এলিফ্যান্ট রোডে ২ ব্যবসায়ীকে কোপালো দুর্বৃত্তরা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩:৫৪
রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে ‘মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের’ সামনে গাড়ি আটকে দুই কম্পিউটার ব্যবসায়ীকে চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা।
গতকাল শুক্রবার রাত পৌনে ১১টায় রাস্তায় প্রকাশ্যে ১২ থেকে ১৫ জন দুর্বৃত্ত মাস্ক ও হেলমেট পরা অবস্থায় এ ঘটনা ঘটায়।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পুলিশের ফাঁড়ি সামনে-পেছনে, ছিল ট্রাফিক বক্সও তবুও দুই ব্যবসায়ীর বাঁচার আকুতি-চিৎকারে কেউ এগিয়ে আসেনি।
দুর্বৃত্তদের এক থেকে দেড় মিনিটের অতর্কিত হামলার শিকার দুই ব্যবসায়ী হলেন- এলিফ্যান্ট রোড কম্পিউটার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ওয়াহেদুল হাসান দীপু ও ইপিএস কম্পিউটার সিটির (মাল্টিপ্লান) যুগ্ম সদস্য সচিব এহতেসামুল হক।
পরে তাদের উদ্ধার করে পপুলার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। তাদের হাতে ও পায়ে মারাত্মক জখম নিয়ে এহতেসাম এখনো হাসপাতালে ভর্তি। আর হাতে জখম হওয়া দীপুকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকে হামলার ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে চাপাতি দিয়ে কোপানোর নৃশংসতা ফুটে উঠেছে।
অপরদিকে দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার করতে শনিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে মাল্টিপ্ল্যান মার্কেটের সামনে মানববন্ধন করেছেন ব্যবসায়ীরা। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যবসায়ীরা।
ভুক্তভোগী আহত ব্যবসায়ী ওয়াহেদুল হাসান দীপু বলেন, আমরা একসাথেই ইপিএস কম্পিউটার সিটির (মাল্টিপ্ল্যান) অফিস থেকে বের হয়েছি। ওনার বাসা জিগাতলায়। কখনো সায়েন্স ল্যাবের সামনে থেকে উনি রিকশা নিয়ে চলে যান। কাল রাতে উনি হেঁটে বাসার উদ্দেশে রওনা দেন। আমি বের হই গাড়ি নিয়ে। সাথে ছিল দু’জন বন্ধু আর ড্রাইভার। ড্রাইভার যখন সামনে যাচ্ছিল মুখোশ পরা একজনকে দেখি রাস্তার মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে। আমার গাড়ি যত সামনে যাচ্ছিল ওই মুখোশধারী তত কাছে আসছিল। আমি যখন ড্রাইভারকে বললাম গাড়ি ব্যাক করো। এর মধ্যেই দৌড়ে এসে গাড়িতে কোপানো শুরু করল। সামনেই এহতেসামুল হককে কোপানো হচ্ছিল। উনি বারবার বাঁচান বাঁচান বলে চিৎকার করছিলেন। আমার গাড়িতেও কোপানো হচ্ছিল। আমি তখন নিজেই দৌড়ের ওপরে ছিলাম।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) রাত পৌনে ১১টার দিকে যখন এ হামলার ঘটনা ঘটে তখন সড়ক সচল, যানবাহনও চলছিল। কিন্তু দুই ব্যবসায়ীর বাঁচার আকুতি-চিৎকারে কেউ এগিয়ে আসেনি। অথচ খুব নিকটেই ছিল পুলিশের ফাঁড়ি, সামনে-পেছনে ছিল ট্রাফিক বক্সও।
তিনি বলেন, ওদের (হামলাকারীদের) এলোপাথাড়ি কোপে গাড়ির গ্লাস ভেঙে যায়, লুকিং গ্লাস খুলে যায়। দরজা খোলার চেষ্টা করে। আমি লাথি দিয়ে একজনকে ফেলে দিই। এরপর দৌড়ে নেমে মাল্টিপ্ল্যানে ব্যবসায়ী অফিসে ঢুকে পুলিশকে ফোন করি, ৯৯৯-এ ফোন করে জানাই।
দীপু অভিযোগ করেন, চাপাতি দিয়ে কোপানো হয়েছে। ২০ থেকে ২২ জনের মতো ওরা ছিল। বেশ কয়েকজন হামলায় অংশ না নিয়ে দাঁড়িয়েছিল পকেটে হাত দিয়ে। হয়ত ওদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। সুযোগ পেলে গুলি করে দিত।
বৃহত্তর এলিফ্যান্ট রোড ব্যবসায়ী সমিতির এক সদস্য বলেন, মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারে মূলত কম্পিউটারের ব্যবসা। সেখানে মাসে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়। একটা ছোট বিজ্ঞাপন দিতে গেলেও চাঁদা দিতে হয়। সার্ভিস চার্জের নামে মার্কেটে থাকা আট শতাধিক দোকান থেকে কমপক্ষে পাঁচ হাজার করে চাঁদা তোলা হয়, যার বেশিভাগই যায় সমিতির নেতৃস্থানীয় পর্যায়ের পকেটে।
তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর মার্কেট ও সমিতির নিয়ন্ত্রণে পরিবর্তন আসছে, নতুন কমিটি হয়েছে। সেই কমিটির নেতৃত্বে যিনি আসীন তিনি সম্প্রতি জেল থেকে মুক্তি পাওয়া পিচ্চি হেলালের ছোট ভাই দীপু। সেই দীপুই কাল রাতে আহত হয়েছে। সুতরাং দ্বন্দ্ব বা ভাগবাটোয়ারার ক্যাচাল স্পষ্ট। এটাই বড় কারণ মনে করেন ব্যবসায়ী সমিতির এ সদস্য।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশের নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার তারিক লতিফ বলেন, দুই ব্যবসায়ীর ওপর মার্কেটের সামনে অতর্কিতভাবে হামলার ঘটনায় জড়িতদের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে শনাক্তের চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করা হয়েছে। শিগগিরই দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার করা হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা