কাজ না পেয়ে ক্ষুধা আর চিকিৎসার অভাবে মারা গেলেন মালয়েশিয়া প্রবাসী
- আশরাফুল মামুন, মালয়েশিয়া
- ০২ মার্চ ২০২৪, ১৮:৪৭
মালয়েশিয়ায় কাজ না পেয়ে ক্ষুধা আর চিকিৎসার অভাবে মারা গেলেন পাবনার প্রবাসী মো: শফিকুল ইসলাম (৩৩)।
১ মার্চ (শুক্রবার) সকাল সাড়ে ৯টায় শফিকুল মারা যান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সে অসুস্থ ছিল, চিকিৎসা দেয়া হয়নি। প্রতিদিনের মতো রাতে ঘুমাতে গেলেও ঘুম থেকে আর ওঠেনি।
উন্নত জীবনের আশায় লাখো টাকা খরচ করে বছরের ৫ আগস্ট পেত্রা জেহরা বারহাদ নামে একটি কন্সট্রাকশান কোম্পানিতে ইউনিক নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কাজের ভিসায় মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন শফিকুল। প্রায় পাঁচ মাস কাজ না পেয়ে ক্ষুধা আর চিকিৎসার অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় শফিকুলের।
শফিকুলসহ এ কোম্পানিতে কাজ নিয়ে মালয়েশিয়ায় আসেন ৭১ জন বাংলাদেশী। তাদের কেউ কেউ চড়া সুদে ঋণ নিয়ে, আবার কেউ জমি বিক্রি করে দালালদের অর্থ পরিশোধ করেছেন। দালালরা তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে মালয়েশিয়ায় তাদের নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ দেয়া হবে, যেখানে বেতন মাসে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। মালয়েশিয়ায় আসার পরপরই স্বপ্ন ভঙ্গ হয় তাদের। প্রায় পাঁচ মাস কাজ না পেয়ে ক্ষুধা আর চিকিৎসার অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে এসব প্রবাসীরা। কষ্টের অভিযোগ তুলে ধরতে গেলেই শিকার হতে হয় শারিরিক ও মানষিক নির্যাতনের।
সেখানে অবস্থানরত বাকি বাংলাদেশীদের অবস্থাও ভালো নয়। ভয় আর আতঙ্কে সময় কাটে তাদের। নিয়োগকর্তার নিয়োগকৃত লোকের দ্বারা নিয়মিতই নির্যাতনের শিকার হতে হয় এসব প্রবাসীদের। ৫ অক্টোবর মালয়েশিয়ায় এলেও এখনো মেলেনি ভিসা কিংবা কাজ।
কাজ না পাওয়ার অভিযোগ নিয়ে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনেও যান এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন। আশ্বাস মিললেও চুড়ান্ত কোনো সুরাহা করতে পারেনি হাইকমিশন।
মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের লেবার কাউন্সিলর, সৈয়দ শরিফুল ইসলাম বলেন, পেত্রা জেহরা বারহাদ কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ইতোমধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ভবিষ্যতে এই কোম্পানি যাতে নতুন কোনো কর্মী না আনতে পারে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে হাইকমিশন। এখনো কাজ না পাওয়া কর্মীদের সমস্যা সমাধানে হাইকমিশন কাজ করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নিহত শফিকুল ইসলামের লাশ কোম্পানির মাধ্যমে দেশে পাঠাতে কাজ করছে হাইকমিশন বলে মন্তব্য করেন লেবার কাউন্সিলর। একই সাথে বৈধভাবে আসায় তার পরিবার ক্ষতিপুরন পাবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
পেত্রা জেহরা বারহাদ কোম্পানিতে কর্মরত ইফতেকার নামে এক বাংলাদেশীর সাথে কথা হয়। ইফতেকার বলেন, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সঠিক নয়, তাদের গায়ে হাত তোলা হয়নি, কোম্পানি থাকা খাওয়ারও সু-ব্যাবস্থা করেছে। ট্যাক্স জটিলতার কারণে পাঁচ মাস ধরে তাদের বসিয়ে রাখতে হয়েছে। তবে চার-মাস মাসের মধ্যে সমস্যা সমাধান হয়ে সবাই ভিসা পাবে বলেও জানান তিনি।
ইফতেখার আরো জানান, মারা যাওয়ার খবর পাওয়ার পর শফিকুল ইসলামকে সেপাং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে।
কলিং ভিসায় এসে কাজ না পাওয়া কর্মীদের অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছে। মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিয়মিতই এমন অভিযোগ আসছে হাইকমিশনে। এ বিষয়ে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত হাইকমিশনার সম্প্রতি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, যারা এমন কাজের সাথে সম্পৃক্ত তাদের কোনো ছাঁড় নেই। অভিযোগ রয়েছে এমন কোম্পানিকে পরবর্তিতে কর্মী নিয়োগের অনুমোদন দিতে চিন্তা করবে হাইকমিশন।