২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বোনাস বা উৎসব ভাতা নির্ধারিত হয় কিভাবে?

বোনাস বা উৎসব ভাতা নির্ধারিত হয় কিভাবে? - সংগৃহীত

বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি অফিসে যারা চাকরি করেন নিয়মানুযায়ী তাদের সবাই নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসবের আগে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বোনাস বা উৎসব ভাতা পাওয়ার যোগ্য। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত কিংবা আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরির বিধিমালা অনুযায়ী বেতন ভাতা ও বোনাস নির্ধারিত হয়।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে শিল্প-কারখানা এমনকি গণমাধ্যমে শ্রম আইনের আওতায় তৈরি করা বিধিমালা অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস দেয়ার বিধান রয়েছে। যদিও কিছু শিল্প কারখানায় বিশেষ করে ঈদের আগে বেতন ও বোনাসের দাবিতে নানা প্রতিবাদের ঘটনাও দেখা যায়।

সুপ্রিম কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জায়েদী হাসান খান বলছেন, কোন কারখানা বা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসবের প্রাক্কালে প্রদেয় বিধি দ্বারা উৎসব ভাতা পাওয়ার অধিকার আছে।

"তবে সব ক্ষেত্রেই কোনো প্রতিষ্ঠানে যারা ন্যূনতম এক বছর ধরে কাজ করছেন তারাই এ সুবিধা পাবেন। ধর্মীয় উৎসবে বোনাস দেয়ার বিধান শ্রম আইন ও এর ভিত্তিতে প্রণীত শ্রম বিধিমালায় উল্লেখ করা আছে।"

তিনি বলেন, কেউ বোনাস বা উৎসব ভাতা থেকে বঞ্চিত হলে তিনি শ্রম আদালতে প্রতিকার চাইতে পারেন।

আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বলছেন, "বেতনের মতো বোনাস পাওয়াটাও শ্রমিকের অধিকার। সরকারি বা সরকারি বিধিবদ্ধ দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে নিয়মিতই বোনাস দেয়া হয়।"

"বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে বহু শিল্প কারখানাও নিয়মিত বোনাস দেয় কর্মীদের। কারণ এটি তাদের প্রাপ্য," তিনি জানান।

তিনি বলেন, এখন নিয়োগ দেয়ার সময়ই অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়োগপত্রে উল্লেখ করে যে কর্মী কি কি সুবিধা পাবেন এবং সেখানে বছরে দুটি উৎসব ভাতার কথা স্পষ্ট করেই উল্লেখ করে দেয়া থাকে।

কে কতটুকু বোনাস পাবেন?

বোনাস বা ভাতা হল কোন কর্মীর জন্য তার নিয়মিত মজুরির অতিরিক্ত বাড়তি পাওনা। কোন প্রতিষ্ঠান কোন উপলক্ষ্য বা উৎসব পালন, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জন (যেমন- উৎপাদন), সময়ানুগ উপস্থিতি, নিষ্ঠার সঙ্গে কর্ম সম্পাদন প্রভৃতির জন্য বোনাস দিতে পারে।

জায়েদী হাসান খান বলছেন, সরকারি চাকুরে বা এ ধরণের প্রতিষ্ঠানে সাধারণত চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী তাদের সর্বশেষ মূল বেতনের সমান অর্থ বোনাস হিসেবে দেয়া হয়।

তবে মনজিল মোরশেদ বলছেন, বোনাস নিয়ে সরকারি বা সরকার নিয়ন্ত্রিত বা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে সমস্যা না হলেও বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানে নানা সমস্যা দেখা যায় মাঝে মধ্যেই।

তার মতে, "সরকারি প্রতিষ্ঠানে তাদের মূল বেতনের সমপরিমাণ দেয়া হলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উৎসব ভাতায় ভিন্নতা রয়েছে। কারণ এটা প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা অনুযায়ী তারাই নির্ধারণ করেন। কেউ মূল বেতনের সমান, কেউ ৫০ভাগ কিংবা ৭০/৮০ ভাগ দিয়ে থাকে।"

আইনে কী বলা আছে ?

বাংলাদেশ শ্রম আইনের আওতায় প্রণীত বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালায় বলা হয়েছে, প্রতিটি কারখানা বা প্রতিষ্ঠানের নিয়োজিত শ্রমিকদের মধ্যে যারা নিরবচ্ছিন্ন ভাবে এক বছর চাকরি পূর্ণ করেছে তাদের বছরে দুটি উৎসব ভাতা দিতে হবে।

তবে এই শর্তও আছে যে প্রতিটি উৎসব ভাতা মাসিক মূল মজুরির অধিক হবে না, এবং তা মজুরির অতিরিক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।"

যদিও আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বলছেন, সরকারি কর্মচারীরা এখন কার্যত তিনটি উৎসব ভাতা পেয়ে থাকেন। কারণ সরকার এখন তাদের বাংলা নববর্ষে একটি বোনাস দিয়ে থাকে।

কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও তাদের কর্মীদের বাংলা নববর্ষের বোনাস দিতে শুরু করেছে। আবার কোন কোন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের একাধিক বোনাসের সমপরিমাণ অর্থও দিয়ে থাকে ধর্মীয় উৎসবের আগে।

বোনাস না পেলে আইনি প্রতিকার?

জায়েদী হাসান খান বলছেন, কোন কর্মী তার উৎসব ভাতা না পেলে তার আইনগত প্রতিকার পাওয়ারও অধিকার আছে। এক্ষেত্রে শ্রম আইনের আওতায় যারা আছেন তারা শ্রম আদালতে প্রতিকার চাইতে পারেন বলে জানান তিনি।

যদিও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে দেশের যে অসংখ্য শ্রমিক কাজ করেন তাদের বোনাস কিভাবে নির্ধারিত হবে বা তারা কিভাবে বোনাস পেতে পারেন তার কোন আইনগত ব্যাখ্যা নেই।

মনজিল মোরশেদের মতে, শ্রম আইনের আওতায় থাকা বেসরকারি কোম্পানি বা কারখানা যেহেতু একটি মজুরি কাঠামোর আওতায় থাকে, তাদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম মজুরি মেনে চলা ও নিয়োগপত্র দেয়ার বিধান আছে। কিন্তু এর বাইরে যে অসংখ্য বেসরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে কিংবা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে যারা আছেন তাদের বোনাস পাওয়া সম্পূর্ণ নিয়োগকারীর ওপর নির্ভরশীল। সূত্র : বিবিসি।


আরো সংবাদ



premium cement