২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

মেলাভাঙার বিরহ নিয়ে ৩৫তম ফোবানার সমাপ্তি

মেলাভাঙার বিরহ নিয়ে ৩৫তম ফোবানার সমাপ্তি - ছবি : নয়া দিগন্ত

যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে পর্দা নেমেছে ৩৫তম ফোবানা কনভেনশনের। তিন দিনের এই আয়োজনের শেষ দিন ছিলো রোববার। উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের এই সংগঠনের পুরো নাম ‘ফেডারেশন অব বাংলাদেশী অ্যাসোসিয়েশন ইন নর্থ আমেরিকা’। পরের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ইলিনোইস অঙ্গরাজ্যের শিকাগোতে।

একেক বছর এর কনভেনশন হয় একেক অঙ্গরাজ্যে। এ বছর লাল-সবুজের আয়োজনটি বসেছিলো যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী লাগোয়া অঙ্গরাজ্য মেরিল্যান্ডের গেইলর্ড হোটেলে। এটি পটোম্যাক নদীর তীরে। মেরিল্যান্ড এবং ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের সীমানা টেনেছে এই নদী। পটোম্যাকের ওপর ‘উইড্রো উইলসন ব্রিজ’এলাকা, নানা দেশ থেকে আসা পর্যটকের কোলাহলে মুখর থাকে।

গত তিনদিন পটোম্যাক মুখর ছিলো বাংলাদেশিদের নিয়ে। উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে আসা লাল ও সবুজের মিশেলে পাঞ্জাবি ও শাড়ি দৃষ্টি কেড়েছে স্থানীয়দেরও। গেইলর্ডে আসা অন্যদেশের লোকেরাও মিশে গিয়েছিলেন বাংলা সংস্কৃতির সাথে।

কনভেনশনে অনেকেই এসেছিলেন পরিবারসহ। যুক্তরাষ্ট্রে যারা কাজ করেন, তাদের জন্য ছুটি যোগাড় করা কঠিন। তবুও যারা তিনদিনের ছুটি জুগিয়েছিলেন তাদের মধ্যে এখন মেলাভাঙার বিরহ।

রোববার ফোবানা সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণার পর এমন চিত্রই ছিলো গেইলর্ড হোটেলের। যেন উৎসবের বেলুন চিমসে গিয়ে নেমে আসছে আকাশ থেকে।

৩৫তম ফোবানা সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তির পর সুশৃঙ্খলভাবে কর্মক্ষেত্রে ফিরতে শুরু করেছেন বাংলাদেশিরা। শৃঙ্খলা এবং পরিপাটির দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র অনেক এগিয়ে। এখানে থাকা মানুষদের শ্রম ও সততার কারণেই বোধহয় সবকিছু এতোটা দৃষ্টিনন্দন।

ফোবানা কাভার করতে এসে পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষের ভীড়ে অনেক বাঙালির সঙ্গে কথা হয়েছে পটোমেক নদীর দুই প্রান্ত মেরিল্যান্ড ও ভার্জিনিয়াতে। সাদা-কালো রঙ এখানকার কর্মক্ষেত্রে খুব বেশি বাধা হতে পারেনি।

এই কদিনে যতটুকু দেখা হয়েছে কারো মধ্যে রঙ বা বর্ণ নিয়ে কোনো বিদ্বেষ চোখে পরেনি। এর আগে কান উৎসব কাভার করতে গিয়ে ফ্র্যান্সের প্যারিসে দেখা গিয়েছিলো ভিন্ন চিত্র। ওখানে সাদাদের তুলনায় কালোরা বিশৃঙ্খল। সম্ভবত এর পেছনে বঞ্চনার ইতিহাস থাকতে পারে। তবে মেরিল্যান্ডে এমন কিছু দেখা যায়নি। সাদা ও কালোরা যার যার মতো কাজ করছেন। কোনো বিষয় জানতে চাইলে আগ্রহ নিয়ে শুনার চেষ্টা করছেন, পারলে সহযোগিতাও করছেন। যা আমেরিকানদের ব্যাপারে দূর থেকে ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত।

শৃঙ্খলা ও ভদ্রোচিত আচরণ ছিলো বাংলাদেশিদেরও। ২৮ নভেম্বর আয়োজনের শেষ দিন উড্রো উইলসন হলে ফোবানার বার্ষিক সাধারণ সভা উপলক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর শতাধিক সংগঠনের নেতারা হাজির হয়েছিলেন।

চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে ৩৫তম আসরের হোস্ট কমিটির কনভেনার জিআই রাসেল ও মেম্বার সেক্রেটারি শিবির আহমেদের সঞ্চালনায় ‘ধন ধান্যে পুস্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’গানটি দিয়ে বাংলাদেশকে স্মরণ করার মাধ্যমে শুরু হয় এজিএম।

এখানে সদস্য ও নেতৃবৃন্দরা সংগঠনকে সামনে এগিয়ে নেয়ার পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি নিজেদের ভেতরে জমে থাকা ক্ষোভ প্রকাশ এবং পরবর্তী নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য ভোট দেন।

নানা অভিযোগ অনুযোগের মধ্যে প্রায় সবার বক্তব্যের মূল বিষয় ছিল ফোবানাকে আরো শক্তিশালী করে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। কনভেনর জিআই রাসেল ও মেম্বার সেক্রেটারি শিব্বির আহমেদ অভিযোগ করেছিলেন নির্বাহী কমিটি থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা না পাওয়ার বিষয়ে।

লস অ্যাঞ্জেলস থেকে আসা একজন অভিযোগ করে বলেছিলেন, ২০১৪ সাল থেকে তিনি ফোবানার নিয়ম মেনে সব কাজ পরিচালনা করলেও ২০১৮ সালে এসে তার স্থানীয় ‘বৈশাখী’ সংগঠনটির রেজিস্ট্রেশন নিয়ে ঝামেলা হয়। এর ফলে তিনি এখন ফোবানাতে নতুন সদস্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। প্রায় একই ধরণের অভিযোগ ছিল টেক্সাস থেকে আসা আরেকজনের। নতুন সদস্যরা ভোটাধিকার পান তিন বছর পর। বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নিয়ে এজিএমে এটা সুরাহা করা হয়। তাদেরকে আগামী বছর থেকেই ভোটাধিকার দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরকম আরো নানা অভিযোগ এজিএমে গুরুত্বের সাথে নিয়ে সামনের দিনগুলোতে একসাথে পথ চলার শপথ গ্রহণ করা হয়।

এরপর ফোবানার বিগত বছরের সাফল্য তুলে ধরেন চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে সারা বিশ্ব যখন মহামারিতে আক্রান্ত তখন ফোবানা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় লোকজনকে খাদ্য ও আর্থিক সহযোগিতা করেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে শরিক হয়ছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একশবছর পূর্তির অনুষ্ঠান করেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ বছর পালন করেছে। জগণœাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত হয়ছে।’

এরপর সংগঠনের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোটারদের কিছু পরামর্শ দেন তিনি। স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যারা সংগঠনের নিয়ম মানতে চান না তারা যেন নিজেদের ইচ্ছায় বের হয়ে যান।

এ প্রসঙ্গে জাকারিয়া চৌধুরী বলেন, ‘যারা সংগঠন চালাতে পারে তাদেরকেই আপনারা দয়া করে নির্বাচন করবেন। এটা আমার অনুরোধ এবং পবিত্র কোরান শরিফে একটি কথা বলা আছে যে, খারাপ লোকদের বর্জন করো। যারা ভালো তাদেরকে সবার নেতৃত্ব দানের সুযোগ দান করো। আমরা এখানে সবাই মুসলমান একজন ছাড়া। তবে অন্য ধর্মেও ভালো লোকদের নেতৃত্বে নিয়ে আসার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। আপনাদের সবার কাছে অনুরোধ এই সংগঠন যেন কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়, কারো পকেট সংগঠনের রূপান্তরিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।’

তিনি বলেন, ‘সংগঠনের প্রটোকল যারা মানেন না বিশেষ করে চেয়ারম্যানকে রেসপেক্ট করেন না, সেক্রেটারিকে রেসপেক্ট দেন না। আমি মনে করি এসব লোকদেরকে স্ব-ইচ্ছায় ফোবানা থেকে চলে যাওয়া উচিত। আর যদি তারা না যান তবে আজকে এজিএমের পর ভোটের মাধ্যমে যেন তাদের আমরা বিতারিত করি। কারণ এটা একটা মাদার সংগঠন। সংগঠনের সংগঠন। আমাদের আচার-আচরণ অন্যান্য সংগঠন ফলো করবে।’

‘আমরা যদি এজিএমে এসে অসাংগঠনিক আচরণ করি তাহলে ফোবানার অন্তর্ভুক্ত সংগঠনগুলো আমাদের থেকে কী শিখবে? আর আপনাদের কাছে সবিনয় অনুরোধ এই বিষয়টি আপনারা দেখবেন। আর বিগত এক বছরের সংগঠন পরিচালনায় কতটুকু সফলতা হয়েছে ব্যর্থতা হয়েছে সেটা আপনারা বিচার করবেন। ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। মানুষ ক্ষমাশীল। আমি কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছি না। ভোটের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি না। ক্ষমা চাচ্ছি আন্তরিকভাবে যে সংগঠন পরিচালনার সময় একটু কঠিন হতে হয়। যেমন আমি আজ আমাদের সবচেয়ে জুনিয়র মেম্বার, আমাদের ছোট ভাই তাকে ধমক দিয়ে বসিয়ে দিয়েছি। এটা সিনিয়র কারো সাথে করা যেতো না। তবে আমার এমন আচরণ করা ঠিক হয়নি।’

ফোবানা কনভেনশন আয়োজনের পেছনে কাজ করা গোটা দলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন জাকারিয়া চৌধুরী।

এর পর নতুন নির্বাহী কমিটি গঠনের জন্য ভোট হয়। এতে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় রেহেন রেজা চেয়ারম্যান এবং মেম্বার সেক্রেটারি পদে নির্বাচনে বিজয়ী হন মাসুদ রব চৌধুরী। হোস্ট নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাস। ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন মোহাম্মদ দিলু মাওলা। জয়েন এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি নাহিদুল কামাল সোহেল। ট্রেজেরার ড. মুহাম্মদ আলী মানিক।

প্রত্যেক কমিটিতে আউটস্ট্যান্টিং মেম্বার হিসেবে থাকেন ৯ জন। এরমধ্যে বিদায়ী চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরী ও কনভেনার জিআই রাসেল সাংবিধানিকভাবে এই পদ পেয়ে যান। তাই ভোটে নির্বাচিত হন ৭ জন। তারা হলেন নরুল আমীন, আতিকুর রহমান, মোহাম্মদ এসএম রহমান জহির, ড. জয়নাল আবেদীন, শাহনেওয়াজ হালিম, রেজানুল ইসলাম বাবলা এবং বাবুল আরেফিন। নির্বাহি কমিটির সভায় আগামী ফোবানা সম্মেলন ইলনয় অঙ্গরাজ্যের শিকাগো শহরে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে ফোবানা সম্মেলনের শেষদিনেও ছিল বাংলাদেশী ও প্রবাসীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা। ওয়ার্দা রিহাব ও সাদিয়া ইসলাম মৌয়ের নৃত্য পরিবেশনা মন কেড়েছে দর্শকদের। তিনদিনের উৎসবে সাবিনা ইয়াসমীন, রিজিয়া পারভীন, রবি চৌধুরী ও তাহসানের গানে মেতেছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সংগঠনগুলোর সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও ছিল দৃষ্টিনন্দন। গান গেয়েছেন শশী, শাহ মাহবুব, বকুল, শামীম সিদ্দিকী, রোকসানা মির্জাসহ অনেকেই।


আরো সংবাদ



premium cement
হারেৎসের ওপর ইসরাইল সরকারের নিষেধাজ্ঞা, সকল সম্পর্ক ছিন্ন নিজ্জর-হত্যায় অভিযুক্ত ৪ ভারতীয়ের বিচার শুরু কানাডায় ফলোঅন এড়ালেও ভালো নেই বাংলাদেশ আইপিএল নিলামের প্রথম দিনে ব্যয় ৪৬৭.৯৫ কোটি রুপি : কে কোন দলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মাত্রা বাড়াতে ট্রাম্প 'ভীষণ চিন্তিত' নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা, অন্যদের কথা ব্যক্তিগত : প্রেস উইং সালাহর জোড়া গোলে জিতল লিভারপুল ১০ সাংবাদিকসহ ১১ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ৬ দফা মেনে নেয়ার আহবান হাসিনা-কন্যা পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক লেনদেন স্থগিত বুটেক্স-পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

সকল