২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

দুর্দিন ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের

দুর্দিন ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের - ছবি : নয়া দিগন্ত

জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে, সামাজিক অনুষ্ঠান সব জায়গাতেই ফুলের ব্যবহার। জন্মদিনের শুভেচ্ছা, বিশিষ্ট কেউ মারা গেলে শ্রদ্ধার্ঘ জ্ঞাপন, রাজনৈতিক ও সামাজিক নানা অনুষ্ঠানে অতিথিকে বরণ কিংবা মঞ্চ সাজানো, বিয়ের অনুষ্ঠানে বাসরঘরসহ অন্যান্য আয়োজনে ব্যবহৃত হয় ফুল। রাজধানীর শাহবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় দোকানিরা এসব ফুলের জোগান দিয়ে থাকেন; কিন্তু এই করোনাকালে বন্ধ রয়েছে বিয়ে, রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান। শিশু জন্ম নিলেও আগের মতো আর ঘটা করে ফুল নিয়ে কেউ শুভেচ্ছা জানাতে যান না। আগে বড় কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সামাজিক, সাংস্কৃতিক কিংবা পেশাজীবী ব্যক্তিক্ত মারা গেলে তার অনুসারী ও স্বজনরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতেন; কিন্তু এখন সম্পূর্ণ আলাদা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিয়ে, রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ। মাঝখানে ৬৬ দিন বন্ধ ছিল সরকারি-বেসরকারি অফিস। ৩১ মে থেকে সীমিত আকারে অফিস খুললেও মানুষের মধ্যে করোনা আতঙ্ক। সামাজিক-রাজনৈতিক অনুষ্ঠান হয় না দীর্ঘ দিন ধরে। কেউ মারা গেলেও আগের মতো আর তার অনুসারীরা দলে দলে ফুল কিনে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে না। কিংবা ফুল দিয়ে রাজনৈতিক নেতা কিংবা পেশাজীবী নেতাদের শুভেচ্ছা জানান না অনুসারীরা। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধির কথা চিন্তা করে বড় করে আর জন্মদিনও পালিত হয় না। সব মিলিয়ে ফুলের ব্যবহার কমেছে। এই অবস্থায় কেমন আছেন ফুল ব্যবসায়ীরা? 

গতকাল শুক্রবার বিকেলে কথা হলো রাজধানীর শাহবাগে। গোলাপ, রজনীগন্ধাসহ নানা রকমের ফুলের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন দোকানিরা; কিন্তু ক্রেতা নেই। দোকানিদের মুখ যেন মলিন। ফুলতলা ফ্লাওয়ার্সের দোকানি মোহাম্মদ সিদ্দিক বলেন, করোনার কারণে এখন ব্যবসা নেই বললেই চলে। বিয়েশাদি, রাজনৈতিক-সামাজিক কোনো অনুষ্ঠান নেই। ঘরোয়াভাবে কিছু অনুষ্ঠান হয়। কিছু ক্রেতা আসেন ফুল কিনতে। যেহেতু অনেক দিন ধরে ব্যবসা করি। তাই দোকান খুলে বসে থাকি। ব্যবসা না থাকলেও তো আমাদের দোকানভাড়া দিতে হয়। কর্মচারীকে বেতন দিতে হয়। আরো আনুষঙ্গিক খরচ তো আছেই। ১৫ বছর ধরে এখানে ফুলের ব্যবসা করি; কিন্তু এমন পরিস্থিতি কখনো হয়নি। শাহবাগেই কথা হয় ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের পদ্মপুকুর গ্রামের ফুলবাগান মালিক পিন্টুর সাথে।

এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও ঢাকার সাভারে ফুল উৎপাদন বেশি হয়। এসব এলাকা থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ফুল নিয়ে যান পাইকাররা। তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে আমরা ফুল চাষ করি। করোনার কারণে ফুলের ব্যবহার নেই বললেই চলে। বিয়েশাদি, জন্মদিন, রাজনৈতিক-সামাজিক অনুষ্ঠান কোনো কিছুই তো নেই। ফুল সৌন্দর্য, শৌখিন ও বিলাসিতায় ব্যবহৃত হয়। করোনায় এসব মানুষের মাঝে নেই। ফুলের ব্যবসা এখন নেই বললেই চলে। ফলে ফুলচাষিদের করুণ অবস্থা। ফুলচাষি পিন্টু বলেন, ফুল তো আর খাওয়া যায় না। কেউ যদি না নেয় ফেলে দিতে হয়। তিনি বলেন, চাষিরা খুব কষ্টে আছে। এই সেক্টর বাঁচিয়ে রাখতে হলে সরকারি প্রণোদনা দরকার। তাহলে চাষিরা সাহস পাবে, আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংস্থা কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফুল উৎপাদনের শুরু হয় ১৯৮৩ সালে যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামে। সে সময়ে একজন ফুল অনুরাগী উদ্যোগী কৃষক শের আলী মাত্র ০.৮৩ ডেসিম্যাল জমিতে ফুল চাষ শুরু করেন। বর্তমানে বাংলাদেশের ২৪টি জেলায় প্রায় তিন হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফুলের চাষ হচ্ছে। ফুল উৎপাদনে জড়িত আছেন প্রায় ১৫ হাজার কৃষক। ফুল উৎপাদন ও বিপণন ব্যবসায়ে অন্তত দেড় লাখ মানুষ সরাসরি নিয়োজিত রয়েছেন। ফুল সেক্টরের কার্যক্রমের মাধ্যমে জীবিকা উপার্জন করছেন প্রায় সাত লাখ মানুষ। হাজার কোটি টাকার উপরে ফুলের ব্যবসা হয়ে থাকে প্রতি বছর; কিন্তু করোনাকালে এই ফুল চাষ ও ব্যবসায় ধস নেমেছে।


আরো সংবাদ



premium cement
বছরে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়নের দাবি বাংলাদেশ অরবিসের সাথে কাজ করতে আগ্রহী : অধ্যাপক ইউনূস ঢাবি সিন্ডিকেটে এখনো বহাল আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা হাসিনা বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করতে দিগন্ত টেলিভিশনসহ অসংখ্য গণমাধ্যম বন্ধ করেছে : ফখরুল শীত শুরু হচ্ছে তবু কমেনি ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যয়বহুল তদন্তেও শনাক্ত হয়নি লাশটি কার ‘রহস্যজনক’ কারণে নেয়া হয়নি ডিএনএ নমুনা নবনির্মিত ওয়ামি কমপ্লেক্সের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন যুদ্ধবিরতির মার্কিন চেষ্টার মধ্যে লেবাননে ইসরাইলি হামলায় চিকিৎসাকর্মী নিহত অস্বস্তিতে ক্রেতারা : কমিয়ে দিতে হচ্ছে কেনাকাটা গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৪৪ হাজার ছাড়াল আমরা মানুষের সম্মিলিত প্রজ্ঞাকে সম্মান করি

সকল