি, এখনো প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টাকার ঋণের বোঝা রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো: মাসুম জানান, পুরো সাততলা ভবনে প্লাস্টিকের পণ্য জুতা, পাঞ্জাবি ও জামা-কাপড়ের কারখানার জন্য ভাড়া দেয়া ছিল। এসব কারখানায় আড়াই শ’র মতো শ্রমিক কাজ করতেন।


আরো সংবাদ



premium cement