মালয়েশিয়ায় রমজানে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির পরিবর্তে ডিসকাউন্টের প্রতিযোগিতা
- আশরাফুল মামুন, মালয়েশিয়া থেকে
- ০৪ এপ্রিল ২০২২, ১৬:২৭
শুরু হয়েছে মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস রমজান। সাধারণত মালয়েশিয়ায় রোজা ও ঈদগুলো সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে উদযাপন করা হয়। আর বাংলাদেশে হয় এক দিন পরে। তবে এবার এর ব্যতিক্রম দেখা গেছে, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ায় একসাথে শুরু হয়েছে রোজা।
রমজান মাস এলেই বাংলাদেশে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই বাস্তব মালয়েশিয়ায় পণ্যমূল্য না বাড়িয়ে উল্টো ডিসকাউন্ট দিয়ে দাম কমানোর প্রতিযোগিতায় থাকেন ব্যবসায়ীরা।
মালয়েশিয়ায় খোলাবাজারে দ্রব্যসামগ্রী বিক্রি হয় না। সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা চেইন সুপারশপ, হাইপার মার্কেটগুলোতে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি হয়। সরেজমিনে সুপারশপ ও হাইপার মার্কেটগুলোতে দেখা গেছে, রমজান উপলক্ষে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীতে ডিসকাউন্ট স্টিকার লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। এসব সুপারশপ ও হাইপার মার্কেটগুলোর মধ্যে রয়েছে, মাইডিন, জায়ান্ট, এনএসকে, ইকোনসেভ, সেগী ফ্রেশ, জায়াগ্রোসারী ইত্যাদি।
মালয়েশিয়ায় এবারই প্রথম নয়, প্রতিবারই দেখা যায় রমজান মাস আসার পূর্ব মুহূর্তে কিংবা পর মুহূর্তে পণ্যমূল্যের কোনো পরিবর্তন হয় না।
দেশটিতে পণ্যসামগ্রী, খাদ্য সামগ্রী, খাবার হোটেল, মুদি দোকান, চেইন সুপারশপ ও হাইপার মার্কেটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুণগত মান খুব কঠোরহাতে নিয়ন্ত্রণ করে দেওয়ান বান্ডারায়া কুয়ালালামপুর (ডিবিকেএল) নামে সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নিয়মের কোনো ব্যত্যয় দেখলে গ্রেফতারসহ জেল-জরিমানা করেন তারা। এই বাহিনীর ভয়ে পণ্যের দাম বৃদ্ধি তো দূরের কথা মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য রাখাসহ কোনো অনিয়ম করতে শতবার চিন্তা করেন দোকানদাররা। ডিবিকেএল সব সময় বাজারে ইউনিফর্মের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি করায় তাদেরকে ফাঁকি দেয়া দুঃসাধ্য।
সরেজমিনে কুয়ালালামপুর কোতারায়া বাংলাদেশী মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কিছুদিন আগে বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে যে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছিল মালয়েশিয়ায় সেরকম কিছু হয়নি। বাংলাদেশ মালয়েশিয়া থেকেই সিংহভাগ পামওয়েল আমদানি করে। পামওয়েল তেলের আগে যে দাম ছিল এখন সেই দামেই বাংলাদেশে রফতানি করা হচ্ছে।
মালয়েশিয়া দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উন্নত দেশ। ইউরোপের ঘরানার মতো আধুনিক বিলাসময় জীবনযাপন করলেও সবাই রোজা পালন করেন। শরিয়াহ আইন অনুযায়ী অসুস্থ ও শিশু ব্যতীত সামর্থ্যবান নারী-পুরুষ রোজা রাখা বাধ্যতামূলক।
রোজা না রেখে দিনের বেলায় আহার করা অবস্থায় ধরা পড়লে দেশটির শরিয়াহ আদালতে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হয়। মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীরাও কঠোর পরিশ্রমের কাজের মধ্যেও সাধারণত রোজা ভঙ করেন না।