ফ্রান্সে বিসিএফ-এর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৭, আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১১
ফ্রান্সে কৃতি শিক্ষার্থী, উদীয়মান তরুণ ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা, পেশাগতভাবে যোগ্যতা ও মেধার স্বাক্ষর রাখা ব্যক্তিত্বদের সংবর্ধনা দিয়েছে ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশীদের সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন ফ্রান্স (বিসিএফ)।
শনিবার বিকেলে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে একটি অভিজাত মিলনায়তনে এ উপলক্ষ্যে বর্ণিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সম্প্রতি মৃত্যুবরণকারী ক্যান্সার আক্রান্ত প্রবাসী বাংলাদেশী ইব্রাহিম হোসেনকে চিকিৎসাদানকারী ও তাকে বাংলাদেশে পৌঁছে দিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে মানবিক ডাক্তার খ্যাতি পাওয়া ডাক্তার ড. ম্যাথিও জামেলু বাংলাদেশী কমিউনিটির পক্ষ থেকে সম্মানপত্র ও ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়। তার আট সহযোগিকেও সম্মাননা ও বাংলাদেশের স্যুভেনি উপহার দেয়া হয়।
এছাড়া, ফ্রান্সে হৃদরোগ চিকিৎস্যায় দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ডাক্তার ওয়াহিদুর রহমানকে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয়।
‘বিসিএফ রিইউনিয়ন এবং কৃতি সম্মাননা-২০২৩’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের স্বীকৃতি দেয়া হয়।’
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে ফ্রান্সে বাংলাদেশী কমিউনিটির সামাজিক কল্যানের প্রত্যয়ে প্রতিষ্ঠিত সংগঠন বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন ফ্রান্স-বিসিএফ ২০১৭ সাল থেকে বিপুল সংখ্যক ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশীদের অংশগ্রহণের মধ্য এ জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থোকে। দল-মত নির্বিশেষে বিসিএফ আয়োজিত অনুষ্ঠানে ব্যাপক সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার।
অনুষ্ঠানে চলিতি বছর ১৫ জন কৃতী শিক্ষার্থী, অনার্স, মাষ্টার্স ও ডক্টরেট সমমানের (BAC, BTS, Licence, Masters ও PhD ) ডিগ্রী অর্জনকারীকে সংবর্ধনা দেয়া হয়।
সংবর্ধনা পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন, জান্নাতুল প্রিয়ন্তি, পারশা রহমান, মাজহারুল খান, সাদিয়া চৌধুরী, ইকরামুল কবীর, মোহাম্মদ আকিব ইখতেফার, সাদিকুর রহমান, অমিত কুমার শাহ্, লাজিম মিয়া, বাশারাত মিয়া, মো: অমিত হাসান, ছায়া দাস, তাসপিয়া উদ্দীন এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী উম্মে তাবাস্সুম সারা।
এছাড়া ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা, আইকনিক ইয়াং স্টার, পেশাগতভাবে সফল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সংবর্ধনা এবং পুরস্কার প্রদান করা হয়।
এ দিকে কমিউনিটিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এইচ এস হায়দার এবং শহীদুল আলম মানিককে মরণোত্তর ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। প্রথমবারের মতো এবারে ফ্রান্সে বাংলাদেশ কমিউনিটিতে নানা সেক্টরে সফল বিভিন্ন ব্যক্তি, সামাজিক সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়। এর মধ্যে সাংবাদিকতায় মোহাম্মদ আরিফ উল্লাহ, (ফ্রান্স টুয়েন্টি ফোর), মোহাম্মদ লুৎফর রহমান বাবু (সময় টিভি), আকাশ হেলাল (আইনজীবী), ইমরান চৌধুরী (আইনজীবী), দিয়ান আশরাফুল (অফিসার, ফরাসী শিক্ষা মন্ত্রণালয়), ডাক্তার লাজিম মিয়া।
বিসিএফ সভাপতি এমডি নুরের সভাপতিত্বে এবং জহিরুল হক রানা (বাংলা) ও ফারসীনা হোসেন (ফরাসী)-এর সঞ্চালনায় বিকেল ৩টায় শুরু হয়ে রাত ৮টার পরে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। শুরু থেকে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হলরুমে অনেককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
আরশী বড়ুয়ার ভায়োলিনের সুরে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কমিউনিটি এন ফ্রান্সের সভাপতি এমডি নূর।
এমডি নূর বলেন, ‘ফ্রান্স দিনে দিনে বাংলাদেশী কমিউনিটির কলেবর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক সাথে বাংলা মায়ের সন্তানেরা শিক্ষা, কর্ম ও ব্যবসা-বাণিজ্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও খেলাধুলোয় নিজেদের যোগ্যতা ও মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে।’
তিনি মা-বাবার প্রতি সন্তানদের বিষয়ে আরো বেশি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের মেধাবী সন্তানেরা আমাদের বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। তাদের পরিচর্যার মাধ্যমে যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারলে তারাই আমাদের জন্মভূমির মর্যাদা আরো প্রতিষ্ঠিত করবে।’
বিসিএফ-এর সহ-সভাপতি ও ফ্রান্সে বাংলাদেশী মালিকানাধীন সবচেয়ে পোশাক সামগ্রীর প্রতিষ্ঠান বিডি বসের অন্যতম কর্ণধর মোজাম্মেল হোসের তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘এই প্রজন্মের তরুণ-যুবকরা ইউরোপীয় শিক্ষা, সংস্কৃতি, সমাজব্যবস্থার মধ্যে বেড়ে উঠছে। তারা যেন বড় হয়ে তাদের নাড়ির কথা তথা বাংলাদেশের কথা ভুলে না যায় সেই চেতনা বোধটা সজাগ রাখার গুরুত্ব উপলব্ধি থেকে এই আয়োজন।’
তিনি আরো বলেন, ‘এটি প্রতি বছরই আমরা চালিয়ে যাবো। তাছাড়া, নতুন প্রজন্ম যেন আগের প্রজন্মকে ভুলে না যায় অর্থাৎ দুই প্রজন্মের মধ্যে একটি যোগসূত্র স্থাপন করাও এ আয়োজনের অন্যতম উদ্দেশ্য।’
অনুষ্ঠানে বিসিএফ-এর স্পন্সর প্রতিষ্ঠান বিডি বসের মোজাম্মলে হোসেন, শাহ গ্রুপের শাহ আলম, আমি ভযেজের তানজীম হায়দার হোসেন, বিডি মুবেল ওবারভিলিযে (ফার্নিচার)-এর এমডি মিয়া মাসুদ, আইছা প্রফেশনাল সার্ভিসের কর্ণধর মানবিক ব্যক্তিত্ব ওবায়দুল্লাহ কয়েছ, মনদিয়াল ট্রাভেলসের ইব্রাহিম হাসান, বাংলা অটো ইস্কুলের হোসেইন সালাম রহমান, ইউরো বাংলা ট্রাভেলসের মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান ইমন, বাংলাদেশ ফার্নিচারের সেলিম রেজা, এনআরবি ফুডসের আওয়াল রহমান, ফ্রেশ ফুডস-এর ফারুক শোয়েব, ফ্রসে আভেক রাব্বানীর কৌশিক রাব্বানী খান, ফ্রেন্স উইথ রাকিব প্রফেশনাল সার্ভিসের রাকিব হোসেন, অ্যাউড পয়েন্ট প্রফেশনাল সার্ভিসের ফয়সাল আহমেদ, আর্টিস্ট আনট-এর শাহদাত হোসেইনকে পরিচয় করিয়ে দেন বিসিএফ-এর প্রেসিডেন্ট এমডি নূর। তাদেরকে বিসিএফ এর ব্যাজ পরিয়ে সংবর্ধনা দেয়া হয়।
এ সময় স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা এ ধরনের আয়োজনের জন্য বিসিএফকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘প্রবাসী বাংলাদেশী শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ও ফ্রান্সে বেড়ে ওঠা আমাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা এদেশে পড়াশোনা করে ভালো ফলাফল করছে। ফ্রান্সে মূলধারায় নিজেদের জায়গা করে নিচ্ছে। তাদেরকে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দেয়ার তাগিদ থেকে বিসিএফ-এর এ আয়োজনে সহযোগী হওয়ার কথা জানান তারা।
তারা বলেন, ‘ফ্রান্সে বাংলাদেশী কমিউনিটির কলেবর বৃদ্ধি হওয়ার সাথে সাথে বেড়ে চলেছে ঘৃণ্য রাজনীতি, হানাহানি, দলবাজি, গ্রুপিংয়ের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড। যা আমাদের পীড়া দেয় এবং প্রবাসে বাংলাদেশীদের সম্মান ক্ষুন্ন করে। এগুলো থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা।
সমাজ সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য অন্যতম শ্রেষ্ট সংগঠনের স্বীকৃতি পাওয়া ‘অ্যাসাইলাম অ্যান্ড ইমিগ্রান্ট সলিউশন সংস্থার (AISA) কর্ণধার উবায়দুল্লাহ কয়েছ বিসিএফকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এ ধরনের স্বীকৃতি আমাদের আরো ভালো কাজের অনুপ্রেরণা যোগায়।’
তিনি বলেন, ‘আইছা কমিউনিটির বিভিন্ন দাবি দাওয়া আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রাম, খেলাধুলা, মসজিদ-মাদরাসা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে সকল কর্মকাণ্ডে নিরলসভাবে অংশগ্রহণ ও পৃষ্টপোষকতা করে আসছে। আইছা’র পরিচালক হিসেবে আমি কোনো ধরনের সংকোচ ছাড়াই দল-মতের উর্ধ্বে উঠে কমিউনিটির সকল কর্মসূচি ও কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখি।
অতিথির বক্তব্যে প্যারিসে কর্মরত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা ওয়ালিদ বিন কাশেম বলেন, ‘এ দেশের সরকারি-বেসরকারি কর্মক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আর এই প্রজন্মের সন্তানেরা এ দেশে পড়াশোনা করে, ভালো ফলাফল করে আরো অধিক মাত্রায় এবং সম্মানজনক কাজ করে এ দেশকে যেমন গড়ে তুলবে তেমনি বাংলাদেশের মুখও উজ্জ্বল করবেন। বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে এ ধরনের আয়োজন না করায় এ সময় দর্শকদের পক্ষ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে তীর্যক মন্তব্য করতে শোনা যায়।
অনুষ্ঠানে মোটিভেশনাল স্পিচ দেন আওয়াল রহমান এবং ফাতেমা তুজ জোহরা।
অন্যান্যরা বলেন, ‘ফ্রান্সের শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য সেক্টরে বাংলাদেশী সন্তানেরা সাফল্যের সাথে ফ্রান্সসহ অন্যান্য অভিবাসী সন্তানদের সাথে প্রতিযোগিতা করে পেশাগত সাফল্য লাভ করছে। এদেশে এখন চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইনজীবী কিংবা বিশ্বখ্যাত বহুজাতিক কোম্পানীতে বাংলাদেশীদের মুখর পদচারনা। আর এদের সাফল্যের সংবাদ পাওয়া যায় বিসিএফ-এর নিয়মিত বাৎসরিক আয়োজন ‘বিসিএফ রিইউনিয়ন অ্যান্ড স্টুডেন্টস অ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠানে।
এছাড়া সংবর্ধনা দেয়া হয় কর্মসংস্থান সহায়তায় বিসিএফ অ্যাক্সিকিউটিভ মেম্বার ইমরান হোসেন, ফরাসী ভাষা শিক্ষায় ফ্রেন্স উইথ রিফাত, ফ্রান্সের মাটিতে স্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপনে সফল হওয়ায় বাংলাদেশী কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশন তুলুজ, অ্যাসোসিয়েশন সেকানো বাংলাদেশ (এএসবি), বাংলাদেশী সংস্কৃতি চর্চা ও প্রসারের জন্য এমদাদুল হক স্বপন ও নজরুল ইসলাম চৌধুরী, প্রফেশনাল সার্ভিসের ক্ষেত্রে ‘ওফিওরা’ এবং ‘আইছা’, সামাজিক ও রাষ্ট্রের অধিকার আদায়ে ভূমিকা রাখায় নয়ন এনকে।
অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পর্বে গান পরিবেশন করেন সোমা দাস, মৌসুমী চক্রবর্তী, ইমতিয়াজ রনি। বাঁশী বাজিয়ে শোনান নুরুল ইসলাম এবং বিশ্বাস বিনয়। আর নাচ পরিবেশন করেন আদিফা রহমান।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি