বিয়ের নামে মালয়েশিয়া প্রবাসীকে ধর্মান্তরিত করে প্রতারণার অভিযোগ
- আশরাফুল মামুন, মালয়েশিয়া
- ২৭ আগস্ট ২০২২, ১৫:৪০
বিয়ের প্রলোভনে সনাতন ধর্মাবলম্বী এক যুবককে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে পরে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে তার সাথে প্রতারণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মালয়েশিয়া প্রবাসী সাগর ইসলাম।
খুলনা বাগেরহাটের মালয়েশিয়া প্রবাসী যুবক লিটন মজুমদার। মুসলিম হওয়ার পর আদালতে এফিডেফিট করে লিটন মজুমদার থেকে সাগর ইসলাম নাম রাখা হয়। ফেসবুকে পরিচয় সূত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার গোপিনাথপুর গ্রামে সোনিয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন সাগর ইসলাম। বিয়ের আগে সাগর ইসলাম হিন্দু ধর্মালম্বী ছিলেন। সোনিয়ার দেয়া শর্তে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন সাগর।
সোনিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সাগরকে বিয়ে করার পর সোনিয়া কিছু না জানিয়ে পাশের গ্রামের অন্য একটি ছেলেকে বিয়ে করে ফেলে। সোনিয়া বর্তমানে স্বামীর বাড়িতে থাকায় তার পরিবার ও প্রতিবেশীর সাথে যোগাযোগ করে জানা যায় সোনিয়া সাগরের সাথে যোগাযোগ ছিল এটা সত্য, কিন্তু বিয়ের বিষয়টি তারা অস্বীকার করছেন।
বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করার পর লিটন মজুমদার ওরফে সাগর ইসলাম নিজের হিন্দু সমাজ, অর্থ ও স্ত্রীকে হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বিচারের আশায়।
সাগর ইসলাম বলেন, তার কাছে বিয়ের কাবিননামা, আদালতের এফিডেভিটসহ সমস্ত অর্জিনাল ডকুমেন্টস থাকার পরেও তিনি সঠিক বিচার পাচ্ছেন না। তাছাড়া আগের ধর্মের সমাজে তার ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুবিচার দাবি করেছেন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, সাড়ে ৩ বছর আগে ফেসবুকে সাগর ইসলাম ও সোনিয়ার সাথে পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নিয়মিত যোগাযোগের পাশাপাশি বিশ্বাস করে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেন সোনিয়াকে সাগর ইসলাম। সোনিয়া মুসলিম এবং সাগর হিন্দু ধর্মালম্বী হওয়ায় সোনিয়া তাকে বিয়ের জন্য আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বলেন। গত জুন মাসের ২৩ তারিখে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে রাজশাহী জজ কোর্টে এফিডেভিড করে হিন্দু নাম লিটন মজুমদার পরিবর্তন করে মুসলমান হয়ে সাগর
ইসলাম নাম রেখে সোনিয়াকে কোর্টে বিয়ে করেন। সোনিয়া স্ট্যাম্পে লিখিত একটি অঙ্গীকার নামা দেন যে সাগর ইসলামকে যদি কখনো ছেড়ে যান তাহলে তাহলে তাকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবেন।
চলতি আগস্ট মাসের ১২ তারিখে সোনিয়ার সাথে পাশের গ্রাম জয়নগর বিষ্ণুরিয়ায় আরিফুল ইসলাম নামে এক মালয়েশিয়া প্রবাসীর সাথে বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের দিন সোনিয়ার পরিবার ও এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ পুলিশকে ফোন দিয়ে বিয়ে বন্ধ করার দাবি জানিয়েও কোনো ফল হয়নি।
সোনিয়ার প্রতিবেশী ওই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মো: মান্নান জাহাঙ্গীরের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সোনিয়ার যেদিন বিয়ে হয়ে যায় সেদিন সাগর ইসলাম বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন, তখন আমি সোনিয়া ও তার পরিবারকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন সাগর ও সোনিয়ার সাথে যোগাযোগ ছিল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতেন, কিন্তু সাগরের সাথে সোনিয়ার বিয়ে ও অর্থ লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। মান্নান জাহাঙ্গীর আরো বলেন, এরপরেও আমি সাগরকে বলেছি, মালয়েশিয়া থেকে সরাসরি দেশে অথবা তার কোনো প্রতিনিধি তথ্য প্রমাণ নিয়ে আমার কাছে আসার জন্য। মেয়েটির যেহেতু অন্যখানে বিয়ে হয়ে গেছে তার সংসার ভাঙতে পারব না। যদি সোনিয়া টাকা পয়সা নিয়ে থাকেন এবং প্রমাণপত্র থাকে তাহলে সেটা আদায় করে দেয়ার ব্যবস্থা করব।
সোনিয়া আক্তার স্বামীর বাড়িতে থাকায় তার সাথে এবং তার বাবার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে সাগর ইসলাম প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেছেন তাদের কাবিননামা, আদালতের এফিডেভিড, অঙ্গীকারনামা আসল। মূল কপি বাংলাদেশে রয়েছে, আর ফটোকপি তার সাথে মালয়েশিয়ায় রয়েছে। তবে এসব ডকুমেন্টসের তথ্যাদি মালয়েশিয়া থেকে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও সাগর ইসলাম বাংলাদেশে না গিয়ে মালয়েশিয়ায় থেকে কিভাবে কাবিননামা ও আদালতের এফিডেভিড সম্পন্ন করেছেন এ বিষয়টি জানতে চাইলে সাগর বলেন, ই-মেইল ও কুড়িয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদান করে দলিলে স্বাক্ষর করা হয়েছে।
কসবা গোপিনাথপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি মৌখিকভাবে আমাকে জানিয়েছেন সাগর ইসলাম নামে এক ব্যক্তি, তবে আমাদের কাছে তথ্য প্রমাণসহ অভিযোগ করলে মীমাংসা করার চেষ্টা করি কিন্তু অভিযোগ যেহেতু বড় তাই সাগর ইসলাম আইনের দ্বারস্থ হলেই ভালো হবে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ দিলে কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কোনো ব্যবস্থা নেবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।