২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

মালয়েশিয়ায় ৩ শতাধিক প্রবাসীর লাশ দাফন করে জহিরের অনন্য মানবতা

ইনসেটে জহিরুল ইসলাম জহির। - ছবি : সংগৃহীত

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে প্রবাসীদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত একটি নাম হলো ‘মানবিক জহির’ (৪২)। দিন-রাত এক করে অসহায় প্রবাসীদের পাশে দাঁড়িয়ে এই খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি। এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে বিনামূল্যে প্রায় ৩ শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশীর লাশ দেশে ফেরত পাঠিয়ে অথবা মালয়েশিয়ায় দাফনে সহযোগিতা করে মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।

করোনা মহামারীর সময়ে প্রবাসী ও অসহায় মানুষকে খাবার ও চিকিৎসা বিষয়ে সেবা দিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন জহির। মহামারীর ভয়ে কেউ যখন ঘর থেকে বের হতো না, তখন প্রবাসীদের অসুস্থতার কথা শুনলেই ছুটে যেতেন তিনি। ঝুঁকি নিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতদের লাশ দাফন করেছেন একাই। বর্তমানে কুয়ালালামপুরসহ একাধিক হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবীরা তাকে ‘মানবিক জহির’ নামে চেনেন।

মালয়েশিয়ায় কেউ মারা গেলে তার লাশ দেশে স্বজনের কাছে পাঠাতে নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। প্রবাসীদের অনেকেই জানে না কোথায় গিয়ে কিভাবে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। অনেক সময় বাংলাদেশী কেউ মারা গেলে তার স্বজনদের পরিচয় পাওয়া যায় না, এমনকি লাশ দেশে পাঠানোর মতো প্রয়োজনীয় অর্থও থাকে না কারো কারো কাছে। এছাড়া প্রবাসীর লাশ দেশে পাঠাতে দূতাবাসের অনুমতি এবং যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে নিজের কাজ ফেলে বারবার দূতাবাসে যেতে হয়। যা একজন সাধারণ প্রবাসীর পক্ষে সম্ভব হয় না। এসব জটিলতায় আশার আলো হয়ে উপস্থিত হন জহির। কখনো চাঁদা উঠিয়ে আবার কখনো কারো কাছ থেকে মানবিক সহযোগিতা নিয়ে প্রবাসীদের পাশে থাকেন তিনি।

শরীয়তপুরের সখিপুর থানার চরভাগা ঢালী কান্দির মৃত হারুন অর রশিদ বেপারীর ছেলে মো: জহিরুল ইসলাম জহির ২০০৫ সালে ষ্টুডেন্ট ভিসায় মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। লেখা-পড়ার পাশাপাশি ব্যবসাতেও জড়িয়ে পড়েন তিনি। ব্যস্ততার মধ্যেও ২০০৭ সাল থেকে অসহায় প্রবাসীদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে শুরু করেন জহির।

জহিরুল ইসলাম জহির নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘২০০৫ সালে যখন মালয়েশিয়া আসি তখন থেকেই প্রবাসে সাধারণ লোকজনের অসহায়ত্ব দেখে তাদের পাশে দাঁড়াতাম। ২০০৭ সালের কলিং ভিসায় হাজার হাজার বাংলাদেশি কর্মী অনাহারে, অর্ধাহারে রাস্তায় শুয়ে থাকতো, তা দেখে আমার কষ্ট হতো। তখন থেকে আরো বেশি মানবসেবায় এগিয়ে যাই। অসহায় মানুষের উপকারে আসতে পারলে প্রশান্তি লাগে।’

জহির বলেন, ‘মানবিক কাজে নেমে বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় থাকেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের এমন কোনো জেলা নেই যার একজন লোকের পাশে আমি দাঁড়াইনি। শত শত পরিবারের লোকজন বাংলাদেশ থেকে ফোন করে এক নজর আমাকে দেখতে চায়, তখন তৃপ্তি পাই, এটাই আমার জীবনের স্বার্থকতা। যত দিন আল্লাহ বাচিঁয়ে রাখেন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেবা করে যেতে চাই।’


আরো সংবাদ



premium cement