কালো তালিকায় ৬ হজ এজেন্সী
- শাহেদ মতিউর রহমান
- ৩১ জুলাই ২০১৯, ১৫:৫৩
হজযাত্রীদের সাথে প্রতারণার অভিযোগে ৬ হজ এজেন্সীকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে ঢাকা হজ অফিস। ইতোমধ্যে এগুলোর একটি তালিকা ও লাইসেন্স নম্বর ধর্মমন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায়ও পাঠানো হয়েছে। এটি হচ্ছে হজের আগে যাত্রীদের সাথে প্রতারণরা প্রাথমিক তালিকা। হজের সময়ে মক্কা মদিনায় হজযাত্রীদের দেয়া সেবার মান নিয়েও অভিযুক্তদের একটি তালিকা হবে। হজের পরে এই তালিকা নিয়েই শুনানী করে শাস্তির আওতায় আসবে অভিযুক্তরা।
এদিকে বুধবার দুপুরে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী নিজে ঢাকার আশকোনায় হজ অফিসে এসে অভিযুক্ত এজেন্সীগুলোর বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে গেছেন। প্রতারিত হজযাত্রীদের সাথে কথাও বলেছেন মন্ত্রী। হজের পর এই ছয়টি এজেন্সীসহ আরো যদি কোনো এজেন্সী কালো তালিকায় থাকে প্রত্যেকের প্রতিনিধিদের মন্ত্রণালয়ে ডেকে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এমনকি অভিযুক্ত এজেন্সীর লাইসেন্সও বাতিল করার হুশিয়ারি দিয়েছেন মন্ত্রী।
ইতোমধ্যে হজযাত্রীদের টাকা নিয়ে নয়-ছয় করার অভিযোগে স্বদেশ ওভারসীস ( লাইসেন্স নং ১৫৩১) ও বিদেশ ভ্রমণ (লাইসেন্স নং ৭০১) নামের দুইটি হজ এজেন্সীর মালিককে আটক করে ঢাকা হজ অফিস। মঙ্গলবার রাত ১১ টায় বিদেশ ভ্রমণ নামের একটি এজেন্সীর মালিক ওমর ফারুককে প্রতারিত ১৮ জন হজযাত্রীর সৌদী আরবের বাড়ি ভাড়ার মোফা সংগ্রহ করার শর্তে মোচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। আশা করা হচেছ এই ১৮ জন হজযাত্রী আগামী দু’একদিনের মধ্যেই হজে যেতে পারবেন। অন্যদিকে বিদেশ ভ্রমণ নামের আরেকটি এজেন্সীর মালিক শামসুদ্দিন আহমেদ তোহাকে গত দুদিন যাবৎ হজক্যাম্পের দ্বোতলায় একটি ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এই এজেন্সীর এখনো ৪৬ জন হজযাত্রী হজক্যাম্পে এসে অবস্থান করছেন। তাদের কারোরই ভিসা বিমান টিকিট এবং বাড়ি ভাড়ার মোফাও সংগ্রহ করেননি। একজন হাজিও হজে যাওয়ার আনুষ্ঠানিকতা বাকি থাকলেও তোহাকে ছাড়া হবে না বলেও হজ অফিস জানিয়েছে।
শামসুদ্দিন আহমেদ তোহার পরিচালনাধীন একটি মাদরাসার শিক্ষক আমিরুল ইসলাম হজক্যাম্পে এসে জানিয়েছেন, মোট ত্রিশ লাখ টাকা বাকি ছিল। বিশ লাখ টাকার ব্যবস্থা হয়েছে। এখন আর ১০ লাখ টাকা দরকার। বুধবার বিকেলের মধ্যে সব টাকা জোগার হয়ে যাবে। এই এজেন্সীর ৪৬ জন হজযাত্রীর সংকটও আর থাকবে না। তিনি আরো জানান, তোহা সাহেব অনেক আগে থেকেই হজযাত্রী পাঠান। প্রতিবছরই ভাল সার্ভিস দেন হাজীদের। হাজীরাও তার উপর সন্তুষ্ট ।কিন্তু এবছর একটু সমস্যা হয়েছে।
এদিকে বুধ ও বৃহস্পতিবারের মধ্যে আরো কয়েকটি এজেন্সী মালিককে তলব করেছে হজ অফিস। এসব এজেন্সীর অনেক যাত্রী এখনো হজে যেতে পারেননি। অনেকের ভিসাও করেনি এই এজেন্সীগুলো। সব টাকা পরিশোধ করার পরেও উপরোন্তু মূল হাজিদের বাদ দিয়ে অন্য নতুন হাজিদের প্রতিস্থাপন বা রিপ্লেসমেন্টেরও পাঁয়তারা করছে কোনো কোনো এজেন্সী।
হজ অফিসে তলব করা হয়েছে জাবালে নূর(লাইসেন্স নং ৮৪৭) ও তাওসীফ ট্রাভেলস (লাইসেন্স নং ১৩৯১) এর মালিককে। এই দুটি এজেন্সীরও ২০ জন হজযাত্রী এখনো ভিসা হাতে পাননি। এই ২০ জনের মধ্যে রয়েছেন ৫ জন নারী হজযাত্রী। মঙ্গলবার দুপুরে হজক্যাম্পে এসে তারা কান্নাকাটিও করেছেন। এই ২০ জন হজযাত্রীর বাড়ি দিনাজপুর ও পীরগঞ্জে। তারা সবাই গত শুক্রবার থেকে আশকোনায় মোহনা নামের একটি হোটেলে এসে অবস্থান করছেন।
অন্যদিকে হজযাত্রীকে ঢাকায় রেখে হজ গ্রুপে বা দলের নেতাই চলে গেছেন হজ পালন করতে মক্কায়।‘সালাম আবাদ’ নামের একটি হজ এজেন্সীর দলনেতা হজযাত্রীদের কাছ থেকে হজের সমুদয় টাকা নিয়ে এখন তিনি নিজেই লাপাত্তা।
ভুক্তভোগী হজযাত্রীরা জানান, সালাম আবাদ হজ এজেন্সীর (লাইসেন্স নং ১৪৪৭) মফিজ উদ্দিন নামের ঐ দলনেতা (হজ এজেন্সীর ভাষায় গ্রুপ লিডার) তার গ্রুপের ৭ জন হজযাত্রীকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। পরে তাদেরকে হজ ক্যাম্পে ফেলে তিনি নিজেই এখন মক্কায় অবস্থান করছেন। প্রথম দিকে দু’দিন ফোন রিসিভ না করলেও রোববার তার বিরুদ্ধে হজ অফিসে লিখিত অভিযোগ দায়েরের পর এখন তিনি বলছেন ভিন্ন কথা।
মফিজ উদ্দিন নামের ওই দলনেতা দাবি করেছেন, ৭ জন হজযাত্রীর মধ্যে চার জন হজযাত্রীর টাকা তিনি তার এজেন্সীর (সালাম আবাদ) নির্দেশ মতো বাবুস সালাম নামের আরেকটি হজ এজেন্সীর কাছে জমা দিয়েছেন।
এদিকে ‘বাবুস সালাম’ নামের ওই এজেন্সীর (লাইসেন্স নং ১৪২১) সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, আমরা চার জন হজযাত্রীর শুধু বিমান ভাড়ার টাকা পেয়েছি। বাড়ি ভাড়া ও খাওয়ার টাকা পরিশোধ না করা হলে আমরা চার জনের ভিসা করতে পারবো না। আর একথা আমরা আগেই ওই গ্রুপ লিডার মফিজ উদ্দিনকে জানিয়ে দিয়েছি।
বুধবার দুপুরে হজ এজেন্সীজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম নয়া দিগন্তকে জানান, কয়েকটি হজ এজেন্সীর ভুলে এখনো কিছু হাজী যেতে পারেননি। এসব এজেন্সীর আর্থিক লেনদেনের সমস্যার কারনে সঠিক সময়ে বিমান টিকিট, সৌদী আরবে বাড়ি ভাড়ার মোফা সংগ্রহ, এমনকি ভিসার আবেদনই করা হয়নি। তাই অল্প কিছু হজযাত্রীর যাত্রা বিলম্ব হচেছ। তবে আমরা হাবের পক্ষ থেকেও সব ধরনের চেষ্টা করছি যাতে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হয়ে যায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা