২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
আহত ফায়ার সার্ভিস কর্মীর মৃত্যু

সচিবালয়ের আগুন নিয়ন্ত্রণে এত সময় লাগল কেন

সচিবালয়ের আগুন নিয়ন্ত্রণে - সংগৃহীত

বাংলাদেশ সরকারের সচিবালয়ে রাত পৌনে ২টায় লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ছয় ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে এতগুলো ইউনিটের এত সময় কেন লেগেছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহেদ কামাল বলেছেন, ‘জায়গাটা কনফাইনড (আবদ্ধ)।’

তিনি বলেছেন, ‘সব কক্ষ ভেতর থেকে আটকানো থাকায় গ্লাস বা দরজা ভেঙে পানি দিতে হয়েছে। এতে সময় লেগেছে। ভবনজুড়ে বিদ্যুতের তারের সংযোগের কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় নেভাতে বেগ পেতে হয়।’

এছাড়া রুমগুলোতে ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয় বলে জানান তিনি।

তবে পানির সঙ্কট ছিল না বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ডিজি। তিনি বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা ছিল আগুন যেন ছয় তলার নিচে আসতে না পারে।’

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ৭ নম্বর ভবন ছাড়া অন্য কোনো ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।

বুধবার দিবাগত রাতে লাগা আগুন ছয় ঘণ্টার বেশি সময় পরে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

বুধবার রাত ১টার পর সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

ওই ভবনটিতে ডাক-টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ অবস্থিত বলে জানা যাচ্ছে।

তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।

এর আগে রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ের ওই ভবনে আগুন লাগার সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। এর মিনিট দুয়েক পরই সচিবালয়ে অবস্থিত ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটটি আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে। আগুনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় পর্যায়ক্রমে ২০ ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।

তবে বাহিনীটির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহেদ কামাল জানিয়েছেন, স্থান স্বল্পতার কারণে ১০টি ইউনিট কাজ করতে সক্ষম হয়।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টায় আগুন লাগা ভবনটির বিভিন্ন জানালা দিয়ে গলগল করে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়।

ওই সময় দু’টি বড় ল্যাডার দিয়ে পানি ছেটানো হচ্ছিল। সকাল হতেই আস্তে আস্তে কর্মস্থলে যোগ দিতে সচিবালয়ের কর্মীরা অফিসে আসতে থাকেন। বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে তাদের প্রবেশের জন্য সচিবালয়ের ৫ নম্বর ফটক খুলে দেয়া হয়। ফটক খুলে দিলে বাইরে অপেক্ষমাণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকতে থাকেন।

সচিবালয়ের চারপাশে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের ভিড় দেখা গেছে, আশপাশ থেকে অনেকে আগুন লাগার খবর পেয়ে এসেছেন।

যদিও নিরাপত্তা কর্মীরা বাইরের কাউকে সচিবালয় প্রাঙ্গনে ঢুকতে দিচ্ছিলেন না। নিরাপত্তার কারণে সচিবালয় সংলগ্ন সড়কটি আটকে দেয়া হয়েছিল। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে।

এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আগুন লাগে ষষ্ঠতলায়। আমাদের ফায়ার সার্ভিসে রাত ১টা ৫২ মিনিটে খবর দেয়া হয়, তারা ১টা ৫৪ মিনিটে কাজ শুরু করে। সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে। এই ঘটনায় আমাদের ফায়ার ফাইটারের একজন শাহাদাত বরণ করেছেন। তিনি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তিনি একটি পাইপ নিয়ে সচিবালয় থেকে বের হয়েছিলেন। এ সময় একটা ট্রাক তাকে ধাক্কা দিয়ে তাকে আহত করেন। পরে তিনি মারা যান। তার সঙ্গে আরো দুই থেকে তিনজন আহত হয়েছেন। তারা সবাই সুস্থ আছেন।

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমরা একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে দিচ্ছি। মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে এরই মধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একটা উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করার জন্য।

আগুনের উৎসের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, এটা তদন্তের পরে বলতে পারব।

এদিকে সচিবালয়ে আগুন নেভানোর সময় ট্রাকচাপায় আহত হওয়া ফায়ার সার্ভিস কর্মী মো: সোহানুর জামান নয়নের মৃত্যু হয়েছে। তিনি রংপুরের মিঠাপুকুর থানার আটপনিয়া গ্রামের আক্তারুজ্জামানের ছেলে। তিনি তেজগাঁও ফায়ার টিমের স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদস্য।


আরো সংবাদ



premium cement