২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ঢাকার গৌরবময় ঐতিহ্য আহসান মঞ্জিল

আহসান মঞ্জিল - নয়া দিগন্ত

আহসান মঞ্জিল নামটা শুনলেই নবাবদের শাসনামল চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের জানাতে এবং জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে এই ঐতিহাসিক স্থাপনা।

আহসান মঞ্জিল পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কুমারটুলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এটি ঢাকার নবাবদের হাতে নির্মিত না হলেও তাদের আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদারির সদর কাচারি হিসেবেই পরিচিত। এর প্রতিষ্ঠাতা নওয়াব আবদুল গনি। তিনি তার পুত্র খাজা আহসানউল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেন।

অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে আহসান মঞ্জিলের এই জায়গায় একটি রংমহল ছিলো। এটি নির্মাণ করেছিলেন তখনকার জমিদার শেখ এনায়েতউল্লাহ। তার ছেলে মহলটি ফরাসি বণিকের কাছে বিক্রি করে দেন। আরো পরে খাজা আলিমুল্লাহ ফরাসিদের কাছ থেকে আবার কিনে নেন। তার ছেলে নবাব আবদুল গণি ১৮৫৯ সালে বর্তমান অবয়বে আহসান মঞ্জিলের নির্মাণকাজ শুরু করেন। সেই কাজ শেষ হয় ১৮৭২ সালে। ১৮৯৭ সালের এক টর্নেডোয় ভবনটির অনেক ক্ষতি হয়, পরে নবাব আহসানুল্লাহ তা আবার সংস্কার করেন।

মঞ্জিলটি দুটি অংশে বিভক্ত। পূর্বপাশের গম্বুজযুক্ত অংশকে বলা হয় প্রাসাদ ভবন অথবা রংমহল। পশ্চিমাংশের আবাসিক প্রকোষ্ঠাদি নিয়ে গঠিত ভবনকে বলা হয় অন্দরমহল। আহসান মঞ্জিলের উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে দোতলা থেকে সরাসরি প্রাসাদের আঙিনায় নামার প্রশস্ত সিঁড়ি। নিচতলার পূর্ব দিকে রয়েছে ডাইনিং হল, পশ্চিমাংশে রয়েছে বিলিয়ার্ড কক্ষ, দরবার হল ও কোষাগার। প্রাসাদ ভবনটির উভয় তলার উত্তর ও দক্ষিণে রয়েছে বারান্দা। অনেকবার সংস্কার, সৌন্দর্যবর্ধন, পরিমার্জনের পর ১৯৯২ সালে আহসান মঞ্জিল জাদুঘর পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

আহসান মঞ্জিল ভ্রমণের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ জাদুঘরের সংগ্রহশালা। মোট চার হাজার ৭৭টি নিদর্শন আহসান মঞ্জিলের ২৩টি কক্ষে প্রদর্শনীর জন্য উন্মুক্ত করা আছে। নয়টি কক্ষ সেই নবাবি আমলের মতো করেই সাজানো রয়েছে। প্রতিটি কক্ষ সেই নবাবি আমলের ইতিহাসের কাছে নিয়ে যায়। নবাবদের ব্যবহৃত বড় বড় আয়না, বিশাল লোহার সিন্দুক, কাঠের আলমারি, ডাইনিং রুম, ড্রয়িং রুম, কাচ ও চিনামাটির থালা-বাসন, হাতির মাথার কঙ্কাল, ঢাল ও তরবারি। নওয়াব আমলের বিভিন্ন ধরনের অলংকৃত রুপা, ক্রিস্টালের তৈরি চেয়ার-টেবিল, সিংহাসন, বিভিন্ন ধরনের তৈলচিত্র, ফুলদানি, হিন্দুস্থানি রুম, রাজকীয় অতিথিদের বেডরুম ও নাচঘর। আরো আছে সমসাময়িককালের বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি ও নবাবদের বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের নিদর্শন।

এখানের একজন কর্মচারীর সাথে কথা বলে জানা যায়, আহসান মঞ্জিলে প্রবেশের জন্য বড়দের টিকিট মূল্য ২০ টাকা এবং বড়দের নেয়া হয় ৪০ টাকা করে। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষজন এখানে ঘুরতে আসে। তবে শুক্রবারে এখানে বেশি ভিড় হয়। বিদেশী পর্যটকরাও আসেন, ছবি তুলেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও শিক্ষার্থীরা আসে।

দর্শনার্থী হাসিবুল বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ২০ জন বন্ধু আজ এসেছি। এখানে আমি এই প্রথম এসেছি। নবাবদের ঐতিহ্য ও স্মৃতি বইয়ে পড়েছি। বাস্তবে তা দেখার অনুভূতি সত্যিই আলাদা।

আরেক দর্শনার্থী সিফাত বলেন, আমি আগেও এখানে এসেছি। ভিতরে পুরাতন ঐতিহ্যের নৃতাত্ত্বিক একটা ভাইব আছে। নতুন প্রজন্মের নবাবি নিদর্শন স্বচক্ষে দেখতে আসা উচিত। তবে কর্মচারীদের আবাসন এই আঙ্গিনার বাইরে নেয়া উচিত। তাহলে মঞ্জিলের এলাকাটি আরো সুন্দর লাগবে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল