২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

স্বাগত বাংলা নববর্ষ ১৪২৬

বছরের শেষ সূর্যাস্তের সামনে নতুন বছরের নতুন প্রত্যাশা - নাসিম সিকদার

রবির কিরণে হাসি ছড়িয়ে অপ্রাপ্তি বেদনা ভুলে আজ নব আনন্দে জাগবে গোটা জাতি। বাংলাদেশের মানুষের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের রূপময় ছটায় নতুন বাংলাবর্ষ ১৪২৬ বরণ করবে সব বয়সের মানুষ। নতুন বছরের সূচনা দিনে নতুন স্বপ্ন-প্রত্যাশায় উৎসব আর উচ্ছ্বাসে ভরে যাবে বাংলার মাঠ-ঘাট-প্রান্তর। নতুন দিনের সূর্যোদয়ের সাথে সাথে পুরনো সব জরা গ্লানিকে মুছে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি টুটে নব চিন্তায় শুরু হবে আগামী দিনের পথচলা। প্রতি বছরের মতো এবারও রমনার বটমূলে ছায়ানটের গানে গানে আর চারুকলা থেকে বের হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে বাঙালি বরণ করবে নতুন বছরকে। 
শোভাযাত্রার মাধ্যমে পুরনো বছরের সব জরাজীর্ণতা মুছে ফেলে নতুন দিনের প্রত্যয়ে বাঙালি নতুন করে জেগে উঠবে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে। খোলা হবে নুতন হিসাবের হালখাতা। পান্তা-ইলিশের সাথে মুড়ি মুড়কি, মণ্ডা মিঠাইয়ের সাথে সাথে নাচে-গানে, ঢাক-ঢোলে, শোভাযাত্রায় পুরো জাতি বরণ করবে নতুন বছরকে। গতকাল বছরের শেষ দিনে ছিল চৈত্র সংক্রান্তি। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে জাতি বিদায় জানিয়েছে ১৪২৫ বঙ্গাব্দকে।

নতুন বছর বরণে আজ সকাল ৯টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হবে। বাংলার চিরায়ত লোকজ সংস্কৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গের প্রতীক নিয়ে চারুকলা অনুষদ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়ে শাহবাগ ঘুরে চারুকলায় ফিরব। শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে’। সব সময়ের মতো এবারও শোভাযাত্রায় স্থান পাচ্ছে বিশালকায় চারুকর্ম পুতুল, হাতি, কুমির, লক্ষ্মীপেঁচা, ঘোড়াসহ বিচিত্র মুখোশ। থাকবে লোকজ সাজসজ্জা, বাদ্যযন্ত্র ও নৃত্য। মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের কামনা নিয়ে দেশবাসীর কাছে শুভ বার্তা পৌঁছে দেয়া হবে। 
চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা জানান, এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার পুরো ভাগে থাকবে মহিষ, পাখি ও ছানা, হাতি, মাছ ও বক, জাল ও জেলে, টেপা পুতুল, মা ও শিশু এবং গরুর আটটি শিল্পকাঠামো। এ ছাড়া রয়েছে পেইন্টিং, মাটির তৈরি সরা, মুখোশ, রাজা-রানীর মুখোশ, সূর্য, ভট, লকেট ইত্যাদি। এবারের পয়লা বৈশাখের উদযাপনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে অভিনব বাদ্যযন্ত্রে এলো ‘এসো হে বৈশাখ’ গানটি!
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জনপ্রিয় এ সঙ্গীতে ভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারে গানটি এবার পেয়েছে ভিন্ন দোতনা। এক ঝাঁক তারকা শিল্পী বিশ্বখ্যাত কোমলপানীয় ব্র্যান্ড কোকা-কোলার বোতলকে বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে গানটি গেয়েছেন। পৃত্থিরাজের সঙ্গীত পরিচালনায় কালজয়ী এই গানে নতুন করে কণ্ঠ দিয়েছেন প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সাদী মোহাম্মদসহ বাপ্পা মজুমদার, কনা, তপু, লিংকন ডি কস্তা, ঐশী, শুভ, নাফিস, নন্দিতা, লিজা ও ঋতুরাজ। বৈশাখ উপলক্ষে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হবে কনসার্টসহ নানা অনুষ্ঠান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে বৈশাখী কনসার্ট।

নববর্ষ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলগুলো এ উপলক্ষে প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠান। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে ক্রোড়পত্র ও বিশেষ নিবন্ধ। নির্বিঘেœ বর্ষবরণ উৎসব পালনে দেশব্যাপী কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। সেই সাথে নিষিদ্ধ করা হয়েছে মুখোশ ও ভুভুজেলা বাঁশি। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এবারো বর্ষবরণের সবচেয়ে আকর্ষণীয় আয়োজন হচ্ছে ছায়ানটের উদ্যোগে রমনা বটমূলে নতুন বছরের আবাহন অনুষ্ঠান। বরাবরের মতো পয়লা বৈশাখে ভোরে সূচনা হবে এ আয়োজনের।

বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, বাংলা একাডেমি, গণগ্রন্থাগার অধিদফতর, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ক্ষদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, বিসিক নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে। রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল ও রেস্টুরেন্টেগুলোর উদ্যোগেও উদযাপিত হবে নতুন বছরের উৎসব। ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, উত্তরা ক্লাবের উদ্যোগে পয়লা বৈশাখ উদযাপনে নেয়া হয়েছে নানা আয়োজন।

বরাবরের মতো এবারও রাজধানীর রমনা পার্ক ও আশপাশ এলাকা বর্ষবরণ উৎসবের প্রাণকেন্দ্র। পয়লা বৈশাখে যাতে কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যে রমনা বটমূল ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা, চারুকলা ইনস্টিটিউট, শাহবাগ, শিশুপার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, মৎস্যভবন, বাংলা একাডেমি, হাইকোর্ট এলাকাসহ রমনা পার্কের চার পাশে পথে পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান নিয়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। বিপুলসংখ্যক পুলিশ-র্যাবের পাশাপাশি বটমূলের চার পাশে থাকবে ক্লোজ-সার্কিট ক্যামেরা এবং বিস্ফোরক শনাক্ত করার অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থা ও তাদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যৌথভাবে কাজ করছে সব সংস্থা। সার্বিক নিরাপত্তা ও নজরদারি নিশ্চিত করতে বসানো হয়েছে কন্ট্রোল রুম, অবজারভেশন পোস্ট ও চেক পোস্ট। 

ঢাবি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত : অন্য দিকে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা ও ব্যাগ বহন না করার নির্দেশ দেন। তবে চারুকলা অনুষদের প্রস্তুত করা মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। তিনি জানান, ক্যাম্পাসে নববর্ষের দিন সব ধরনের অনুষ্ঠান বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজিলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি নিষিদ্ধ। এ ছাড়া নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপন করে তা মনিটরিং করার জন্য পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তিনি জানান, নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে অপরাহ্ন ৫টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যাবে। ৫টার পর কোনোভাবেই প্রবেশ করা যাবে না, শুধু বের হওয়া যাবে। ওই দিন ক্যাম্পাসে মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে কোনো ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধু নীলক্ষেত মোড়সংলগ্ন গেট ও পলাশী মোড়সংলগ্ন গেট ব্যবহার করতে পারবেন। এ ছাড়া ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সম্মুখস্থ রাজু ভাস্কর্যের পেছনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট বন্ধ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আগত ব্যক্তিরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য চারুকলা অনুষদসংলগ্ন ছবির হাটের গেট, বাংলা একাডেমির সম্মুখস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেট ব্যবহার করতে পারবেন এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে প্রস্থানের পথ হিসেবে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেট, রমনা কালীমন্দির সংলগ্ন গেট ও বাংলা একাডেমির সম্মুখস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট ব্যবহার করতে পারবেন। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল মাঠসংলগ্ন এলাকা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকা, দোয়েল চত্বরের আশপাশের এলাকা ও কার্জন হল এলাকায় মোবাইল পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা হবে।

হাজারো কণ্ঠে বর্ষবরণ : প্রতি বছরের মতো এবারও নতুন বছর বরণ করে নিতে চ্যানেল আই করছে বাংলাবর্ষ বরণের সবচেয়ে বড় আয়োজন সুরের ধারার সহস্র কণ্ঠে ‘লিভার আয়ুশ চ্যানেল আই হাজার কণ্ঠে বর্ষবরণ ১৪২৬’। সুন্দর আগামী ও দেশবাসীর মঙ্গল কামনা করে ‘লিভার আয়ুশ চ্যানেল আই হাজারো কণ্ঠে বর্ষবরণ ১৪২৬’ শিরোনামে বর্ণিল এই উৎসবের আয়োজন আজ বসবে ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের উন্মুক্ত চত্বরে।

এবারের মেলায় ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোতে শেরিং সস্ত্রীক উপস্থিত থাকবেন। এবারের প্রতিপাদ্য ‘লোকজ সুরে বাংলা গান’। বর্ষবরণ উৎসবে থাকবেন দেশের জনপ্রিয় নবীন ও প্রবীণ শিল্পীদের পরিবেশনার পাশাপাশি চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ, খুদে গানরাজ, গানের রাজা ও বাংলার গানের শিল্পীরা। নৃত্য পরিবেশন করবেন চ্যানেল আই সেরা নাচিয়ের শিল্পীরা। আরো পরিবেশিত হবে একদল তরুণীর অংশগ্রহণে ফ্যাশন শো ও মঙ্গল শোভাযাত্রা। মেলার স্টলগুলোয় শোভা পাবে বাঙালির হাজার বছরের বিভিন্ন ঐতিহ্যের উপাদান, বৈশাখের হরেক রকম পণ্যসামগ্রী। আরো থাকবে পিঠা-পুলি, মাটির তৈরি তৈজস, বেত, কাঁথা, পিতল, পাট-পাটজাত দ্রব্যের জিনিসপত্রসহ রকমারি ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ নানান পণ্যসামগ্রী। বর্ষবরণ উৎসব বেলা ২টা পর্যন্ত চ্যানেল আই সরাসরি সম্প্রচার করবে।

কনসার্ট : উৎসবমুখর এই দিনে রাজধানীর একাধিক জায়গায় গাইবেন জেমস। রমনার বটমূলে সকাল থেকে শুরু হওয়া কনসার্টে গাইবেন জেমস। বেলা আড়াইটায় তিনি মঞ্চে উঠবেন। এ ছাড়া বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরেও গাওয়ার কথা রয়েছে জেমসের। 
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) নতুন বছরকে বরণ করে নিতে মঙ্গল শোভাযাত্রার এবারের মূল বিষয়বস্তু ‘নদী’। তাই নদীকে ঘিরেই সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। নতুন ভবনের নিচ তলায় তৈরি করা হয়েছে বিশাল আকৃতির ময়ূরপঙ্খী নৌকা, বাইচ নৌকা, শুশুক, বিশাল ইলিশ মাছ। এ ছাড়া চারুকলা বিভাগে তৈরি করা হয়েছে বজরা ও বিভিন্ন জাতের মাছ।

জবির এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল বিষয়বস্তু নদী হওয়ায়, নদীর ধার দিয়েই এটি প্রদক্ষিণ করবে। বাঁচলে নদী বাঁচবে দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশÑ সেøাগানে সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হবে। আর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, ওয়াইজ ঘাট, আহসান মঞ্জিল, মুন কমপ্লেক্স, পাটুয়াটুলী, বাটা ক্রসিং হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে শেষ হবে। শোভাযাত্রায় মুখোশের পরিবর্তে থাকবে মাছের প্রতিকৃতি। এ ছাড়া শুশুক, বজরা, ডিঙি, ময়ূরপঙ্খী নৌকা, নৌকাবাইচের প্রতিকৃতি স্থান পাবে।
গরম ও ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা : নববর্ষের দিন আজ গরম ও ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা করেছেন আবহাওয়াবিদেরা। তাদের মতে, দেশের বেশির ভাগ জায়গায় আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। দুপুরে পর অনেক জায়গায় বিশেষ করে দেশের পশ্চিম অংশে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। রংপুর, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া ও ঢাকাতেও বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে ঝড়-বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ এ ছাড়া বিকেলের দিকে ‘বৃষ্টি না হলেও বজ্রপাত, একটু জোরালো বাতাস হতে পারে। সকালের দিকে একটু মেঘলা আকাশ থাকতে পারে। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে সেটা কেটেও যাবে। তাই বিকেল পর্যন্ত ভ্যাপসা গরম থাকতে পারে।’ তাদের মতে ‘গত দু’দিন থেকে যেহেতু ঝড়-বৃষ্টি কম হওয়ার একটা ট্রেন্ড শুরু হয়ে গেছে, বলা যেতে পারে আগামী সপ্তাহ এভাবেই থাকতে পারে। বিক্ষিপ্তভাবে দুই-এক জায়গায় ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে। তবে আপাতত বড় ধরনের ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা কম।’

বিএনপির বাণী : বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বাণী দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- বাংলা নববর্ষের এই উৎসবমুখর দিনে দেশ-বিদেশের সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। প্রতি বছর নববর্ষ হিরন্ময় অতীতের আলোকে সম্মুখ পানে, অগ্রগতির পথে এগিয়ে যেতে তাগিদ দেয়।

এতে বলা হয়, স্বজাতির ইতিহাস ঐতিহ্যকে ভুলিয়ে দেয়ার জন্য চলছে নানা ফন্দিফিকির। বর্তমানে দেশজুড়ে চলছে এক ভয়াবহ দুর্দিন। দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর অত্যন্ত প্রিয় নেত্রীকে বানোয়াট মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে বন্দী করা হয়েছে। আজকের এই উৎসবের দিনে জনগণের নেত্রী বন্দী। রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করার অভিলাষ চরিতার্থ করতেই দেশনেত্রীকে আটকে রাখা হয়েছে। দেশের এই চরম সঙ্কটকালে আমাদের ভাষা, সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার জন্য সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। 
নৃগোষ্ঠীদের শুভেচ্ছা : এ দিকে পার্বত্য অঞ্চলবাসী বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব বিঝু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু ও বিহু এবং নববর্ষ উপলক্ষে সব সম্প্রদায়ের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা অভিবাদন জানায় বিএনপি। পাহাড়ি বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী জনগণের ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ইতিহাস বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির অনুষঙ্গ, যা আমাদের ঐতিহ্যকে গৌরবময়, প্রাচুর্যময় ও সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে। সম্প্রীতি ও মিলনের অমিয় বাণী মিশে আছে আমাদের লোকজ ঐতিহ্যের মধ্যে। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব সম্প্রদায় ও জনগণের নিজেদের পার্বণ ও উৎসব জাতীয় উৎসবেরই অংশ। এ উৎসবের দিনগুলো আনন্দে ভরে উঠুক আর বাংলা নববর্ষ সবার জন্য অনাবিল শান্তি ও সুখের হোক এই কামনা রইল।

এরশাদের বাণী : বিরোধীদলীয় নেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। গতকাল এক বাণীতে বিরোধীদলীয় নেতা এ অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ১৪২৬ সন দেশ ও জাতির জন্য বয়ে আনুক শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং উন্নয়নের নিরবচ্ছিন্ন ধারা। 
এরশাদ আশা প্রকাশ করে বলেন, নতুন বছরে জন-জীবনের পুঞ্জীভূত সমস্যার সমাধানে অগ্রগতি হবে এবং উন্নয়ন ও সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করে বয়ে আনবে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি। 

মহানগর জামায়াত : বাংলার প্রাচীনতম সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ উপলক্ষে নগরবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল এবং কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। শুভেচ্ছা বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, পয়লা বৈশাখ আমাদের আবহমান ঐতিহ্যের লালন এবং আত্মোপলব্ধির এক অনুপম দিন। আমাদের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষি, ব্যবসাসহ পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে বাংলা সনের ব্যবহার চিরন্তন। দিনটি বাংলাদেশের মানুষের সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জনগণের রয়েছে নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। কিন্তু আবহমানকাল থেকে চলে আসা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির ওপর চলছে পদে পদে বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন। পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে স্বার্থান্বেষী মহল ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতি ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের মূল্যবোধ ও জাতিসত্তাবিরোধী অপসংস্কৃতি সুকৌশলে আমদানি করে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করছে। তাই আমাদের বিজাতীয় সংস্কৃতির গোলামী হতে বেরিয়ে এসে সুস্থ সংস্কৃতিচর্চা ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement