২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সরগরম পশুর হাট অনলাইনেও ব্যাপক সাড়া

সরগরম পশুর হাট অনলাইনেও ব্যাপক সাড়া - ছবি : সংগৃহীত

ঈদের আগে শেষ সময়ে এসে উত্তাপ বাড়ছে কোরবানির পশুহাটের। দরদাম যাচাই-বাছাইয়ের পর এবার পছন্দের পশু কিনছেন ক্রেতারা। ক্রমেই সরগরম হচ্ছে রাজধানীর সবকটি পশুহাট। ঈদের আগে আজ মঙ্গলবারই হাটের শেষ দিন। যদিও ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত পশু কেনাবেচার সুযোগ রয়েছে, তবে সেই অপেক্ষায় না থেকে আজ শেষ দিনেই পুরোদমে জমবে কোরবানির পশু কেনাবেচা।

এ দিকে করোনার কারণে অনেকে কোরবানির পশু কিনতে অনলাইনে শরণাপন্ন হওয়ায় সেখানে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে।
গতকাল রাজধানীর কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেছে, দাম যাচাই-বাছাইয়ের পর ক্রেতারা পশু পছন্দ হলে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ক্রেতাদের সাথে কথা জানা গেছে, এবার হাটে কোরবানি পশু গরু, ছাগলের অভাব না হলেও অন্যান্যবারের চেয়ে দাম একটু বেশি। অন্য দিকে বিক্রেতারা বলছেন, গরুর বাজার আগের মতোই রয়েছে। বড় গরুর দাম ঠিকভাবে বলছে না ক্রেতারা। হাটে ছোট-মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। তাই কিছুটা বেশি দামেই বেচাকেনা হচ্ছে এসব পশু। পাইকাররা বলছেন, গরুর খাবারের থেকে শুরু করে, বাজারে আনতে পরিবহন খরচ বেড়েছে। এ ছাড়া অন্য বছরের চেয়ে প্রতি বছরই দাম কিছুটা বাড়ে।

গাবতলীতে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এ বাজারের বেশির ভাগ গরুই ছিল বড় আকারের। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত বাজারে ছিল ক্রেতার ভিড়। তবে মাঝে হালকা বৃষ্টিতে বিক্রি কিছুটা কমেছে। সব মিলিয়ে গতকাল রাজধানীর প্রতিটি হাটেই চলছে পুরোদমে বেচাবিক্রি। ক্রেতারা অভিযোগও করে বলছেন, অন্যবারের চেয়ে গরুর দাম বেশি। গাবতলীসহ রাজধানীর সবকটি হাটেই গতকাল ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি বছরের মতো এবারো হাটে ছোট ও মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা বেশি। ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। হাটে বিক্রি বেড়েছে খাসিরও। একটি মাঝারি সাইজের খাসির দাম ১৪ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা। আর ছোট গরুর দাম ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। গাবতলীতে বিক্রি হচ্ছে উট ও মহিষও।

পশু হাটের ইজারাদারদের অনেকে জানান, গত শনিবার থেকে রাজধানীতে পশুর হাট শুরু হলেও কাক্সিক্ষত পরিমাণে বিক্রি করতে পারেননি বিক্রেতারা। পরের দিনও গেছে একই হালে। তবে আজ (গতকাল) সোমবার ঈদের দু’দিন আগে বিক্রি কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে। তারা আরো জানান, অতীত অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি রাজধানীতে মূলত ঈদের আগের দু’দিন অর্থাৎ সোমবার ও মঙ্গলবার জমজমাট হবে পশুর হাট।

এ দিকে গতকাল সোমবার সকাল থেকে রাজধানীর মেরুল বাড্ডার আফতাবনগর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের আর এক দিন বাকি থাকায় এখন যেসব ক্রেতা আসছেন, তারা অধিকাংশই পশু কিনে ঘরে ফিরছেন। এ কারণে সোমবার সকাল থেকে বিক্রি বেড়েছে। এ হাটেও দাম কিছুটা চড়া বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।

যদিও গতকাল গরুর দাম বেশি হওয়ায় আজ মঙ্গলবার শেষ মুহূর্তে দাম কমার অপেক্ষায় রয়েছেন অনেক ক্রেতা। হাট থেকে গরু না কিনে ফিরছেন এমন একজন ক্রেতা বলেন, তিন দিনে হাটে এলাম। দাম ধীরে ধীরে কমছে। যত গরু এসেছে, সেই তুলনায় এখনো ক্রেতা কম।

হাটসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছর ঈদের আগের দিন অনেকটা লটারির মতো অবস্থা হয়। হয় গরুর দাম আকাশচুম্বী নয়তো গরু কেনার ক্রেতা থাকে না কোনো হাটেই। গত বছর দেখা গেছে ঈদের আগের দিন অনেক হাটেই কোরবানির কোনো পশু ছিল না। আবার অনেক বছর দেখা গেছে ঈদের আগের দিন পাইকাররা কেনা দামের চেয়েও কম দামে পশু বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। এ বছরও শেষ পর্যন্ত কি অবস্থা দাঁড়ায় তা এখনো বলা যাচ্ছে না। রাজধানীর প্রতিটি হাটেই প্রচুর গরু থাকলেও আজ শেষ দিনে হাটে ক্রেতাদের উপস্থিতি ও তাদের পশু কেনার উপরেই নির্ভর করবে হাটের শেষ অবস্থা কী দাঁড়ায়।

অনলাইনেও অভাবনীয় সাফল্য : এবার কোরবানি পশুর চাহিদা প্রায় এক কোটি পাঁচ হাজারের মতো। তবে, গরুসহ অন্যান্য গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে এক কোটি ১৯ লাখের উপরে। করোনা মহামারীর মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো এবারো অনলাইন বা ডিজিটাল প্লাটফরমে কোরবানির হাট বসেছে। এবার অনলাইনে বেচাকেনায় অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর অধিদফর সূত্র বলছে, ২ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে অনলাইনে পশুর হাট কার্যক্রম। গতকাল পর্যন্ত ১৭ দিনে প্রায় সাড়ে তিন লাখ (তিন লাখ, ৪৯ হাজার ৪২৮)টি গবাদি পশু (বেশির ভাগই গরু) কেনাবেচা হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় দুই হাজার ৪২৪ কোটি টাকার উপরে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আজ সারা দিন এবং আগামীকাল ঈদের দিন সকালেও কোরবানির পশু কেনাবেচা হবে। তাই গবাদি পশুর পরিমাণ যেমন আরো বাড়বে, তেমনি আর্থিক পরিমাণও বাড়বে। অর্থাৎ অনলাইনে গরুসহ গবাদি পশু কেনাবেচা আড়াই হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে বলেই সংশ্লিষ্টরা বলছেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. শেখ আজিজুর রহমানও এই কেনাবেচায় খুশি। তিনি বলেন, অনলাইন বা ডিজিটাল প্লাটফরমে গতবার ৫০ হাজারের উপরে গরু-ছাগল ও মহিষ বিক্রি হয়েছিল। এবারের আশাব্যঞ্জক বেচাকেনা হয়েছে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকাসহ সারা দেশে কোরবানির পশুর হাট বসে। এবারো বসেছে। কিন্তু গত বছর থেকে এক ভিন্ন অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসী। ফলে স্বাস্থ্যবিধির কথা চিন্তা করে বিপুলসংখ্যক মানুষ অনলাইনেই পছন্দমতো কোরবানির গরু কিনেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement